কলকাতা: বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে আবার চালু হতে চলেছে ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প’ তথা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প (100 Days Work Scheme)। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ অগাস্ট থেকে রাজ্যে এই প্রকল্প ফের চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের এই স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার।
এই প্রকল্পের পুনরারম্ভ নিয়ে মুখ খোলেনি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং সাজদা আহমেদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটা বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান এই বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট দফতর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
বিগত তিন বছর ধরে এই প্রকল্প কার্যত বন্ধ পশ্চিমবঙ্গে। কেন্দ্র অভিযোগ তোলে যে, ১০০ দিনের কাজের অর্থ নিয়ে রাজ্যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত উপভোক্তারা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হননি বলেই দাবি কেন্দ্রের। সেই কারণে অর্থছাড় বন্ধ রেখে এই প্রকল্প কার্যত ঝুলিয়ে রাখে কেন্দ্রীয় সরকার।
কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত একতরফা এবং এতে রাজ্যের গরিব গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায্য অধিকার হরণ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতে, দেশের অন্যান্য রাজ্যে যে নিয়ম কার্যকর, তা বাংলার জন্য আলাদা ভাবে প্রয়োগ করাটা অসাংবিধানিক।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবাজ্ঞনমের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে নিজস্ব নিয়ন্ত্রণবিধি মেনে ১০০ দিনের কাজ পুনরায় শুরু করা যাবে এবং তার জন্য কেন্দ্রকে সবুজ সংকেত দিতেই হবে।
অন্যদিকে, ভুয়ো জব কার্ড বাতিলের প্রসঙ্গেও উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় দ্বিচারিতার অভিযোগ। ২০২৪-২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ নয়, বরং উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাত অনেক এগিয়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গেই প্রকল্প বন্ধ থাকায় প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নিয়েও।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ১ অগাস্ট থেকে ১০০ দিনের কাজ চালু হওয়া নিয়ে রাজ্যবাসীর মধ্যে আশার আলো দেখা দিলেও কেন্দ্রের তরফ থেকে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় অনিশ্চয়তা কাটেনি।
আদালতের নির্দেশ স্পষ্ট—রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়কেই নিশ্চিত করতে হবে যে, এই প্রকল্পের মধ্যে আর কোনও দুর্নীতি না ঘটে। প্রকৃত উপভোক্তারাই যাতে প্রকল্পের সুফল পান, তা নিশ্চিত করাই এখন প্রধান দায়িত্ব প্রশাসনের।
সামগ্রিকভাবে বিচার করলে, ১০০ দিনের কাজ শুধুই একটি প্রকল্প নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতির রক্ষাকবচ। রাজ্য-কেন্দ্র টানাপোড়েনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই প্রকল্পকে কার্যকর করে তবেই পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।