মুখ্যমন্ত্রীর শিলান্যাসের ১০ মাস পর পোদরা (Podra) লঞ্চ ঘাট (launch terminal) তৈরির কাজ শুরু। হাওড়ার সাঁকরাইলের পোদরা ঘাট, যা পূর্বে স্থানীয় জলপথ পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে নৌকা চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন, অবশেষে নতুন জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। পোদরা ঘাটের গুরুত্ব ছিল এতটাই যে, এখান থেকে প্রতিদিন আট-ন’ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। তবে কিছু অসাধু ভুটভুটি মালিকের জন্য এই ঘাটের সেবা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। তারা অবৈধভাবে ভুটভুটি চালু করেছিল এবং সরকারী লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সমস্যার সমাধান হিসেবে, অবশেষে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ এবং প্রশাসনিক উদ্যোগে কাজ শুরু হয়েছে।
এলাকার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে পোদরা ঘাটে ভুটভুটির অবৈধ চলাচল বন্ধ করার জন্য প্রশাসন তৎকালীন জেলা শাসক দ্বারা কঠোর পদক্ষেপ নেয়। তারপর ২০০৯ সালে পোদরা ঘাটে নতুন জেটি নির্মাণের জন্য একটি সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন বাধার মুখে, বিশেষ করে কিছু দুষ্কৃতী চক্রের বাধার কারণে, সেই কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৩ সালে, একটি ভুতভুটির দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়, যা পোদরা ঘাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আরো উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এরপর, ২০১৩ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এই ঘাটে ফেরি বা লঞ্চ চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এখন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের পর এই ঘাটে ফেরি পরিষেবা চালু করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। নতুন জেটি নির্মাণের জন্য ৪১ মিটার দীর্ঘ ও ২০ মিটার চওড়া আধুনিক জেটি তৈরি করা হবে, যেখানে যাত্রীদের জন্য প্রতীক্ষালয়, টিকিট কাউন্টার এবং স্মার্ট গেট থাকবে। ইতিমধ্যে জেটি তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং আধিকারিকরা দ্রুত এই কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন যে, পোদরা ঘাটকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী চক্র তৈরি হয়েছিল যারা অবৈধভাবে ভুটভুটি চালিয়ে আসছিল। তবে, এই কাজ শুরু হওয়ার ফলে এলাকার মানুষদের মধ্যে বিশেষ করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে খুশির জোয়ার দেখা গেছে, কারণ এই ঘাটের সঙ্গে ব্যবসা চালু হলে, মেটিয়াবুরুজসহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের যাতায়াত সহজ হবে এবং এর মাধ্যমে বাণিজ্যও বৃদ্ধি পাবে।
ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জীব নায়েক জানিয়েছেন, নতুন জেটি নির্মাণের কাজ খুব তাড়াতাড়ি শেষ করা হবে এবং নতুন লঞ্চ পরিষেবা চালু হলে এলাকার পরিবহণ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে, হাওড়া ও মেটিয়াবুরুজের মধ্যে জলপথ পরিবহণকে আরও আধুনিক, নিরাপদ এবং কার্যকরী করে তোলা হবে।