উৎসবের মরশুমে বিপর্যস্ত ট্রেন পরিষেবা, ফের বাতিল ১০টি ট্রেন

খড়্গপুর: পুজোর মরশুমে যাত্রাপথে ভরসা রাখা সাধারণ মানুষের জন্য ফের একবার দুঃসংবাদ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর (Kharagpur) ডিভিশনে চলমান রেল পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের জেরে ফের বাতিল…

খড়্গপুর: পুজোর মরশুমে যাত্রাপথে ভরসা রাখা সাধারণ মানুষের জন্য ফের একবার দুঃসংবাদ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর (Kharagpur) ডিভিশনে চলমান রেল পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের জেরে ফের বাতিল করা হয়েছে একাধিক ট্রেন। বুধবার খড়্গপুর রেল ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে শুধুমাত্র খড়্গপুর-টাটা রুটে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।

Advertisements

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাট স্টেশনের ইয়ার্ড আধুনিকীকরণ এবং নন-ইন্টারলকিং কাজের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ২ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে হাওড়া-খড়্গপুর লাইনে মোট ১১৯টি লোকাল ট্রেন ও ৬টি এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। সেই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হল আরও ১০টি ট্রেন।

বিজ্ঞাপন

খড়্গপুর-টাটা রুটে বাতিল হওয়া ট্রেনগুলি:

চাকুলিয়া-টাটা আপ ও ডাউন (৬৮১২৭, ৬৮১২৮)

খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া আপ ও ডাউন (৬৮০৯৩, ৬৮০৯৪, ৬৮০২৩, ৬৮০২৪)

খড়্গপুর-টাটা প্যাসেঞ্জার আপ ও ডাউন (৫৮০২৭, ৫৮০২৮)

খড়্গপুর-টাটা মেমু আপ ও ডাউন (৬৮০১৫, ৬৮০১৬)

এই ট্রেনগুলি প্রতিদিন হাজার হাজার সাধারণ যাত্রী ব্যবহার করেন। অফিসগামী কর্মচারী থেকে শুরু করে পড়ুয়া — সবার যাতায়াতই বাধাগ্রস্ত হবে এই সিদ্ধান্তে।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর ডিভিশনে বর্তমানে যাত্রী দুর্ভোগের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। বাতিল হওয়া ট্রেনের পাশাপাশি, প্রতিদিনের ট্রেন বিলম্বে যাত্রীদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। অভিযোগ উঠেছে, লোকাল ট্রেন প্রায়শই ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লেট হচ্ছে, ফলে কর্মজীবী ও ছাত্রছাত্রীদের দৈনন্দিন জীবন একেবারে বিপর্যস্ত।

এছাড়াও দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতেও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। হাওড়া থেকে ওডিশা, ঝাড়খণ্ড বা পুরুলিয়া গামী একাধিক ট্রেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে পৌঁছচ্ছে গন্তব্যে। হাওড়া-মেদিনীপুর লাইনেও প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছচ্ছে লোকাল ট্রেন।

খড়্গপুর জংশন থেকে হাওড়া, পুরুলিয়া, টাটা (ঝাড়খণ্ড), ওডিশার বালেশ্বর সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুটে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রেন চলাচল করে। এছাড়াও হাওড়া-পাঁশকুড়া, হাওড়া-মেচেদা, পাঁশকুড়া-দিঘা, মেদিনীপুর-হাওড়া, খড়্গপুর-হাওড়া লোকাল ট্রেনগুলিও যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সব রুটেই বিলম্ব এবং বাতিলের প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়ছে।

খড়্গপুর ডিভিশনের এক জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, “যাত্রীদের অসুবিধা আমাদের জানা আছে। কিন্তু পরিষেবা উন্নত করার জন্য এই কাজগুলি প্রয়োজনীয়। কাজ শেষ হলে রেল পরিষেবা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও দ্রুত হবে।”

তবে যাত্রীদের দাবি, উৎসবের মরশুমে এই ধরনের বড় কাজ করা একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়। এই সময়ে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকে এবং ট্রেন বাতিল বা দেরিতে চলার কারণে পুজোর ছুটি ও যাত্রা পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, উৎসবের আনন্দের মধ্যেই ট্রেন বাতিল ও বিলম্ব দক্ষিণ-পূর্ব রেলের যাত্রীদের জন্য হয়ে উঠেছে চরম অস্বস্তির কারণ। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের স্বার্থে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত এখন যাত্রীদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।