তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, অখিল গিরি বনাম উত্তম বারিক

মিলন পণ্ডা, রামনগর: ২১ জুলাই কলকাতার ধর্মতলার শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে এবার প্রকাশ্যে এল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলের তীব্র গোষ্ঠীকোন্দল (Akhil Giri vs…

তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, অখিল গিরি বনাম উত্তম বারিক

মিলন পণ্ডা, রামনগর: ২১ জুলাই কলকাতার ধর্মতলার শহিদ দিবসকে কেন্দ্র করে এবার প্রকাশ্যে এল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলের তীব্র গোষ্ঠীকোন্দল (Akhil Giri vs Uttam Barik)। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত রামনগরে তৃণমূলের দুই শিবিরের ঠাণ্ডা লড়াই এবার রাস্তায় নেমে পড়েছে।

একই দিনে, রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত দুটি পৃথক গোষ্ঠীর সভা ও মিছিল আয়োজন ঘিরে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবি একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একদিকে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও পটাশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক উত্তম বারিক।

   

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে রামনগর বিধানসভার অন্তর্গত দুটি পৃথক গোষ্ঠী নিজেদের মতো করে ২১ জুলাই শহিদ দিবসের প্রস্তুতি সভা ও মিছিল করেছে। এক গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন যুব তৃণমূল নেতা কৌশিক বারিক, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তমাল তরু দাস মহাপাত্র, রাজ্য মহিলা সম্পাদিকা রিজিয়া বিবি প্রমুখ।

এদের অধিকাংশই সভাধিপতি উত্তম বারিকের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাদের মিছিল রামনগরের ১৪ মাইল ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে বাজার পর্যন্ত চলে। বক্তৃতায় তাঁরা ‘ভূমিপুত্র চাই’ স্লোগান তুলে কার্যত স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরিকে আক্রমণ করেন।

অন্যদিকে, একই সময়ে আরেকটি বিশাল বাইক মিছিল বের হয় রামনগর ১ ব্লক তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে, যা শুরু হয় আর.এস.এ ময়দান থেকে ও শেষ হয় দিঘা বাইপাসে। এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন উত্তম দাস, বিশ্বরঞ্জন মিশ্র, জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ, যারা সকলেই বিধায়ক অখিল গিরির ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।

দুই গোষ্ঠীর পৃথক কর্মসূচি ঘিরে এলাকায় রাজনৈতিক শোরগোল শুরু হয়েছে। একদিকে কৌশিক বারিক বলেন, “এটা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি, কোথাও অন্য কিছু হলে আমরা জানি না।” পাল্টা বিশ্বরঞ্জন মিশ্র জানান, “এটা পাল্টা সভা নয়, বরং দলের নির্ধারিত কর্মসূচি।”

Advertisements

তৃণমূলের দ্বন্দ্ব, অখিল গিরি বনাম উত্তম বারিক

তৃণমূলের এই অন্দরকলহকে হাতিয়ার করে বিজেপি কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। রামনগর ৩ মণ্ডলের বিজেপি সভাপতি সত্যেন কুমার পঞ্চাধ্যায়ী বলেন, “একই দিনে দুটি সভাই প্রমাণ করছে তৃণমূলের ভিতরে দ্বন্দ্ব আছে। লোকসভা নির্বাচনে যা শুরু হয়েছে, আগামী বিধানসভা ভোটে রামনগর থেকে তৃণমূল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।”

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অখিল গিরি প্রায় ১২ হাজার ভোটে জয়ী হলেও, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কাঁথি লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী উত্তম বারিক বিজেপির সৌমেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন ৫০ হাজার ভোটে। তদুপরি, অখিল গিরির বিধায়ক থাকাকালীন রামনগরেই বিজেপি প্রায় ৬ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকে – যা তৃণমূলের অন্দরে চাপা ক্ষোভের জন্ম দেয়।

যদিও এই গোষ্ঠীকোন্দল বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি অখিল গিরি বা উত্তম বারিক কেউই। কিন্তু দুটি পৃথক সভা ও মিছিল পরস্পরবিরোধী বার্তা স্পষ্ট করছে যে, তৃণমূলের অন্দরেই চলছে অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের টানাপোড়েন।

রাজনৈতিক মহলের মতে, ২১ জুলাইয়ের আগে রামনগরের এই গোষ্ঠীকোন্দল একদিকে দলীয় ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, অন্যদিকে বিরোধীদের জন্য ময়দানে নামার সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে শুভেন্দু অধিকারীর এলাকায় তৃণমূলের এই ধরণের বিরোধী বার্তা আগামী নির্বাচনকে আরও উত্তপ্ত করতে চলেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।