যাত্রায় সাড়া, ভোটে ব্যর্থতা! রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তভলীন সিং

গত দুই সপ্তাহ ধরে বিহার রাজ্য প্রত্যক্ষ করল এক অভিনব রাজনৈতিক দৃশ্যপট। দেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারগুলির উত্তরসূরিরা একে একে মঞ্চে এসে হাজির হলেন। কেউ বললেন,…

the-paradox-of-rahul-gandhis-yatras-public-enthusiasm-vs-party-decline

গত দুই সপ্তাহ ধরে বিহার রাজ্য প্রত্যক্ষ করল এক অভিনব রাজনৈতিক দৃশ্যপট। দেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারগুলির উত্তরসূরিরা একে একে মঞ্চে এসে হাজির হলেন। কেউ বললেন, এটা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের উত্থান, আবার কারও মতে, এটা ভারতীয় রাজনীতির এক অদ্ভুত গণতান্ত্রিক সামন্ততন্ত্র—যেখানে জনগণের ভোটের রাজত্বে ক্ষমতার লড়াইয়ে নেমে পড়েছে কেবলই বংশানুক্রমিক রাজপুত্ররা।

বিহারের রাস্তায় রাজপুত্রদের মিছিল

   

বিহারের ছোট ছোট শহরের সরু রাস্তা, উন্মুক্ত জিপে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন চার রাজনৈতিক তরুণ নেতা। তাঁরা হলেন:

রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)  → কংগ্রেসের প্রধান মুখ এবং নেহরু-গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি।

তেজস্বী যাদব → RJD-এর তরুণ নেতা এবং লালু প্রসাদ যাদবের পুত্র।

অখিলেশ যাদব → সমাজবাদী পার্টির সভাপতি এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

স্ট্যালিন → তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির পুত্র।

এই চার তরুণ নেতার একসঙ্গে মঞ্চে আসা বিহারের ভোট রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। সরু রাস্তায় তাঁদের গাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়, দু’পাশে সমর্থকদের ভিড়, স্লোগান, এবং উত্তেজনায় ভরপুর জনতা। সম্প্রতি এই যাত্রা প্রসঙ্গে তভলীন সিং জানিয়েছেন, ভারতের বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক রাজপুত্রদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী শক্তিকে মোকাবিলা করা। রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব ও স্ট্যালিন—সবারই জনসমাগম টানার ক্ষমতা আছে, কিন্তু শুধ আকর্ষণীয় স্লোগান  ও পদযাত্রা দিয়ে মোদীর নির্বাচনী মেশিনারিকে হারানো সম্ভব নয়। বিজেপি অত্যন্ত সংগঠিত, শক্তিশালী ও কৌশলী। বিরোধীদের দরকার সংগঠনগত দৃঢ়তা, একক নেতৃত্ব, এবং জনতার আস্থা অর্জন। না হলে বড় বড় ভিড় সত্ত্বেও ফলাফল পরিবর্তন হবে না। আসন্ন নির্বাচনে কেবল স্লোগান নয়, কার্যকর কৌশলই হতে পারে বিরোধীদের জয়ের চাবিকাঠি।

গণতান্ত্রিক সামন্ততন্ত্রের প্রতিফলন

এই রাজনৈতিক মিছিলের আরেকটি দিকও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভারতের গণতন্ত্রে বংশানুক্রমিক রাজনীতি নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বের আসনে বসে আছেন নামী রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরিরা।

কংগ্রেস মানেই নেহরু-গান্ধী পরিবার।

Advertisements

 আরজেডি মানেই লালু যাদবের উত্তরাধিকার।

সমাজবাদী পার্টি মানেই যাদব পরিবার।

ডিএমকে মানেই করুণানিধির বংশধর।

নেতাদের মুখ বদলেছে, কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রে এখনও রয়ে গিয়েছে প্রভাবশালী পরিবারগুলিই। ফলে, ভারতীয় রাজনীতির এই চিত্রটি অনেকের কাছেই গণতান্ত্রিক সামন্ততন্ত্র”-এর এক উদাহরণ।

এই জনসমর্থন কি ভোটে পরিণত হবে?

তাঁর বিরোধীরা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে, রাহুলের যাত্রাগুলি জনতার মনোরঞ্জনের মতো হলেও, কংগ্রেসের সংগঠনগত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্য এনে দিতে পারছে না।

তরুণ নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

এই মিছিল কেবল রাজনৈতিক দৃশ্য নয়, এটি এক ধরনের প্রজন্মান্তরের পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দেয়। তেজস্বী যাদব, অখিলেশ যাদব এবং স্ট্যালিন প্রত্যেকেই নিজেদের রাজ্যে প্রভাবশালী নেতা হলেও, জাতীয় পর্যায়ে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিহারের ভোট রাজনীতির নতুন সমীকরণ*

বিহারের মতো রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল রাজ্যে এই নেতাদের একসঙ্গে আসা বিরোধী শক্তিগুলির ঐক্যের প্রতীক। তবে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ এখনও শক্তিশালী, তাই এই ঐক্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।