শিলং: মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে ৫ বছরের এক শিশুকন্যার মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার (Arrested) করা হয়েছে ১৩ বছরের এক প্রতিবেশী কিশোরকে। ইস্ট খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বিবেক শিয়েম বুধবার এই তথ্য জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিশুটিকে বাড়িতে খেলতে দেখা গিয়েছিল। সকাল ৮টা নাগাদ সে নিখোঁজ হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে রিনজাহ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে পুলিশ, ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি, স্থানীয় বাসিন্দা এবং ডগ স্কোয়াড নিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। টানা বৃষ্টির কারণে অনুসন্ধান ব্যাহত হলেও খোঁজ চালিয়ে যাওয়া হয়।
অবশেষে ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শিশুটির বাবা জানান, বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে একটি নির্মাণস্থলে তার মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এরপরই থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়।
ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই শিলং সহ গোটা মেঘালয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি তোলে। ব্যাপক জনচাপের মুখে পুলিশ একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করে।
তদন্তের তিন দিনের মধ্যে পুলিশ ১৩ বছরের এক প্রতিবেশী কিশোরকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে। পুলিশের দাবি, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ঘটনাটি স্বীকার করেছে।
অভিযুক্ত কিশোর জানিয়েছে, শিশুটিকে নিয়ে সে একটি দেয়াল টপকে নির্মীয়মাণ বাড়িতে যায়। সেখানে কাদা ধোয়ার সময় পিছলে সে জলে পড়ে এবং শিশুটিও তার সঙ্গে টেনে নামানো হয়। জলভর্তি গর্তেই শিশুটি ডুবে যায়। এরপর ভয় পেয়ে সে দেহের উপর পাথর চাপা দেয় এবং তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে মিথ্যে গল্প বানায় যে মুখোশধারী লোকজন একটি কালো স্করপিও গাড়িতে করে মেয়েটিকে অপহরণ করেছে।
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধ ও ডুবে যাওয়ার কারণে। দেহে কোনো প্রকার যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি। শিশুর গয়নাগুলি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। অপরদিকে কিশোরের পায়ে যে আঘাতের দাগ ছিল তা তার দেওয়া বয়ানের সঙ্গে মিলে গেছে।
ঘটনার পর কিশোরকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে হাজির করা হয়। কমিটি নির্দেশ দেয় তাকে পর্যবেক্ষণের জন্য জুভেনাইল হোমে রাখা হবে। চিকিৎসা পরীক্ষা শেষে কিশোরকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে উপস্থাপন করা হয়, সেখান থেকেও তাকে জুভেনাইল হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, SIT-এর হাতে মামলার চার্জশিট জমা দেওয়ার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা রয়েছে। অভিযুক্তের অতীত, মানসিক অবস্থা এবং সম্ভাব্য উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চালানো হবে।
এ ঘটনার পর থেকে গোটা শিলংয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জনতার একটাই দাবি— দ্রুত বিচার এবং শিশুটির জন্য ন্যায়।