ফ্রেন্ডলিতে দারুণ অভিষেক রায়ানের, সুনীল ছেত্রীর ১১ নম্বর জার্সি উইলিয়ামসকে

ryan-williams-makes-india-debut-vs-bhutan-gets-sunil-chhetri-iconic-no-11-jersey

ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নতুন উদ্যমে সামনে এগোচ্ছে। আর সেই অগ্রযাত্রায় নতুন নাম হিসেবে আলোচনায় উঠে এলেন রায়ান উইলিয়ামস (Ryan Williams)। ভুটানের বিরুদ্ধে ভারতের বন্ধ দরজার প্রস্তুতি ম্যাচে তিনি প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামলেন এবং অভিষেকেই নজর কাড়লেন গোল তৈরির ভূমিকা ও আক্রমণাত্মক উপস্থিতির মাধ্যমে। এই ম্যাচটি অফিশিয়ালি সম্প্রচারিত না হলেও দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং ফুটবল মহলে ভেসে ওঠা তথ্য অনুযায়ী উইলিয়ামস দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমে ভারতের শেষ দিকের আক্রমণগুলোতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

Advertisements

সবচেয়ে বড় চমক—রায়ান উইলিয়ামসকে দেওয়া হয়েছে আইকনিক ১১ নম্বর জার্সি, যা দীর্ঘদিন ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী পরতেন। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে ১১ নম্বর কেবল একটি জার্সি নয়, এটি এক ধরনের আবেগ, একটি উত্তরাধিকার। তাই নতুন একজন ফুটবলারকে এই নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

   

দলের কোচিং স্টাফ এবং সিলেকশন কমিটির ধারণা, উইলিয়ামসের টেকনিক্যাল দক্ষতা, পজিশনিং সেন্স এবং বহুমুখী আক্রমণাত্মক ক্ষমতা—সব মিলিয়ে তাঁর মধ্যে ভবিষ্যতের বড় ভূমিকা দেখছেন তাঁরা। ভারতীয় ফুটবলের নতুন আক্রমণভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তাঁকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বন্ধ দরজার এই ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি ছিল আসন্ন আন্তর্জাতিক উইন্ডো এবং পরবর্তী প্রতিযোগিতার আগে স্কোয়াড বিশ্লেষণ, খেলোয়াড়দের ফর্ম মূল্যায়ন এবং নতুন কম্বিনেশন পরীক্ষা করে দেখার একটি সুযোগ। যদিও ম্যাচের স্কোরলাইন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, কিন্তু ফুটবল মহলের মতে—দল ম্যাচটি স্বচ্ছন্দেই জিতেছে এবং দ্বিতীয়ার্ধে উইলিয়ামসের উপস্থিতি ম্যাচের গতিপথকে আরও আক্রমণাত্মক করে তুলেছিল।

উইলিয়ামস মাঠে নামার পরে ভারতের খেলার টেম্পো চোখে পড়ার মতো বেড়ে যায়। তাঁর দ্রুতগতির রান, ডান দিক থেকে ক্রস, এবং বক্সের সামনে থ্রু বলে সৃষ্ট গোলের সুযোগ—সবকিছু মিলিয়ে কোচ নওশাদ মুসার জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্র। যদিও ম্যাচটি বন্ধ দরজার ছিল, কিন্তু দলের অনুশীলন ক্যাম্প এবং ম্যাচ-পরবর্তী অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে উইলিয়ামসের পারফরম্যান্স উচ্চ প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া, দলে নতুন রক্ত যুক্ত হওয়ার ফলে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। সুনীল ছেত্রীর অবসরের পর ভারতীয় ফুটবল দলে ফরোয়ার্ড লাইনে একটি স্বাভাবিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। কে সেই জায়গাটি পূরণ করতে পারেন—তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, রায়ান উইলিয়ামস সেই শূন্যস্থান পূরণের অন্যতম সম্ভাবনাময় নাম।

Advertisements

উইলিয়ামসের গল্পও অনুপ্রেরণার। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ফুটবলার বিদেশে পেশাদার ফুটবলে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এখন দেশের জার্সি পরে নতুন যাত্রা শুরু করেছেন। তিনি স্বয়ং জানিয়েছেন—ভারতের হয়ে খেলা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় আবেগজনিত মুহূর্তগুলোর একটি। তাঁর পরিবার এবং সমর্থকদের কাছেও এই অভিষেক ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, কোচিং স্টাফ তাঁর ফিটনেস, ড্রিবলিং দক্ষতা, স্পেস ক্রিয়েশনের ধরণ এবং দ্রুত ট্রানজিশন ফুটবলে তাঁর ভূমিকা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন। ভবিষ্যতে তিনি ভারতের ট্যাকটিক্যাল সিস্টেমে আরও বড় দায়িত্ব পেতে পারেন।

ম্যাচ-পরবর্তী ড্রেসিং রুমে দলের সিনিয়ররা তাঁকে অভিনন্দন জানান এবং ১১ নম্বর জার্সি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাঁকে অতিরিক্ত উৎসাহিত করেন। ভারতীয় ফুটবল মহলে ধারণা—এই জার্সি পাওয়া তাঁর মানসিক আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং তাঁকে আগামী ম্যাচগুলোতে সেরাটা দিতে উজ্জীবিত করবে।

ভুটানের বিরুদ্ধে বন্ধ দরজার ম্যাচটি সামগ্রিকভাবে ছিল দলের পরীক্ষার ক্ষেত্র, এবং রায়ান উইলিয়ামস সেই পরীক্ষায় যথেষ্ট সফল। এখন দেখার বিষয়—আসন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে তিনি কতটা সুযোগ পান এবং সেই সুযোগকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারেন। যদি তিনি এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন, তাহলে ভারতীয় ফুটবলের আক্রমণভাগে নতুন এক তারকার উত্থান দেখা যেতে পারে।

সব মিলিয়ে, রায়ান উইলিয়ামসের অভিষেক শুধু একটি ম্যাচে নামা নয়—এটি ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার নতুন পাতা। সুনীল ছেত্রীর ১১ নম্বর জার্সি পাওয়া তরুণ এই ফুটবলারের ওপর চাপও থাকবে, প্রত্যাশাও থাকবে। এখন দেখার বিষয়—সে দায়িত্ব তিনি কীভাবে সামলান।