সুনীল ছেত্রীর মতোই এক নতুন সম্ভাবনা দেখা দিল জাতীয় দলের কাছে — তিনি হচ্ছেন রায়ান উইলিয়ামস (Ryan Williams)৷ যিনি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব ছাড়িয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং এখন দেশের হয়ে খেলতে যোগ্য। বেঙ্গালুরু থেকে উঠে আসা এই ফরোয়ার্ড-উইঙ্গারকে নিয়ে কোচ খালিদ জামিলের মনে আশা জেগে আছে; কারণ উইলিয়ামসের বহুমুখী খেলার ধরন জাতীয় দলের আক্রমণে নতুন বিকল্প যোগ করতে পারে। বেঙ্গালুরু এফসির ক্যাপ্টেন রায়ান এই মৌসুমে সুপার কাপেও তিনটি গোল করেছেন এবং কোচ গোপনে গোয়া থেকে খেলার ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। জামিল জানিয়েছেন যে, রায়ান ও অবনীত ভারতী (Abneet Bharti)—যিনি বলিভিয়ান প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলেন—দুইজনেই বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন; যদি তারা প্রশিক্ষণে ভালো করেন, তাহলে ধরে নেওয়া হচ্ছে তারা ঢাকা যাওয়ার দলের অংশ হবেন, যেখানে নভেম্বর ১৮-এ বাংলাদেশকে হারিয়ে এশিয়ান কাপের ফাইনাল রাউন্ড কোয়ালিফায়ারের মুখোমুখি হওয়ার কথা।
বিষয়টি সহজ মনে হলেও তা অতি গুরুত্বপূর্ণ—দেশে গোলের অভাব অনেক দিন ধরেই রয়ে গেছে এবং রায়ানের মতো একজন খেলোয়াড় সামনে নামলে কোচের হাতে আক্রমণে আরও বিকল্প থাকবে। ৩২ বছর বয়সী রায়ান অস্ট্রেলিয়ার জুনিয়র আন্তর্জাতিক থেকে উঠে আসা; ২০২৩ সালে বেঙ্গালুরুতে এসেই নিজের ছাপ রেখেছেন। জামিলের বর্ণনায়, “রায়ান দেশের জন্য কাজে লাগবে। তিনটি মৌসুমে বেঙ্গালুরুতে তিনি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন এবং তার বহুমুখিতা খুবই কাজে লাগবে।”
অন্যদিকে অবনীত ভারতী কোরের জন্য নতুন ধরনের বাঁধন হতে পারেন—নেপালে জন্মগ্রহণ করা এই সেন্টার-ব্যাকের ক্যারিয়ারটা বিশেষভাবে বৈচিত্র্যময়, এশিয়া, ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় খেলার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। য দিও জামিল এখনও শুধুমাত্র ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করেছেন, ক্যাম্পে দেখা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দেশের ফুটবল মহলে এই তারকা অন্তর্ভুক্তি ইতিমধ্যেই আলোড়ন তৈরি করেছে—জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীও অনুরূপভাবে উল্লসিত। ছেত্রী বলেছিলেন, “এখন আমাদের একটি নং-০৯ আছে, যিনি গোল করতে পারেন। তিনি দলে ভালো প্রভাব ফেলবেন এবং জনগণের ভালোবাসাও পাবেন।” নিজের কথায় ছেত্রী জানিয়েছেন, প্রায় ১৮ মাস আগে রায়ান তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট ছেড়ে ভারতীয় হতে আগ্রহী; ছেত্রী তখন কল্যাণদা (AIFF সভাপতি)–কে বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছিলেন—আর আজ সেটা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
রায়ানের মতো একজন খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক যোগ্যতা অর্জন—এমনকি নাগরিকত্বের এমন এক ধারালো সিদ্ধান্ত নেওয়া—দেশীয় ফুটবলের জন্য এক নবজন্মের সংকেত হতে পারে। এটি কেবল প্লেয়ার যোগ করার কাহিনী নয়; এটি বর্ণনা করে কিভাবে প্রতিভাবান বিদেশজীবীদের নাগরিক হয়ে দেশের পক্ষে খেলতে চাওয়ার মতো অদম্য উৎসাহ থাকতে পারে। তবে মাঠে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে—তাঁরা যদি বেঙ্গালুরু ক্যাম্পে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে ভারতের আক্রমণরেখায় সেই বহুমুখিতা ও গোলের খোঁজ চাপিয়ে দেবে প্রতিপক্ষের ওপর।
অবশ্যই, এই সিদ্ধান্তে ব্যতিক্রমী মানসিক দৃঢ়তা দরকার—নাগরিকত্ব ত্যাগ করা, নতুন পরিচয় গ্রহণ করা এবং জাতীয় কপালের জন্য লড়াই করা সহজ কাজ নয়। রায়ান যে এতটুকু আত্মত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন, তা দলের মধ্যেই ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেয়—এখানে খেলাই প্রথম, এবং দেশের হয়ে খেলতে সক্ষমতা ও ইচ্ছাই সবকিছুর ওপরে। এখন অপেক্ষা থাকবে কোচ জামিলের বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনার, এবং ক্যাম্পে রায়ান ও আবনিত কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন—তার ওপর। যদি এরা সাফল্য অর্জন করে, তাহলে ঢাকা যাত্রা আর কিছুই নয়, বরং নতুন সূচনার এক অংশ হবে যেখানে পুরো জাতীয় দলই বদলে যেতে পারে আরও আক্রমণাত্মক, গতিশীল ও ফলপ্রসূ ফুটবলের দিকে।


