মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) আইপিএল ২০২৫-এ সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল ২০২৫) ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শন করেছেন। যদিও তিনি তাঁর ঝোড়ো শুরুটিকে বড় রানে রূপান্তর করতে পারেননি, তবু ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁর তিনটি বিশাল ছক্কার সৌজন্যে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছেন। রোহিত এই ম্যাচে মাত্র ১৬ বলে ২৬ রানের দ্রুতগতির ইনিংস খেলেন, কিন্তু হায়দ্রাবাদের পেসার প্যাট কামিন্সের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান। এই ইনিংসের মাধ্যমে তিনি আইপিএল-এ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সর্বাধিক ছক্কার রেকর্ডে শীর্ষে পৌঁছে গেছেন।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রোহিতের ছক্কার রাজত্ব
রোহিত শর্মা এই ম্যাচে তিনটি ছক্কা মেরে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আইপিএল-এ তাঁর মোট ছক্কার সংখ্যা ১০২-এ নিয়ে গেছেন। এই কীর্তি তিনি ৮২টি ইনিংসে অর্জন করেছেন, যা তাঁকে এই তালিকায় শীর্ষস্থানে রেখেছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন কাইরন পোলার্ড, যিনি ৫৭ ইনিংসে ৮৫টি ছক্কা মেরেছেন। এরপর রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব (৩৪ ইনিংসে ৪৬ ছক্কা), আম্বাতি রায়ডু (৫২ ইনিংসে ৪৩ ছক্কা) এবং জস বাটলার (২৪ ইনিংসে ৪১ ছক্কা)।
রোহিতের এই কীর্তি শুধু ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই সীমাবদ্ধ নয়। আইপিএল-এ কোনো একটি ভেন্যুতে সর্বাধিক ছক্কার তালিকায় তিনি এখন চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের (আরসিবি) তারকা বিরাট কোহলি, যিনি বেঙ্গালুরুর এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ১৩০টি ছক্কা মেরেছেন। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ক্রিস গেইল (বেঙ্গালুরুতে ১২৭ ছক্কা) এবং তৃতীয় স্থানে এবি ডি ভিলিয়ার্স (বেঙ্গালুরুতে ১১৮ ছক্কা)। রোহিতের ১০২ ছক্কা তাঁকে এই অভিজাত তালিকায় স্থান করে দিয়েছে।
আইপিএল ২০২৫-এ রোহিতের ফর্ম
আইপিএল ২০২৫-এ রোহিত শর্মার ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা চলছিল। এই মরশুমে তিনি পাঁচ ম্যাচে যথাক্রমে ০, ৮, ১৩, ১৭ এবং ১৮ রান করেছিলেন, যা তাঁর মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে, সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত ছন্দে ফিরেছেন। ১৬৩ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত ওপেনার রায়ান রিকেলটনের সঙ্গে মুম্বইকে দ্রুত শুরু এনে দেন। তাঁর ১৬ বলে ২৬ রানের ইনিংসে তিনটি বিশাল ছক্কা ছিল, যা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁর ভক্তদের জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী।
এই ইনিংস রোহিতের জন্য ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি তাঁর এই মরশুমের সর্বোচ্চ স্কোর। তিনি ব্যাট হাতে আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছেন, যা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দলের জন্য ইতিবাচক সংকেত। তবে, প্যাট কামিন্সের বলে আউট হওয়ায় তিনি বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হন, যা দলের জন্য কিছুটা হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুম্বইয়ের খেলার প্রেক্ষাপট
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এই ম্যাচে ১৬৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করছিল, যা সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ নির্ধারণ করেছিল। রোহিতের দ্রুত শুরু সত্ত্বেও, তাঁর আউট হওয়া দলের মোমেন্টামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, মুম্বইয়ের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ, যেখানে সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা এবং হার্দিক পান্ডিয়ার মতো খেলোয়াড় রয়েছেন, তাদের জন্য এই লক্ষ্য অর্জনযোগ্য। রোহিতের এই ইনিংস দলের মনোবল বাড়িয়েছে এবং ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ জাগিয়েছে।
রোহিতের কীর্তির তাৎপর্য
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম রোহিত শর্মার জন্য ‘হোম গ্রাউন্ড’ এবং এই মাঠে তাঁর ব্যাটিং দক্ষতা সবসময়ই আলোচনার বিষয়। ১০২টি ছক্কার এই কীর্তি তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই স্টেডিয়ামে তিনি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে দল পাঁচবার আইপিএল শিরোপা জিতেছে। রোহিতের এই রেকর্ড তাঁর ধারাবাহিকতা এবং বিস্ফোরক ব্যাটিং ক্ষমতার প্রমাণ।
এছাড়াও, আইপিএল-এ সর্বাধিক ছক্কার তালিকায় রোহিত বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তিনি মোট ২৮০টি ছক্কা মেরেছেন, যেখানে শীর্ষে রয়েছেন ক্রিস গেইল (৩৫৭ ছক্কা)। এই মরশুমে রোহিত যদি তাঁর ফর্ম ধরে রাখতে পারেন, তবে তিনি এই তালিকায় আরও এগিয়ে যেতে পারেন।
রোহিত শর্মার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ১০০ ছক্কার মাইলফলক আইপিএল ২০২৫-এ তাঁর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। যদিও তিনি সানরাইজার্সের বিরুদ্ধে বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হন, তাঁর ঝোড়ো শুরু এবং তিনটি ছক্কা ভক্তদের মুগ্ধ করেছে। এই কীর্তি তাঁকে আইপিএল-এর ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং রোহিতের ভক্তরা আশা করছেন, এই ইনিংস তাঁর ফর্মে ফেরার সূচনা হবে এবং তিনি দলকে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবেন।