দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুর থানার কাষ্ঠমহল এলাকায় এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে রেশন (Ration) পেতে সমস্যা হওয়ার কারণে এক গ্রামবাসী সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী (Chief Minister) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি (direct) হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করেন। অভিযোগ, এর পরেই রেশন ডিলার (Dealer) অভিজিত নস্কর রেগে গিয়ে অভিযোগকারী দীপঙ্কর সর্দারের বাড়িতে গিয়ে চড়াও হন এবং প্রাণনাশের হুমকি (threat) দেন। এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং দীপঙ্কর সর্দার বিষয়টি বিষ্ণুপুর থানায় ও ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রেশন প্রকল্পে জালিয়াতি ও অভিযোগ:
ঘটনা অনুযায়ী, দীপঙ্কর সর্দার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাষ্ঠমহল এলাকার বাসিন্দা। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর এলাকায় দুয়ার সরকার রেশন প্রকল্পের অধীনে রেশন সঠিকভাবে বিতরণ হচ্ছে না। দীপঙ্করবাবুর মতে, এলাকার মানুষজন রেশন সঠিকভাবে পাচ্ছেন না এবং তাঁকেও সঠিক পরিমাণে রেশন দেওয়া হচ্ছে না। শুধু রেশন কম দেওয়া হচ্ছে না, বরং আটার পরিবর্তে ময়দা চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
দীপঙ্কর সর্দার এই অভিযোগ নিয়ে রেশন ডিলার অভিজিত নস্করের কাছে গিয়ে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানান। তবে, অভিযোগ অনুযায়ী, রেশন ডিলার অভিজিত নস্কর তার অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেননি। উল্টে তিনি দীপঙ্করকে হুমকি দেন এবং রেশন কার্ড বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। এই পরিস্থিতি থেকে বিরক্ত হয়ে দীপঙ্কর সর্দার শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর হেল্প লাইন এবং রেশন দফতরের হস্তক্ষেপ:
দীপঙ্কর সর্দারের অভিযোগ ছিল যে, রেশন সঠিকভাবে না পাওয়ার কারণে তিনি হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করেন। তারপর খাদ্য দফতর থেকে দীপঙ্করের কাছে ফোন আসে এবং তিনি গোটা বিষয়টি জানিয়ে দেন। বিষয়টি জানা যায় রেশন ডিলার অভিজিত নস্করেরও। অভিযোগ, এর পরেই অভিজিত নস্কর দীপঙ্কর সর্দারের বাড়িতে চড়াও হন এবং হুমকি দিতে শুরু করেন।
৭ই অক্টোবর, দীপঙ্কর সর্দারের বাড়িতে অভিজিত নস্কর সহ আরও কিছু ব্যক্তি এসে উপস্থিত হন। তারা দীপঙ্কর এবং তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আতঙ্কিত দীপঙ্কর সর্দার বিষ্ণুপুর থানায় এবং বিষ্ণুপুর ১ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রেশন ডিলার অভিজিত নস্করের দাবি:
এই ঘটনার পর রেশন ডিলার অভিজিত নস্কর নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি জানান, তিনি কোনও হুমকি দেননি এবং পুরো ঘটনা মিথ্যা বলে দাবি করেন। অভিজিত বলেন, “আমি শুধু দীপঙ্কর সর্দারকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন সে বারবার এই ধরনের অভিযোগ করছে। সে কোনও উত্তর দেয়নি। আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম, কেন সে এরকম অভিযোগ করছে। আমি কোনও হুমকি দিইনি।” তিনি আরও বলেন, “এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চক্রান্ত।”
অভিজিত নস্করের এই দাবি নিয়ে এলাকায় কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত বিরোধের ফলস্বরূপ, তবে অন্যরা বলছেন যে, এটি রেশন ডিলারদের দ্বারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়া।
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা:
বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করছেন এবং অভিযোগকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি, প্রশাসনও রেশন বিতরণ ব্যবস্থায় কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে।
বিষ্ণুপুর ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকও এই ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে এবং এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:
দীপঙ্কর সর্দারের অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে এরকম অভিযোগের জন্য আরো শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি উঠেছে। পাশাপাশি, রেশন বিতরণে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা দুর্নীতি যেন না ঘটে, সেই দিকে নজর রাখার জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন।
এদিকে, এই ঘটনার ফলে এলাকার মানুষদের মধ্যে আশঙ্কা বেড়েছে। তারা চিন্তা করছেন, তাঁদের রেশন নিয়ে আরও সমস্যা হতে পারে এবং এই ধরনের সমস্যার সমাধান না হলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আরও বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে, তা হলো, দুয়ারে রেশন প্রকল্প বা সরকারি প্রকল্পগুলো কি যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে? এর ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং তদারকি প্রয়োজন।