নতুন প্রজন্মের যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিশেষত ৬জি-কে বিকশিত করতে সরকারের পূর্ণ সমর্থন ও অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তিনি বলেছেন, শক্তিশালী নীতি কাঠামো, গবেষণায় বাড়তি অর্থায়ন এবং সময়মতো স্পেকট্রাম বরাদ্দের মাধ্যমে ৬জি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহজতর করা হবে।
সম্প্রতি টেলিযোগাযোগ সচিব ড. নীরজ মিত্তল-এর সঙ্গে যৌথভাবে ভারত ৬জি অ্যালায়েন্স (Bharat 6G Alliance বা B6GA)-এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, “৬জি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ভারত ৬জি অ্যালায়েন্সের একটি লক্ষ্যভিত্তিক, কৌশলগত এবং স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত। এতে করে ভারতীয় মেধাসম্পদ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিশ্বদরবারে আরও উঁচুতে উঠবে।”
মন্ত্রী আরও জোর দিয়ে বলেছেন, ৬জি প্রযুক্তিতে বৈশ্বিক মেধাসম্পদ অধিকারের (IPR) অন্তত ১০ শতাংশ ভারতের হাতে আনতে প্রতিটি ওয়ার্কগ্রুপের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যালোচনা করা হবে। তিনি জানান, এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণের জন্য সঠিক কৌশল এবং সমন্বিত পদক্ষেপ অপরিহার্য।
উল্লেখযোগ্য যে, এই উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠকে ভারত ৬জি অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারপার্সন, ভাইস-চেয়ারপার্সন এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ভারতের ৬জি প্রযুক্তির অগ্রগতির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে ৬জি প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নেওয়া কর্মপরিকল্পনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রেজেন্টেশনে জোর দিয়ে বলা হয়, দেশের মাটিতে তৈরি রেডিও অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক (RAN) প্রযুক্তি, বুদ্ধিমান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় উন্নত কানেক্টিভিটি, এবং কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট সিটি ও টেকসই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ৬জি-র বহুমাত্রিক প্রয়োগ নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত ৬জি অ্যালায়েন্স মন্ত্রীকে গত বৈঠকের পর থেকে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেসবের হালনাগাদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে।
অ্যালায়েন্স বর্তমানে ৮০টি সদস্য প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে ৩০টিরও বেশি স্টার্টআপ রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, দেশে ৬জি প্রযুক্তি নিয়ে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক ইতিবাচক গতি তৈরি হয়েছে।
এই বৈঠকটি টেলিযোগাযোগ শিল্পের প্রায় ১০০ জনেরও বেশি শীর্ষ নেতৃত্ব ও অংশীদারদের সঙ্গে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে কাজ করে। সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত শেষ পর্যালোচনার পর থেকে অগ্রগতি, উদ্ভাবন এবং যৌথ উদ্যোগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। মূলত, বৈঠকের মাধ্যমে ৬জি প্রযুক্তিতে ভারতের নেতৃত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতের রোডম্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ভারত সরকার ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ‘ভারত ৬জি ভিশন ডকুমেন্ট’ প্রকাশ করেছিল। এই নীতিপত্রে ভারতের ৬জি প্রযুক্তিতে বিশ্ব নেতৃত্ব অর্জনের জন্য কৌশলগত ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এই ডকুমেন্টের মাধ্যমে গবেষণা, বিকাশ, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য, এবং স্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী সিন্ধিয়া বলেন, “ভারত শুধু ৬জি প্রযুক্তির ব্যবহারকারী হবে না, বরং এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক এবং রপ্তানিকারক হিসেবেও বিশ্বে পরিচিতি পাবে। আমাদের দেশের তরুণ মেধা, উদ্ভাবনী মনোভাব এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান চালিকা শক্তি।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতের কানেক্টিভিটি শুধু শহরভিত্তিক থাকবে না, গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি মানুষকেও এর আওতায় আনা হবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং স্মার্ট শহরগুলিতে ৬জি প্রযুক্তির ব্যবহার দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করবে।
৬জি প্রযুক্তি ব্যবহারে ভারত বিশ্বকে যে উদাহরণ দিতে চায়, তার ভিত্তি ইতিমধ্যেই স্থাপন হয়েছে। অ্যালায়েন্সের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা, একাডেমিয়া এবং শিল্পক্ষেত্রের বিভিন্ন অংশীদার— সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশীয় ৬জি প্রযুক্তির প্রোটোটাইপ, পরীক্ষা এবং মানদণ্ড প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলছে।
এভাবে, ভারত সরকার এবং ভারত ৬জি অ্যালায়েন্সের যৌথ প্রচেষ্টা দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬জি প্রযুক্তির শীর্ষসীমায় পৌঁছানোর পথে এগিয়ে নিচ্ছে। মন্ত্রী এবং অংশীদারদের দৃঢ় মনোভাব এবং পরিশ্রমী উদ্যোগই প্রমাণ করে যে, ‘ডিজিটাল ভারত’-এর স্বপ্ন এখন শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে।