লেহ: জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুককে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA)-এর আওতায় আটক করার পর লাদাখের লেহ শহরে উত্তেজনা অব্যাহত। সহিংসতার আশঙ্কায় টানা চতুর্থ দিন শনিবারও কারফিউ (Curfew) জারি রয়েছে। শহরজুড়ে চলছে কড়া টহল, তল্লাশি অভিযান এবং প্রশাসনের নজরদারি।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ওয়াংচুকের ধারাবাহিক “উস্কানিমূলক বক্তব্য” এবং “বিভ্রান্তিকর ভিডিও”-ই ২৪ সেপ্টেম্বরের সহিংসতার মূল কারণ। সেই সহিংসতায় চারজনের মৃত্যু হয় এবং বহু মানুষ আহত হন। সরকারি ভবন, গাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পুলিশ কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাও ঘটে।
লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন শুক্রবার গভীর রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, “ওয়াংচুককে আটক করা ছিল শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাঁর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড জনশৃঙ্খলার পক্ষে ক্ষতিকারক ছিল এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তাঁকে আটক ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ছিল না।”
প্রশাসনের দাবি, ওয়াংচুকের নেপালের গণআন্দোলন ও আরব বসন্তের মতো ঘটনার উল্লেখ জনসাধারণকে প্ররোচিত করে তুলেছিল। এতে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে সহিংসতা ছড়ায়।
লাদাখ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কারফিউ বহাল রয়েছে।” তিনি আরও জানান, লেফটেন্যান্ট গভর্নর শীঘ্রই রাজভবনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকের পর কারফিউ শিথিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী একাধিক জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। অভিযুক্তদের মধ্যে একজন স্থানীয় কাউন্সিলারও রয়েছেন, যিনি নাকি সহিংসতা উস্কে দিয়েছিলেন।
কারগিল সহ লাদাখের অন্যান্য প্রধান শহরেও ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে, যার ফলে পাঁচজন বা তার বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ। লাদাখ প্রশাসনের তথ্য ও জনসংযোগ দফতর (DIPR) এক বিবৃতিতে জানায়, “ওয়াংচুক বারবার এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন যা রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সরকার আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তিনি ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন চালিয়ে যান।”
প্রশাসন আরও জানায়, তাঁর উস্কানিমূলক বক্তব্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচারের কারণে সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়নি। “যদি তিনি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছেড়ে আলোচনায় অংশ নিতেন, এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
ওয়াংচুককে জনশৃঙ্খলার স্বার্থে লেহ থেকে সরিয়ে রাজস্থানের যোধপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রশাসনের মতে, শান্তিপ্রিয় লেহ শহরে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি ছিল। বর্তমানে লেহ শহরে সেনা, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর যৌথ টহল চলছে। অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় কড়া নজরদারি বজায় রয়েছে এবং প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে।