রমজান মাসেই চিনা অফিসে লুট পাকিস্তানীদের, চুরি গেল ল্যাপটপ-আসবাব!

পাকিস্তানে আবারও চাঞ্চল্যকর লুটপাটের ঘটনা ঘটল, আর তাও রমজান মাসে। ইসলামাবাদে একটি চিনা কল সেন্টারে (Chinese Call Centre) ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে একদল দুষ্কৃতী। এই ঘটনায়…

Chinese Call Centre Looted

পাকিস্তানে আবারও চাঞ্চল্যকর লুটপাটের ঘটনা ঘটল, আর তাও রমজান মাসে। ইসলামাবাদে একটি চিনা কল সেন্টারে (Chinese Call Centre) ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে একদল দুষ্কৃতী। এই ঘটনায় চুরি গেছে শত শত ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাবপত্র এবং এমনকি রান্নার সামগ্রী পর্যন্ত!

ঘটনার বিবরণ
ইসলামাবাদের একটি চিনা কল সেন্টার রমজান মাসের মধ্যেই দুষ্কৃতীদের আক্রমণের শিকার হয়। জানা গেছে, লুটেরারা সেখানে ঢুকে অফিসের মূল্যবান সামগ্রী একে একে সরিয়ে নেয়। চুরি যাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল— শতাধিক ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, অফিসের আসবাবপত্র, কাটলারি ও রান্নার সামগ্রী
চিনের বিনিয়োগে তৈরি এই কল সেন্টারটিতে কর্মরত কর্মীরা তখন রোজার কারণে কাজের সময় বদলেছিলেন। সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালায় বলে মনে করা হচ্ছে।

   

পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগের উপর প্রভাব
পাকিস্তানে চিনা বিনিয়োগ বরাবরই একটি বড় বিষয়। চিন বহু বছর ধরে পাকিস্তানে নানা পরিকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে, বিশেষত চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC)-এর মাধ্যমে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুরক্ষা জনিত সমস্যা এবং লুটপাটের কারণে চিনা বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।

চিনের ব্যবসায়ীদের উপর বারবার এই ধরনের আক্রমণ পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনাগুলি চিনা সংস্থাগুলিকে পাকিস্তান থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য করতে পারে।

রমজানেই কেন এই ধরনের লুটপাট?
রমজান ইসলামিক ক্যালেন্ডারের পবিত্রতম মাস, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায় উপবাস রাখে এবং প্রার্থনায় মগ্ন থাকে। অথচ এই মাসেই কেন এত বড় লুটপাট ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট গভীর হওয়ার কারণেই চুরির হার বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া, বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী এবং সাধারণ মানুষ টিকে থাকার জন্য চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন।

এটা কি বাংলাদেশের ঘটনার পুনরাবৃত্তি?
গত বছর বাংলাদেশেও এমন একটি চাঞ্চল্যকর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল। শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে ঢুকে দুষ্কৃতীরা আসবাবপত্র লুট করে। এমনকি সেখান থেকে শাড়ি এবং মহিলাদের অন্তর্বাস পর্যন্ত চুরি হয়! এই ঘটনায় সারা দেশে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল।

পাকিস্তানে ইসলামাবাদের এই লুটের ঘটনা দেখে অনেকেই বলছেন, এটি বাংলাদেশের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পাকিস্তানেও এই ধরনের অপরাধ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রশাসনের ব্যর্থতা?
এই ঘটনায় পাকিস্তানি প্রশাসনের ব্যর্থতা চোখে পড়ছে। ইসলামাবাদের মতো রাজধানী শহরে কীভাবে এত বড় লুটপাট ঘটে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় পুলিশের দাবি, তারা দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু চিনা কল সেন্টারের মালিকপক্ষ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এই চুরির ঘটনা ঘটেছে।

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী?
দেশটির অর্থনীতি এখন সংকটের মুখে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর কাছ থেকে ঋণ নেওয়া সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধি কমেনি। তার উপর যদি বিদেশি সংস্থাগুলি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে বিনিয়োগ কমাতে শুরু করে, তাহলে পাকিস্তানের অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারে।

রমজান মাসের মতো পবিত্র সময়ে পাকিস্তানে চিনা কল সেন্টারে লুটপাটের ঘটনা প্রমাণ করে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। চুরির মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ চোর থেকে শুরু করে বড় দুষ্কৃতীরাও এখন সুযোগ বুঝে হামলা চালাচ্ছে।

পাকিস্তান যদি তার অর্থনীতিকে বাঁচাতে চায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা কঠোর করতে হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের মুখোমুখি হতে হবে দেশটিকে।