নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে তীব্র ভিড় ও ট্রেন বিলম্বে চরম বিশৃঙ্খলা

রবিবার রাতে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে (New Delhi railway station ) একাধিক ট্রেনের প্রস্থানে বিলম্বের কারণে প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১২ এবং ১৩-এ তীব্র যাত্রী ভিড়ের ফলে একটি…

Chaos at New Delhi Railway Station as Train Delays Cause Massive Rush

রবিবার রাতে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে (New Delhi railway station ) একাধিক ট্রেনের প্রস্থানে বিলম্বের কারণে প্ল্যাটফর্ম নম্বর ১২ এবং ১৩-এ তীব্র যাত্রী ভিড়ের ফলে একটি প্রায়-ভগদড় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কোনও আঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে, কয়েকটি ট্রেনের বিলম্বের কারণে স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড়ের সৃষ্টি হয়েছিল। যাত্রীরা ব্যারিকেড টপকে এবং সারি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

রবিবার রাতে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা দেয়, যখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের প্রস্থানে বিলম্ব হয়। এই বিলম্বের ফলে প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক জানান, “কয়েকটি ট্রেনের বিলম্বের কারণে স্টেশনে অতিরিক্ত ভিড় হয়েছিল। তবে, এখন কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে গেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।” রেল মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, “নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে ভারী ভিড় ছিল, তবে কোনও ভগদড় বা ভগদড়ের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। অরক্ষিত যাত্রীদের হোল্ডিং এরিয়ার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার প্রোটোকল ব্যবহার করা হচ্ছে।”

   

Also Read | রোহিণীতে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনা গ্রেফতার তিন কুখ্যাত   

এই ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গেছে। অনেকে ব্যারিকেডের ওপর দিয়ে ট্রেনে উঠতে চেষ্টা করেছেন, আবার কেউ কেউ সারি এড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত ছিল না। একজন যাত্রী বলেন, “ট্রেন ছাড়তে দেরি হওয়ায় আমরা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম। ভিড় এত বেশি ছিল যে কখন কী হয়ে যায়, তার কোনও ঠিক ছিল না।” আরেকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, “রেল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল এত ভিড়ের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া। এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো অভিজ্ঞতা।”

Advertisements

নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন দেশের অন্যতম ব্যস্ততম স্টেশন। প্রতিদিন এখান থেকে লাখ লাখ যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন। তবে, ট্রেনের সময়সূচিতে বিলম্ব এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মহাকুম্ভের জন্য যাত্রীদের তীব্র চাপে এই স্টেশনে একটি মর্মান্তিক ভগদড়ের ঘটনা ঘটেছিল, যাতে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল যে তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু রবিবারের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, এখনও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, প্ল্যাটফর্মে অসংখ্য মানুষ একে অপরের ওপর দিয়ে ট্রেনে উঠতে চাইছেন। এই দৃশ্য দেখে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে যেকোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “এটা লজ্জার বিষয় যে আমাদের রেল ব্যবস্থা এখনও এমন অবস্থায় রয়েছে।”

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিলম্বিত ট্রেনগুলো এখন ছেড়ে গেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে, এই ঘটনা রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা এবং পরিকাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব্যস্ত সময়ে অতিরিক্ত ট্রেন চালানো, ভিড় নিয়ন্ত্রণে আরও কর্মী নিয়োগ এবং স্টেশনের সক্ষমতা বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ জরুরি। একজন রেল বিশেষজ্ঞ বলেন, “নয়াদিল্লি স্টেশনের মতো বড় হাবে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন।”

এই ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছে এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। একজন যাত্রী বলেন, “আমরা টিকিটের জন্য টাকা দিই, কিন্তু সুবিধা পাই না। এটা আর কতদিন চলবে?” সমালোচকরা বলছেন, রেলওয়ের উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্পের কথা বলা হলেও, সাধারণ যাত্রীদের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে এই বিশৃঙ্খলা শুধু একটি দিনের ঘটনা নয়, বরং দেশের রেল পরিষেবার দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার প্রতিফলন। যতক্ষণ না এই সমস্যার মূলে গিয়ে সমাধান করা হবে, ততক্ষণ এমন পরিস্থিতি বারবার ফিরে আসবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এখন সময় এসেছে কথা কম আর কাজ বেশি করার।