Notional Increment for Pension: অবসরের একদিন পর যাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির তারিখ নির্ধারিত ছিল, সেইসব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার। এখন থেকে ৩০ জুন অথবা ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেওয়া কর্মচারীরা তাদের পেনশনের হিসাব নির্ধারণের জন্য এককালীন ‘নোটিওনাল ইনক্রিমেন্ট’ পাবেন। তবে এই ইনক্রিমেন্ট শুধুমাত্র পেনশন নির্ধারণে গণ্য হবে, অন্য কোনও অবসরজনিত সুবিধায় নয়।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস (রিভাইজড পে) রুলস, ২০০৬ অনুযায়ী, ১ জুলাই নির্ধারিত ছিল বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের দিন। ২০১৬ সালে নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ও ১ জুলাই—দু’টি তারিখে ইনক্রিমেন্ট চালু করা হয়। ফলে অনেক কর্মচারী যারা ৩০ জুন অথবা ৩১ ডিসেম্বর অবসর নেন, তারা একদিনের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হন। এর ফলে তাদের পেনশন হ্রাস পায়।
২০১৭ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের এক রায়ে অবসরের একদিন আগে ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার দাবি মান্যতা পায়, যদিও প্রথমে ওই রায় শুধুমাত্র মামলাকারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেশজুড়ে বহু কর্মচারী একই দাবি নিয়ে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের দ্বারস্থ হন। শেষপর্যন্ত ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় দেয় এবং নোটিওনাল ইনক্রিমেন্টের দাবি স্বীকৃতি পায়। এরপর ২০২৪ সালে নির্দিষ্ট কিছু শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা অন্যান্য অনুরূপ মামলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়।
এই পটভূমিতে, কর্মীবর্গ ও প্রশিক্ষণ দপ্তর (DoPT) ২০ মে ২০২৫ তারিখে একটি অফিস মেমোরান্ডাম জারি করে ঘোষণা করেছে যে, যেসব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৩০ জুন অথবা ৩১ ডিসেম্বর অবসর নিয়েছেন বা নিচ্ছেন এবং যাঁদের কর্মজীবনে নির্ধারিত যোগ্যতা ও সন্তোষজনক পারফরম্যান্স রয়েছে, তাঁদের পেনশন হিসাবের জন্য একটি নোটিওনাল ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে।
নতুন নির্দেশিকায় কী বলা হয়েছে?
ডিওপিটির ওই মেমোরান্ডামে বলা হয়েছে: “ব্যয় দপ্তর ও আইন দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা যারা ৩০ জুন বা ৩১ ডিসেম্বর তারিখে অবসর গ্রহণ করছেন এবং যাদের সন্তোষজনক কাজের মূল্যায়ন রয়েছে, তাদেরকে ১ জুলাই বা ১ জানুয়ারির ইনক্রিমেন্ট পেনশন নির্ধারণের জন্য নোটিওনালি (hypothetically) মঞ্জুর করা হবে।”
উদাহরণ স্বরূপ: যদি কোনও কর্মচারী ৩০ জুন তারিখে অবসর নেন এবং তাঁর শেষ বেসিক বেতন হয় ৭৯,০০০ টাকা, তবে ১ জুলাই থেকে যে ইনক্রিমেন্টে তাঁর বেতন হতো ৮১,০০০ টাকা, সেটি এখন পেনশন হিসাবের জন্য ধরা হবে।
তবে এই সুবিধা কিসে প্রযোজ্য, কিসে নয়?
যা প্রযোজ্য:
শুধুমাত্র মাসিক পেনশন হিসাবের জন্যই নোটিওনাল ইনক্রিমেন্ট ধরা হবে।
কর্মীর শেষ বেতন ধরে যে পেনশন নির্ধারণ করা হয়, তাতে এই ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হবে।
যা প্রযোজ্য নয়
গ্র্যাচুইটি, লিভ এনক্যাশমেন্ট, পেনশনের কমিউটেশন ভ্যালু, ইএল/এইচপিএল-এর এনক্যাশমেন্ট, গ্রুপ ইনসিওরেন্স স্কিম ইত্যাদি অন্যান্য সুবিধা এই ইনক্রিমেন্টের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে না।
এই সমস্ত হিসাব হবে কর্মীর বাস্তবিক শেষ বেতন (actual last drawn pay) অনুযায়ী, নোটিওনাল ইনক্রিমেন্ট বাদ দিয়ে।
এর প্রভাব কী হতে পারে?
এই সিদ্ধান্তে বহু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী, বিশেষত যাঁরা একদিনের ব্যবধানে ইনক্রিমেন্ট হারিয়ে পেনশনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাঁরা উপকৃত হবেন। বহু বছর ধরে এই দাবি নিয়ে আইনি লড়াই চলেছে, যা অবশেষে এক নীতিগত সমাধানের দিকে পৌঁছাল। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের একটি বড় অংশের পেনশন কিছুটা হলেও বাড়বে, যদিও অন্যান্য অবসরজনিত সুবিধায় এর প্রভাব পড়বে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি ‘ন্যায়সংগত’ পদক্ষেপ, যা অবসর নেওয়ার আগের বছরের পূর্ণকালের সৎ ও নিষ্ঠাবান কাজের স্বীকৃতি দেয়। এটি শুধু আদালতের রায় অনুসরণ নয়, একটি মানবিক সিদ্ধান্তও।
এই নির্দেশিকা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি এখন থেকে অবসর গ্রহণের সময় কর্মচারীর কর্মদিবসের বিবরণ ও ইনক্রিমেন্টের যোগ্যতা যাচাই করে পেনশনের হিসাব পুনরায় নির্ধারণ করবে।
সুতরাং, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তির খবর। অবসরের প্রাক্কালে একদিনের পার্থক্যে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ক্ষতির যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল, তা এই সিদ্ধান্তে অনেকটাই প্রশমিত হবে।