সিবিআইয়ের চার্জশিটে নতুন একটি নাম উঠে এসেছে, যেটি বিভিন্ন আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই নতুন মহিলার নাম সুস্মিতা চক্রবর্তী, যিনি ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নামক একটি কোম্পানির রিসেপশনিস্ট।
তার মাধ্যমে বেআইনি নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনাটি সিবিআই-এর নজরে আসে। গত কয়েক বছরে নিয়োগ দুর্নীতির অনেক কাহিনিই সামনে এসেছে, কিন্তু এই নতুন চার্জশিটে আরও কিছু ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে যা রাজ্য রাজনীতির নানা অজানা দিক উন্মোচন করছে।
২০১৪ সালে সিবিআই তদন্তে আসে, যখন তাদের কাছে তথ্য আসে যে ‘কালীঘাটের কাকু’, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, তার বাড়ি থেকে বেআইনি নিয়োগের টাকা সংগ্রহ করতেন। এই অবৈধ লেনদেনের সমস্ত হিসাব রাখতেন নিজের ডায়েরিতে, যা পরে সিবিআই-এর কাছে বাজেয়াপ্ত হয়। চার্জশিটের ১৪ নম্বর পাতায় সিবিআই দাবি করেছে, কাকু নিজেই তার এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রার্থীদের জন্য ঘুষের টাকা আদায় করতেন এবং তাদের হিসাব লিখে রাখতেন ডায়েরিতে।
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। সিবিআই দাবি করেছে, সুস্মিতা চক্রবর্তী, ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর রিসেপশনিস্ট, ১৫৭ জন অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর তালিকা ইমেল মারফত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এই ১৫৭ জনের মধ্যে ৫১ জন প্রার্থী অযোগ্য থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি পেয়ে গিয়েছিলেন। এই তথ্যই সিবিআইয়ের তদন্তকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তবে আরও একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল, যেটি সিবিআইয়ের জন্য তদন্তকে কঠিন করে তুলেছিল। যখন এই তদন্ত শুরু হয়, তখন সিবিআই দেখতে পায় যে সুজোয়ের ইমেল আইডি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। শুধু সুজয়ের নয়, তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী নিখিল হাতির এবং অন্যান্য এজেন্টদেরও ইমেল আইডি ডিলিট করা হয়েছিল। এমনকি তাদের ফোনগুলোও নষ্ট করা হয়েছিল যাতে তথ্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু সিবিআইয়ের দৃষ্টি এড়িয়ে সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তারা উদ্ধার করে ফেলে, যা পরবর্তীতে এই দুর্নীতি কাণ্ডের ক্লু হিসাবে কাজে আসে।
এখানে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, সিবিআইয়ের দাবি অনুযায়ী, এই ১৫৭ জন অযোগ্য প্রার্থী মধ্যে অনেকেই নির্দিষ্ট সরকারি পরীক্ষায় চাকরি পেয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ৫১ জন প্রার্থী যে পদে নিয়োগ পেয়েছেন, তা ছিল সম্পূর্ণ অযোগ্য। এই দুর্নীতির নেপথ্যে যে এক বড়ো চক্র কাজ করছে, সেটি এখন পরিষ্কার হয়ে উঠছে। সিবিআই আরও জানিয়েছে, তাদের তদন্তের মাধ্যমে এই সব দুর্নীতি সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে এবং এই বিষয়ে পরবর্তীতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এবার প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল সংখ্যক অযোগ্য প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার পেছনে কারা কারা দায়ী? এমনকি কিছু প্রভাবশালী নামও জড়িয়ে পড়তে পারে এই দুর্নীতির কান্ডে। সিবিআই এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা এখন পুরোপুরি তদন্ত করে দেখছে, এই ধরনের বেআইনি নিয়োগ কীভাবে এবং কোন উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে চালানো হয়েছিল।
যত দিন যাচ্ছে, এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার পর্দাফাস আরও গভীর হতে পারে এবং রাজনীতির অন্ধকার দিকগুলোর আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য সামনে আসবে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।