সুদীপ্ত বিশ্বাস: চব্বিশে হ্যাট্রিক করেছে মোদি সরকার (BJP)। টানা তিন দফায় কেন্দ্রে বিজেপির সরকার। ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটেও ফের বিজেপি জিততে চলেছে। এমনই ইঙ্গিত দিল বাংলাপক্ষ। ভারতের বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগঠন বলে নিজেদের দাবি তারা। বিজেপি বিরোধিতায় তাদের সুর সবসময় সপ্তমে থাকে। সেই বাংলাপক্ষর প্রকাশিত বইয়ে খুব স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ২০২৯ সালে খুব সহজেই কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করতে চলেছে বিজেপি। কোন পথে ফের কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন হবে তার ব্যাখ্যাও করা হয়েছে।
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে বাংলাপক্ষর বিশেষ বই। নাম- স্বাধীন ভারতে বাঙালির সংকট ও সমাধান। এখানেই আগামীতে লোকসভা দখলের অঙ্ক নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখার বিষয় ডিলিমিটেশন অর্থাৎ লোকসভা আসনের পুনর্বিন্যাস। জনসংখ্যার ভিত্তিতে লোকসভার আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। গর্গ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ভারতে ডিলিমিটেশন দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। ১৯৭৬ সালে এই আসন পুনর্বিন্যাস ২৫ বছরের জন্য স্থগিত করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। আর ২০০১ সালে ফের ২৫ বছরের জন্য ডিলিমিটেশন স্থগিত করেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। যার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হচ্ছে। এমনই লিখেছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়।
আরো দেখুন
লোকসভার সদস্যরা প্রত্যেককে একটি বড় এলাকার মানুষের প্রতিনিধি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে লোকসভার প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়েনি। আসন পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে সংসদের নিম্নকক্ষে জনপ্রতিনিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতেই ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপি বাজিমাত করবে বলে মনে করছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়। কারণ হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলি-সহ গুজরাতে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা বেড়েছে। সেখানে বিজেপির শক্ত জমি রয়েছে। তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ বা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে সেভাবে জনসংখ্যা বাড়েনি। বিজেপি এটারই ফায়দা পাবে বলে লেখা হয়েছে বাংলাপক্ষের প্রকাশিত বইয়ে।
কোন পথে বিজেপির জয় সুগম হবে তাও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন লোকসভার আসন সংখ্যা ৪২। ডিলিমিটেশনের ফলে সেই সংখ্যা হবে ৬০। অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশের লোকসভা আসন সংখ্যা ৮০ থেকে বেড়ে হবে ১৪৩। মধ্যপ্রদেশে ২৯ থেকে বেড়ে হবে ৫২। বিহারে ৪০ থেকে বেড়ে হবে ৭৯। রাজস্থানে দ্বিগুন। ২৫ থেকে বেড়ে ৫০। আর নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে ২৬ থেকে বড়ে হবে ৪৩। এই পাঁচটি রাজ্যের মোট লোকসভা আসন সংখ্যা হবে ৪২৭। আর লোকসভার মোট আসন সংখ্যা হবে ৮৪৬। অর্থাৎ হিন্দি বলয়ের চার রাজ্য এবং গুজরাত মিলিয়ে আসন সংখ্যা লোকসভার মোট আসনের অর্ধেকের বেশি হবে। এখন লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসন। এর মধ্যে এই এই পাঁচ রাজ্যের মিলিত আসন সংখ্যা ২৩৭৷ ডিলিমিটেশনের পর লোকসভার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা এই পাঁচ রাজ্যের হাতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গর্গ চট্টোপাধ্যায়৷ এর এই রাজ্যগুলিতে বিজেপির জমি শক্ত হওয়ায় ফের কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠনের পথ সুগম বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাপক্ষের সাধারণ সম্পাদক৷
গর্গ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ২০২৬ সালের পর ডিলিমিটেশন হলে উত্তর ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলোতে, যেমন উত্তরপ্রদেশ, বিহার, এবং মধ্যপ্রদেশে লোকসভা আসন বাড়বে। এই রাজ্যগুলোতে বিজেপির শক্তিশালী ভিত রয়েছে। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, আসন বৃদ্ধির ফলে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতের প্রতিনিধিত্ব বাড়বে, যা বিজেপির জয়কে আরও সহজ করে তুলবে। বাংলাপক্ষর এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই পুনর্বিন্যাস বাঙালি ও দক্ষিণ ভারতীয়দের রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে দেবে, যা তাদের জন্য ‘সংকট’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বইটি প্রকাশের পর থেকে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতারা এই বিশ্লেষণকে সরাসরি সমর্থন না করলেও, ডিলিমিটেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা আগেও উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে বলছে, এটি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল রাজ্যগুলোর সঙ্গে বৈষম্য করবে। তবে, বাংলাপক্ষর এই বই ২০২৯-এর নির্বাচনী সমীকরণে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।