ফিরহাদের পদত্যাগ চেয়ে বেহালার স্কুল পড়ুয়াদের প্রতিবাদ

বেহালা এলাকায় স্কুল পড়ুয়াদের একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ মিছিল গতকাল শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে (Firhad Hakim)। এই প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বেহালার…

Firhad Hakim protest

বেহালা এলাকায় স্কুল পড়ুয়াদের একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ মিছিল গতকাল শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে (Firhad Hakim)। এই প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বেহালার বিভিন্ন স্কুলের সামনের রাস্তার বেহাল অবস্থা। স্কুলছাত্রছাত্রীরা, অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা একযোগে রাস্তায় নেমে কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) নেতৃত্বাধীন কলকাতা পৌরসভা শহরের মৌলিক নাগরিক পরিষেবা প্রদানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “যদি ফিরহাদ হাকিমের মধ্যে সামান্যতম লজ্জার অনুভূতি থাকত, তাহলে তিনি এখনই পদত্যাগ করতেন।”

   

বেহালার রাস্তাগুলির দুরবস্থা দীর্ঘদিনের সমস্যা। স্কুলের সামনের রাস্তাগুলিতে গর্ত, জল জমে থাকা এবং ভাঙাচোরা ফুটপাতের কারণে পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সমস্যা আরও তীব্র হয়। ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন, রাস্তার এই দুরবস্থার কারণে তাঁদের নিয়মিত স্কুলে যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, পৌরসভার উদাসীনতার কারণে তাঁদের সন্তানদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। একজন অভিভাবক বলেন, “আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার পথে প্রতিদিন ভয়ে থাকতে হয়। রাস্তার এই অবস্থা কোনও উন্নত শহরের জন্য মানানসই নয়।”প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে স্লোগান দিয়েছে, যেখানে তারা ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে।

তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “রাস্তা ঠিক করো, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দাও!” এবং “ফিরহাদ হাকিম, পদত্যাগ করো!” এই প্রতিবাদে শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নয়, স্থানীয় শিক্ষক এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও অংশ নিয়েছেন। একজন প্রতিবাদী ছাত্রী বলেন, “আমরা প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তায় হোঁচট খাই। বর্ষায় জল জমে থাকে, আর শুকনো সময়ে ধুলোর জন্য শ্বাস নেওয়া কঠিন। এটা কি একটা আধুনিক শহরের চিত্র হতে পারে?”

ফিরহাদ হাকিম, যিনি ২০১৮ সাল থেকে কলকাতার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি এর আগেও একাধিকবার বিতর্কের মুখে পড়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে কলকাতা পৌরসভার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে হকার সমস্যা, জল জমার সমস্যা, এবং বেআইনি নির্মাণের অনুমোদন।

বেহালার এই প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, পৌরসভার উদাসীনতা এবং দুর্নীতির কারণেই শহরের অবকাঠামোর এই দুরবস্থা। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “ফিরহাদ হাকিম বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। আমাদের রাস্তা ঠিক করার জন্য টাকা দেওয়া হয়, কিন্তু সেই টাকা কোথায় যায়, কেউ জানে না।”

Advertisements

বিরোধী দল, বিশেষ করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছে। বিজেপি নেতা সজল ঘোষ সামাজিক মাধ্যমে ফিরহাদ হাকিমকে নিশানা করে বলেছেন, “টিএমসি শহরের মৌলিক নাগরিক পরিষেবা প্রদানে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এই প্রতিবাদ প্রমাণ করে যে জনগণ আর এই অপশাসন সহ্য করবে না।”

বিজেপি নেতারা আরও দাবি করেছেন, কলকাতা পৌরসভার অধীনে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহার হয়নি।অন্যদিকে, ফিরহাদ হাকিম এই প্রতিবাদের বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।

তবে তিনি অতীতে এই ধরনের অভিযোগের জবাবে বলেছেন, পৌরসভা শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে এবং কিছু সমস্যা সমাধানে সময় লাগে। তিনি জল জমার সমস্যা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “নতুন করে বৃষ্টি না হলে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে জল বেরিয়ে যাবে।” কিন্তু বেহালার বাসিন্দাদের দাবি, এই ধরনের প্রতিশ্রুতি শুধুমাত্র কথার কথা, বাস্তবে কোনও উন্নতি হয়নি।

চুক্তি জটেই স্থগিত ISL, ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ ছেত্রী

এই প্রতিবাদ শুধু বেহালার সমস্যার প্রতিফলন নয়, বরং কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার দুরবস্থা এবং পৌরসভার অদক্ষতার বিরুদ্ধে জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের প্রকাশ। সামাজিক মাধ্যমে এই প্রতিবাদ ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, এবং অনেকে এটাকে একটি জনআন্দোলনের সূচনা হিসেবে দেখছেন।

একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “আজ ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছে, কাল হয়তো পুরো শহর জেগে উঠবে। এই অবস্থা আর চলতে পারে না।”এই ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়ছে। ফিরহাদ হাকিম এবং তাঁর দল এই অভিযোগের জবাবে কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। বেহালার পড়ুয়াদের এই প্রতিবাদ কলকাতার নাগরিকদের মধ্যে একটি নতুন জাগরণের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।