বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজন (Amazon India) বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, তারা ২০২৫ সালে ভারতের সর্বভারতীয় অপারেশন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ও উন্নয়নে ২,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করবে। এই বড় অঙ্কের বিনিয়োগ সংস্থার পরিকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন অগ্রগতি, কর্মী ও সহযোগীদের কল্যাণে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই জানিয়েছে কোম্পানি।
ভারতের ক্রমবর্ধমান ই-কমার্স বাজারে অ্যামাজনের কৌশলগত অগ্রগতি:
ভারতে ই-কমার্স ক্ষেত্র ক্রমেই দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাশ্রয়ী স্মার্টফোন, দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির খরচক্ষমতা—সব মিলিয়ে দেশজুড়ে অনলাইন কেনাকাটার চাহিদা বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে অ্যামাজনের এই বিনিয়োগ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে ধরা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই নতুন অর্থনৈতিক অনুপ্রবাহ তাদের পূর্ববর্তী বিনিয়োগগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যার মাধ্যমে তারা ভারতের প্রতিটি সার্ভিসেবল পিন-কোডে ডেলিভারি পরিষেবা চালু করেছে।
নতুন ফ্যাসিলিটি, আরও উন্নত প্রযুক্তি ও দ্রুত পরিষেবা:
অ্যামাজন এই অর্থ দিয়ে দেশে আরও নতুন সাইট চালু করবে এবং বিদ্যমান ফ্যাসিলিটি যেমন ফুলফিলমেন্ট সেন্টার (স্মার্ট গুদামঘর), সোর্টেশন সেন্টার এবং ডেলিভারি স্টেশনগুলিকে উন্নত করবে। এর ফলে পণ্য প্রসেসিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, দ্রুত ডেলিভারির গতি অর্জিত হবে এবং গোটা অপারেশন নেটওয়ার্কে দক্ষতা আরও বাড়বে।
পরিবেশবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকাঠামো উন্নয়ন:
অ্যামাজনের দাবি, তাদের নতুন ও পুরনো বিল্ডিংগুলিতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যাতে বিদ্যুৎ খরচ কম হয় এবং কাজের পরিবেশ আরও সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। গুদামঘরগুলিতে শীতলীকরণ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিশ্রাম কক্ষ—সবকিছুতে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও, শারীরিকভাবে অক্ষম কর্মীদের জন্য আরও সহজ প্রবেশযোগ্যতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ডেলিভারি পার্টনারদের জন্য সুরক্ষা ও কল্যাণমুখী পদক্ষেপ:
ডেলিভারি অ্যাসোসিয়েট ও পার্টনারদের জন্য সুরক্ষা ও কল্যাণমূলক প্রকল্পেও অ্যামাজন গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় অতিরিক্ত গতি সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিচ্ছে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।
অ্যামাজনের ড্রাইভার অ্যাপ আরও উন্নত করা হয়েছে যাতে রুট জটিলতা মাপা যায়, রুট বিতরণ আরও ন্যায্য হয় এবং প্রতিটি ডেলিভারির জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ হয়। অ্যাপটি এখন আরও স্বয়ংনির্ভর, যেখানে ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে পণ্য যাচাই সহজ হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও আর্থিক কল্যাণে নজর:
অ্যামাজনের দুই প্রধান কর্মসূচি—‘আশ্রয়’ এবং ‘সমৃদ্ধি’—এই বিনিয়োগে নতুন গতি পাবে। ‘আশ্রয়’ কর্মসূচির মাধ্যমে অ্যামাজন এমন বিশ্রাম কেন্দ্র তৈরি করছে যেখানে ডেলিভারি অ্যাসোসিয়েটরা (অ্যামাজনের বাইরেররাও) বসতে, জল খেতে, মোবাইল চার্জ করতে ও শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন।
অন্যদিকে, ‘সমৃদ্ধি’ কর্মসূচির মাধ্যমে সহযোগীদের জন্য ব্যক্তিগত আর্থিক শিক্ষা, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও মজবুত করতে পারেন।
৮০,০০০ ডেলিভারি অ্যাসোসিয়েটের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
অ্যামাজন সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় উদ্যোগ শুরু করেছে যার মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০,০০০-রও বেশি ডেলিভারি অ্যাসোসিয়েট এবং পার্টনারদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে এই পরিষেবা দেওয়া হবে, যা কর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ।
অ্যামাজনের প্রতিশ্রুতি ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি:
অ্যামাজনের অপারেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভারত ও অস্ট্রেলিয়া) অভিনব সিং বলেন, “আমাদের ফুলফিলমেন্ট, সোর্টেশন এবং ডেলিভারি নেটওয়ার্কে লাগাতার বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিকাঠামো আরও মজবুত করছি। এর ফলে আমরা শুধু গ্রাহকদের আরও ভালো পরিষেবা দিতে পারব না, বরং আমাদের কর্মী ও সহযোগীদের জীবনমানও উন্নত করতে পারব।”
সিং আরও বলেন, “অ্যামাজন বিশ্বাস করে যে কর্মী, সহযোগী এবং প্রযুক্তির সম্মিলনে আগামী দিনের ভারতীয় ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।”
ভারতে ই-কমার্স শিল্পের বিকাশকে সামনে রেখে অ্যামাজনের ২,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ শুধু একটি ব্যবসায়িক কৌশল নয়, বরং এটি কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি উন্নয়ন, এবং দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামো গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই পদক্ষেপ ভারতের অর্থনীতি ও গ্রাহক অভিজ্ঞতা—উভয় ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।