মঙ্গলবার আফগানিস্তানের হিন্দু কুশ পর্বতমালায় ভোরের দিকে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প (Afghanistan earthquake) অনুভূত হয়েছে। ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্র (EMSC) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎসস্থল ছিল প্রায় ২৪৪ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের উৎপত্তি গভীর হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও রাজধানী কাবুলে এবং আশপাশের বিভিন্ন প্রদেশে প্রবল কম্পন অনুভূত হয়েছে।
রইটার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুলে অনেক বাসিন্দা হঠাৎ ঝাঁকুনি অনুভব করে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, “মাটির নিচে থেকে তীব্র কম্পন হচ্ছিল, জানালা ও দরজা কাঁপছিল।” যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি বা বড় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবুও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়।
হিন্দু কুশ অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে বহু আগেই পরিচিত। ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে এই অঞ্চলে প্রায়ই মাঝারি থেকে প্রবল মাত্রার ভূমিকম্প ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের কেন্দ্র এত গভীরে হওয়ায় তীব্র কম্পন অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, যদিও এতে পৃষ্ঠতলের ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়।
গত কয়েক বছরে আফগানিস্তানে ঘন ঘন ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিম আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তার তুলনায় এবারের ভূমিকম্প কম শক্তিশালী হলেও রাজধানী কাবুল পর্যন্ত কম্পন পৌঁছে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। উদ্ধারকর্মীরা সতর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ভূতত্ত্ববিদদের মতে, হিন্দু কুশ পর্বতমালা পৃথিবীর গভীর উৎসের ভূমিকম্পের জন্য কুখ্যাত। এই অঞ্চলে উৎপন্ন অধিকাংশ ভূমিকম্পের কেন্দ্র ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থান করে, যা শক্তিশালী হলেও পৃষ্ঠে তেমন ক্ষতি ঘটায় না। তবে কম্পনের বিস্তার অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছায়, যার ফলেই কাবুল ও আশেপাশের প্রদেশগুলোতে প্রবলভাবে তা অনুভূত হয়।
আফগান আবহাওয়া ও ভূকম্পন দপ্তর নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং জানিয়েছে যে এটি পরবর্তী কোনো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেকটোনিক চাপ ক্রমবর্ধমান হওয়ায় আগামী মাসগুলোতেও এই অঞ্চলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প দেখা যেতে পারে।
এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের মানুষ নিরাপদ স্থানে রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নাগরিকদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।