কলকাতা: আবারও ঘনাচ্ছে কালো মেঘ! বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টির (Weather Alert) নতুন সতর্কতা জারি করল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। কলকাতা, হাওড়া-সহ পাঁচটি জেলায় আগামী দু’ঘণ্টায় আছড়ে পড়তে পারে প্রকৃতির তাণ্ডব।
এক রাতের লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত হাঁটু গেড়ে বসেছে উৎসবমুখী শহর কলকাতা। কোথাও রাস্তা ডুবে রয়েছে কোমরজলে, কোথাও প্যান্ডেল ভেঙে পড়েছে, কোথাও আবার দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। জল সরবরাহের অভাব, যানবাহনের ব্যাঘাত ও পরিকাঠামোর ভেঙে পড়া পরিস্থিতি শহরবাসীর দুর্ভোগকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। এরই মাঝে মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে একের পর এক। এই দুর্যোগের পর থেকে শহরবাসী স্বস্তির আশায় ছিলেন। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই নতুন করে আশঙ্কার মেঘ জমছে আকাশে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী দু’ঘণ্টার মধ্যেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা (Yellow Alert)। বজ্রপাতসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দমকা হাওয়ার গতিবেগ পৌঁছতে পারে ঘন্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
আবহাওয়া দফতর স্পষ্টভাবে সতর্ক করে বলেছে, বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সময় অপ্রয়োজনীয় বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। খোলা জায়গায় না যাওয়া, বড় গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটির নীচে আশ্রয় না নেওয়া এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবহাওয়ার এই অস্থিরতা কমপক্ষে আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উপকূলবর্তী এবং দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বজ্রঝড় ও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা ও হাওড়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এই সতর্কতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে কলকাতার বিভিন্ন এলাকা এখনও পর্যন্ত জলমগ্ন। বেলেঘাটা, গড়ফা, গড়িয়া, কালীঘাট, টালিগঞ্জ, একবালপুর—এইসব এলাকায় কোমর অবধি জল জমে রয়েছে। বহু আবাসনে পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
দুর্গাপুজোর ঠিক আগে এই পরিস্থিতিতে উৎসবের আনন্দ কার্যত ফিকে হয়ে গিয়েছে। অনেক পুজো প্যান্ডেল জলমগ্ন হওয়ায় উদ্বোধনের তারিখ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে আয়োজকরা। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে প্রশাসনও শহরের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি বাড়িয়েছে।
পুরসভা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা জল সরানোর কাজ শুরু করেছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে নবান্নে, যেখানে জলজট, বিদ্যুৎ সমস্যা বা দুর্ঘটনা সংক্রান্ত খবর সরাসরি জানানো যাবে। নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাড়ির বাইরে অপ্রয়োজনীয় ভাবে না বেরোতে।
এদিকে, আলিপুর আবহাওয়া দফতরের নতুন সতর্কবার্তা অনুযায়ী বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেই সময়ে শহর আবারও অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এক রাতের প্রবল বর্ষণের পর শহর যখন কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার আশায় ছিল, তখনই ফের প্রকৃতির চোখ রাঙানি। নতুন ঝড়-বৃষ্টির হুমকিতে আবারও থমকে যেতে পারে কলকাতার জীবন।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
