শীর্ষ আদালতে মিলল না স্বস্তি, খারিজ বিচারপতি ভার্মার আবেদন

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এবং তদন্ত রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)…

SC Rejects Justice Yashwant Varma's Plea Challenging In-House Probe Panel Over Cash Recovery Case

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এবং তদন্ত রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিল। আদালতের এই রায়ের ফলে বহাল থাকল সেই বিতর্কিত তদন্ত রিপোর্ট, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের বিচারবিভাগে শুরু হয়েছিল জোর বিতর্ক।

গত ২২ মার্চ দিল্লি হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার সরকারি বাসভবনে আচমকা ঘটে অগ্নিকাণ্ড। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও, তদন্তে উঠে আসে বিস্ফোরক তথ্য। অগ্নিদগ্ধ বাড়ির ভিতর থেকে বিপুল পরিমাণে পোড়া টাকা উদ্ধার হয়। সেই টাকা কোথা থেকে এল, কেনই বা সেটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল—তা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়। বিচারপতির সরকারি বাংলোয় এত বড় অঙ্কের নগদ কীভাবে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিভিন্ন মহল।

   

এই ঘটনায় অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। সে সময় দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তিন সদস্যের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেন তিনি। এই কমিটিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের উচ্চপদস্থ বিচারপতি ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা। সেই কমিটি তদন্ত করে একটি রিপোর্ট জমা দেয় সুপ্রিম কোর্টে, যেখানে একাধিক গুরুতর অসঙ্গতির কথা উঠে আসে।

এর কিছুদিন পরেই বিচারপতি যশবন্ত ভার্মার বদলি হয়ে যায় এলাহাবাদ হাই কোর্টে। তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাঁর। তদন্ত রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি ফের আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টে। তিনি অভিযোগ করেন, তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা মানা হয়নি, এবং তাঁর বক্তব্য বা অবস্থান যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়নি। সেই যুক্তিতে তিনি কমিটির রিপোর্ট খারিজের আবেদন জানান।

তবে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তদন্ত কমিটি সুপ্রিম কোর্টের আদেশেই গঠিত হয়েছিল এবং তাদের রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ। সেইসঙ্গে বিচারপতির আবেদন খারিজ করে আদালত জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্তের ভিত্তিতে যেহেতু গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে, তাই রিপোর্ট খারিজের মতো কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।

Advertisements

সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) এই রায়ের পর ফের একবার চাপে পড়লেন বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা। যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনও বিবৃতি দেননি এই বিষয়ে। তবে আইনজীবী মহলের একাংশ মনে করছে, বিষয়টি এখানেই থেমে থাকবে না। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা প্রশাসন এই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে পারে।

এই ঘটনা দেশের বিচারব্যবস্থায় এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিচারপতির বাংলোয় নগদ টাকা, তাতে আগুন, এবং সেই ঘটনার জেরে তদন্ত—এ সবই বিচারব্যবস্থার নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিচারপতি ভার্মার আর্জি খারিজ হওয়ায় সেই বিতর্ক আরও একধাপ এগোল। এখন দেখার, এর পরবর্তী ধাপে কী পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন বা আদালত।

একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে এই ধরনের তদন্ত এবং তাতে উঠে আসা প্রমাণ ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে বিরল। ফলে, এই ঘটনা শুধু যশবন্ত ভার্মাকে ঘিরে নয়, গোটা বিচার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার দিকেও বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।