প্রয়াত অসমের কণ্ঠ জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গ

অসমের কণ্ঠ, অসমিয়ার প্রাণ শিল্পী জুবিন গার্গ আর নেই। সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু বিখ্যাত গায়ক জুবিনের (Zubeen Garg)। জুবিন প্রধানত অসমীয়া গায়ক…

Jubin Garg passes away

অসমের কণ্ঠ, অসমিয়ার প্রাণ শিল্পী জুবিন গার্গ আর নেই। সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু বিখ্যাত গায়ক জুবিনের (Zubeen Garg)। জুবিন প্রধানত অসমীয়া গায়ক হলেও বাংলা এবং হিন্দিতে প্রচুর জনপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন জুবিন। সেখানেই স্কুবা ডাইভিং করতে সমুদ্রে নেমেছিলেন। গভীর সমুদ্রে হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। তরিঘরি সিঙ্গাপুর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন এবং পরে চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যু ঘোষণা করেন। সিঙ্গাপুর সরকার এই খবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। ভারত সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পবিত্র মার্ঘেরিটা নিশ্চিত করেছেন যে মরদেহ দ্রুত অসমে ফিরিয়ে আনার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

   

তিনি নিজে এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। মরদেহের সঙ্গে নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত থাকা অন্যান্য শিল্পী ও প্রতিনিধিদেরও দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গেও এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।জানা গিয়েছে মর্মান্তিক এই খবরে সিঙ্গাপুরে রওনা হয়ে গিয়েছেন জুবিনের স্ত্রী।

সিঙ্গাপুরে একটি সংগীতানুষ্ঠানে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন জুবিন। আজ সন্ধ্যায় তার শো ছিল। কিন্তু আচমকা এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ভারতের এক অভিনব কণ্ঠের অধিকারী এই গায়ককে। এই মর্মান্তিক খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসমসহ সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। গানের জাদুতে যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করেছিলেন, তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজার হাজার ভক্ত শোকবার্তা জানাচ্ছেন এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। 

১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর গুয়াহাটীতে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন গার্গ। তাঁর বাবা প্রফুল্ল গার্গ এবং মা ইলাবতী গার্গ দুজনেই সংস্কৃতিমনস্ক পরিবার থেকে আসা মানুষ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ জন্মায়। খুব অল্প বয়সেই তিনি হারমোনিয়াম, গিটার এবং বাঁশি বাজাতে শিখে ফেলেন। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় প্রকাশিত আনামিকা অ্যালবামই তাঁকে রাতারাতি জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করে।

Advertisements

এরপরে একের পর এক অ্যালবাম, চলচ্চিত্রের গান ও মঞ্চ পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি শুধু অসম নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের যুবসমাজের কাছে এক অদম্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। অভিজিত, স্নেহবন্ধন, মায়াবিনী– এসব অ্যালবামের গান আজও সমান জনপ্রিয়। অসমীয়া গানের জগতে অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে তিনি বাংলা ও হিন্দি গানেও অসংখ্য শ্রোতার মন জয় করেন। বলিউডে তাঁর “ইয়া আলী” (গ্যাংস্টার ছবির গান) কিংবা “ক ক ক কিরণ”–এর মতো গান তাঁকে সর্বভারতীয় পরিচিতি এনে দেয়। একদিকে আঞ্চলিক গানের মাটির গন্ধ, অন্যদিকে আধুনিকতার ছোঁয়া—এই দুইয়ের মিশ্রণই তাঁকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে।

জুবিন শুধু কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই নন, একজন সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও সমানভাবে প্রশংসিত ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি অসমীয়া চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর কণ্ঠ ও সুরে সজ্জিত অসংখ্য চলচ্চিত্র আজও দর্শক-শ্রোতাদের মনে বেঁচে আছে। তাঁর শিল্পীসত্তা ছিল বহুমাত্রিক। গান দিয়ে যেমন ভক্তদের হৃদয় জয় করেছেন, তেমনি সামাজিক দায়িত্ব পালনেও তিনি পিছপা হননি। পরিবেশ সংরক্ষণ, শিক্ষা বিস্তার, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক সম্প্রীতি—এমন নানা বিষয়ে তিনি গানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

অসম তথা সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের সাংস্কৃতিক আকাশে জুবিন গার্গ ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর গান, তাঁর সুর, তাঁর কণ্ঠ শুধু বিনোদনই দেয়নি, বরং মানুষের মননে আশা, ভালোবাসা ও প্রেরণার জন্ম দিয়েছে। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া অসমকে এক গভীর শূন্যতায় ফেলে দিল। তবুও তাঁর গান, তাঁর সুর এবং তাঁর শিল্পসত্তা চিরকাল অম্লান থাকবে। আজ সমগ্র অসম কাঁদছে তার প্রিয় কণ্ঠকে হারিয়ে, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একটাই কথা—জুবিন গার্গ নেই, তবু তাঁর গান আমাদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবে।