নেপালে বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১২, চলছে উদ্ধারকার্য

সম্প্রতি নেপালে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি (Nepal Flood) হয়েছে। এই দুর্যোগের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২, এবং ৬৮…

NEPALFLOOD123 নেপালে বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১২, চলছে উদ্ধারকার্য

সম্প্রতি নেপালে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি (Nepal Flood) হয়েছে। এই দুর্যোগের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২, এবং ৬৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কাঠমান্ডু উপত্যকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এবং সেই অঞ্চলে নেপাল সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ফোর্স ও নেপাল পুলিশ এখনও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

এপিএফ এবং নেপাল পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে কভ্রেপালাঞ্চৌক থেকে ৩৪ জন, লালিতপুর থেকে ২০ জন, ধাদিং থেকে ১৫ জন, কাঠমান্ডু থেকে ১২ জন, মাকওানপুর থেকে ৭ জন, সিন্ধুপালচৌক থেকে ৪ জন, ডোলাখা থেকে ৩ জন এবং পঞ্চথর ও ভক্তপুর থেকে ৫ জন করে ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ধনকুট ও সোলুখুম্বু থেকে ২ জন করে এবং রামচাপ, মহোত্তর ও সুনসারি থেকে ১ জন করে ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

   

এই আবহে নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামেশ লেকহক জানিয়েছেন, “বৃষ্টির ফলে কাঠমান্ডু উপত্যকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং নেপাল সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ফোর্স ও নেপাল পুলিশ সারাদেশে উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে দুর্যোগ কমান্ড পোস্টের একটি সভারও আয়োজন করা হয়েছিল। দেশের সর্বত্র মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।”

শনিবার অর্থাৎ গতকাল (২৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত, কাঠমান্ডুতে বিগত ৫৪ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী নজিরবিহীন ৩২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই বঙ্গোপসাগরে জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে এবং তার ফলে ওই অঞ্চলে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির কবলে পড়েছে নেপাল।

ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিআরআরএমএ) ইতিমধ্যেই ৭৭টি জেলার মধ্যে ৫৬টিতে সম্ভাব্য দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে এবং জনগণকে নিরাপদ স্থানে থাকার ও সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।

নেপালে, বিশ্বের দশটি উচ্চতম শৃঙ্গের মধ্যে নয়টি শৃঙ্গ অবস্থিত। সূত্রের খবর, এই বছর নেপালে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাভাবিক গড়ের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে ১৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এনডিআরআরএমএ অনুমান করছে, যদি এই আবহাওয়ার উন্নতি না হয় তবে নেপালের ৪১২ হাজার পরিবার এই দুর্যোগের কবলে পড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, মৌসুমি বৃষ্টি সাধারণত জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে শেষ হয়। কিন্তু আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরের এই বৃষ্টি অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত চলতে পারে। এই বছর নেপালে এই মৌসুমি আবহাওয়ার সূত্রপাত ১৪ জুন থেকে হয়েছিল।

নেপালের মোট বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি সময়কালেই হয়। সাধারণত এই আবহাওয়া ১০৫ দিন ধরে স্থায়ী হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই আবহাওয়া বিদায় নিতে আরও বেশি সময় নিচ্ছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১০ জুন থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নেপালে ১,৫৮৬.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি।