যাদবপুর (jadavpur) বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক তরজা আগেই সবার নজরে এসেছিল, এবার যোগ হল ধর্মীয় ভেদাভেদের রাজনীতি যা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাঞ্ছনীয় নয়। রাম নবমীর পবিত্র দিনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (JU) উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাম নবমী উৎসব পালনের জন্য ছাত্রদের অনুমতি দিতে অস্বীকার করলেও, একদল ছাত্র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্যেই পুজোর আয়োজন করেছে। এই ঘটনা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে তীব্র বিতর্ক ও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
RSS এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপি আগেই জানিয়েছিল তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাম নবমীর পুজো করবে।ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার নেতৃত্বে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের জন্য পালিত হল রাম নবমী, তাও আবার কোনো অনুমতি ছাড়াই ।
<https://www.facebook.com/watch/?v=565835962680430″>
গত ২৮ মার্চ, বিশ্ববিদ্যালয়ের (jadavpur) একদল ছাত্র, যারা নিজেদের ‘হিন্দু স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’-এর সদস্য বলে দাবি করেছেন, রাম নবমী উদযাপনের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে, শনিবার তাদের হাতে একটি লিখিত জবাব আসে, যাতে বলা হয়, উপাচার্যের অনুপস্থিতির কারণে এই অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।
ভারতের প্রযুক্তি খাতে উন্নতি! স্টার্টআপ নিয়ে পীযূষ গোয়ালের নতুন ঘোষণা
ক্যাম্পাসে উত্তেজনা (jadavpur)
এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা শুরু হয়। ছাত্র সোমসূর্য বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি এই আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা, বলেন, “আমরা গত ২৮ মার্চ চিঠি জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হল, উপাচার্য না থাকায় অনুমতি দেওয়া যাবে না। এটা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য।”
এই ঘটনা আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন আয়োজকরা অভিযোগ করেন যে, কয়েকদিন আগে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টির জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু রাম নবমীর জন্য একই সুযোগ দেওয়া হল না। সোমসূর্য বলেন, “ইফতার পার্টি ক্যাম্পাসে হতে পারে, কিন্তু রাম নবমী কেন নয়? আমরা এবার পিছু হটব না।” তিনি জানান, এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা শান্তিপূর্ণভাবে পুজোর আয়োজন করবেন।
রবিবার সকালে ক্যাম্পাসের একটি খোলা জায়গায় ছাত্ররা পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে
অনুমতি না মিললেও, রবিবার সকালে ক্যাম্পাসের (jadavpur) একটি খোলা জায়গায় ছাত্ররা পুজোর প্রস্তুতি শুরু করে। তারা লাল কাপড়ে মোড়া একটি ছোট মঞ্চ তৈরি করে ভগবান রাম, সীতা, লক্ষ্মণ ও হনুমানের মূর্তি স্থাপন করেন। ধূপ, দীপ, ফুল ও প্রসাদ নিয়ে শ্রী রামের পুজো শুরু হয়। ছাত্রদের একাংশ ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিয়ে এই উৎসব পালন করে। তবে, এই আয়োজনের বিরোধিতা করে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এসএফআই)। এসএফআই-এর এক সদস্য বলেন, “এবিভিপি এই অনুষ্ঠানের পিছনে রয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে এই ধরনের ধর্মীয় আয়োজন মেনে নেব না।”
এই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। যেখানে একদল ছাত্র দাবি করছেন যে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার তাদের রয়েছে, সেখানে বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসএফআই-এর সদস্যরা আরও বলেন, “ক্যাম্পাসকে ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষেত্র বানানোর চেষ্টা চলছে। আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাব।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষর বিবৃতি
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বিবৃতি দেয়নি। তবে, সূত্রের খবর, প্রশাসন শান্তি বজায় রাখতে পুলিশের সাহায্য নিতে পারে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অংশে রাম নবমী উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “সকলকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে চলতে হবে।” তবে, জেইউ-এর ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় আয়োজন নিয়ে স্পষ্ট নীতি প্রয়োজন। একজন শিক্ষাবিদ বলেন, “ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ নিয়ম থাকা উচিত।” অন্যদিকে, ছাত্রদের একাংশের দাবি, তাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা হোক। রাম নবমীর এই দিনে যখন গোটা দেশ ভক্তিতে মগ্ন, তখন জেইউ-এর ঘটনা একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনুমতি না মিললেও পুজোর আয়োজন করে ছাত্ররা তাদের দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তবে, এই ঘটনা ক্যাম্পাসে শান্তি ও সম্প্রীতির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।