নয়াদিল্লি, ৪ অক্টোবর ২০২৫: ভারতের শিক্ষা মন্ত্রক সরকারি কাজে একটি বড় ডিজিটাল পরিবর্তনের পথে হাঁটছে। সম্প্রতি উচ্চশিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে জারি করা একটি সার্কুলারে জানানো হয়েছে যে, এখন থেকে সরকারি নথি তৈরি, সম্পাদনা এবং শেয়ার করার জন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে Zoho Office Suite ব্যবহার করতে হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছেন কেন্দ্রের শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। সম্প্রতি তিনি Zoho-র মেসেজিং অ্যাপ ‘আরাত্তারি’-এর প্রশংসা করেন এবং জানান, দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন আরও বাস্তবায়িত করা সম্ভব। মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত সুবিধার জন্য নয়, বরং বিদেশি সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে।
কীভাবে কাজ করবে Zoho?
নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, Zoho-তে সরকারি নথি, স্প্রেডশিট এবং প্রেজেন্টেশন তৈরি করা যাবে। শুধু তাই নয়, টিমওয়ার্ক ও অফিসিয়াল আলোচনার জন্যও Zoho-র কোলাবোরেশন টুলস ব্যবহার করতে হবে। ইতিমধ্যেই এই স্যুইটটিকে NIC মেল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, ফলে আলাদা লগইন বা ইনস্টলেশনের ঝামেলা ছাড়াই এটি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
কী বলছে মন্ত্রক?
শিক্ষামন্ত্রকের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সাহসী পদক্ষেপ। এতে সরকারি কাজকর্ম আরও সুশৃঙ্খল হবে, ফাইল শেয়ারিং ও টিমওয়ার্ক সহজ হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা, ডেটা সুরক্ষা আরও শক্তিশালী হবে।”
অন্যদিকে, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক থেকেও এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কয়েক মাস আগেই কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন যে তিনি নিজেও অফিসিয়াল কাজের জন্য Zoho ব্যবহার করছেন।
আত্মনির্ভর ভারতের পথে বড় পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এই উদ্যোগ শুধু একটি সফটওয়্যার ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—ভারত এখন নিজের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে চায়। বিদেশি সফটওয়্যারের পরিবর্তে দেশীয় অ্যাপ ও টুলস ব্যবহারের এই প্রবণতা ভবিষ্যতে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের নিজস্ব ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখবে।
সামাজিক মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ প্রশংসা করছেন যে, ভারতের একটি কোম্পানি এখন সরাসরি সরকারি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র বড় সফলতা। অন্যদিকে, কিছু ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন—Zoho কি আন্তর্জাতিক মানের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা দিতে পারবে?
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
সরকারি মহল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, শুধু শিক্ষা নয়, অন্যান্য মন্ত্রকেও ধীরে ধীরে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হবে। এর ফলে একদিকে যেমন সরকারের খরচ কমবে, তেমনি ডেটা সুরক্ষা ও স্বচ্ছতাও বাড়বে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, Zoho Office Suite-কে সরকারি কাজে অন্তর্ভুক্ত করা শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি ভারতের ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের দিকে এক বড় পদক্ষেপ। আগামী দিনে এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হয়, তার ওপর নির্ভর করছে সরকারের ডিজিটাল আত্মনির্ভরতার স্বপ্ন কত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে।