বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের (Bangladesh infiltration) বিরুদ্ধে অভিযানে ফের উত্তেজনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, অসম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে এক সন্দেহভাজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর নাম বলতে গিয়ে বলে ফেলছেন— “হাসিনা বেগম”। এই উত্তর শোনার পরই তাঁকে ঘিরে আরও বাড়ে সন্দেহ। কারণ, অসমের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা—এ কথা রাজ্যের সাধারণ মানুষ যেমন জানেন, এমনকি বহু বাইরের রাজ্যের মানুষও জানেন। ফলে স্থানীয় রাজনীতির ন্যূনতম ধারণা না থাকায় পুলিশের ধারণা আরও জোরালো হয়েছে যে ওই মহিলা সম্ভবত সদ্য সীমান্ত পেরিয়ে আসা এক বাংলাদেশি নাগরিক।
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল
অসম পুলিশের সূত্র অনুযায়ী, ধুবরি-গোলপাড়া সীমান্ত অঞ্চলে নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে। সেই অভিযানের অংশ হিসেবেই একটি সন্দেহভাজন দলের ওপর নজর পড়ে পুলিশকর্মীদের। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ হন দলটির এক মহিলা সদস্য। তাঁর কাছ থেকে ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা কোনও ভারতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ তাঁকে আলাদা করে মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
সেখানেই আসে বিতর্কিত উত্তরটি। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়—“অসমের মুখ্যমন্ত্রী কে?”—মহিলার উত্তর, “হাসিনা বেগম।” পুলিশকর্মীরা মুহূর্তে অবাক হয়ে তাঁকে আরেকবার প্রশ্ন করেন। এবারও প্রায় একই উত্তর দেন তিনি। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, এই ভুলটি কোনও সাধারণ বিভ্রান্তি নয়; বরং ইঙ্গিত করে যে তিনি হয়তো এখনো পর্যন্ত ভারতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন, যা সাম্প্রতিক অনুপ্রবেশের সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করছে।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নাম কেন এল?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বহুল পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা—যিনি ২০২৪–২৫ সালের অস্থিরতার পরে ক্ষমতাচ্যুত হন—তাঁর নাম ‘হাসিনা বেগম’ বলে অনেক সাধারণ মানুষ উচ্চারণ করে থাকেন। পুলিশের মতে, ওই মহিলা সম্ভবত বাংলাদেশি রাজনৈতিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে পরিচিত, কিন্তু ভারতীয় ভূরাজনীতি সম্পর্কে অসচেতন। এই অসামঞ্জস্যই তদন্তের মূল সূত্র হয়ে উঠেছে।
অসমে ২০২৫–এর বিশেষ অভিযানের প্রেক্ষাপট
গত নভেম্বর থেকে অসমে ‘সন্দেহভাজন বিদেশি শনাক্তকরণ অভিযান’ তীব্র হয়েছে। অসম পুলিশের কর্মকর্তাদের দাবি, সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি সমন্বিত অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই ২০০–র বেশি অনুপ্রবেশকারীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০২৫ সালে বিদেশি ট্রাইব্যুনালের কাজও দ্রুততর করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের বক্তব্য—অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ না করলে জনসংখ্যাগত ভারসাম্য, শ্রমবাজার এবং নিরাপত্তা—তিনটি ক্ষেত্রেই বড় প্রভাব পড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তেজনা ও বিতর্ক
এই ভিডিওটি সামনে আসতেই X–এ নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ কড়া ভাষায় অনুপ্রবেশ বিরোধী পদক্ষেপ দাবি করেছেন, অন্যদিকে অনেকেই সতর্ক করেছেন যাতে জনরোষ বা বিভ্রান্তিমূলক প্রচার আরও বাড়িয়ে না দেওয়া হয়। কিছু পোস্টে দেখা গিয়েছে আঞ্চলিক ঘৃণাভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
Assam Police detained a Bangladeshi Mulli!
When they asked who the Chief Minister of Assam is!
Mulli replied with ” Hasina Begum “😭
She’s now under arrest and will be kicked back to Bangladesh with her little Kanglus and Mullah husband pic.twitter.com/3Cpj87TecM
— Bloody Media (@bloody_media) December 5, 2025
গবেষকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন—অসম–বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে থাকা অর্থনৈতিক বৈষম্য, নদীভাঙন, চোরাচালান–নির্ভর অর্থনীতি এবং সীমান্তের দীর্ঘদৈর্ঘ্য—এসব মিলিয়েই অনুপ্রবেশ সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল। ২০২৩ সালে Journal of Migration Affairs–এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, অনুপ্রবেশের প্রবাহ কেবল রাজনৈতিক বিষয় নয়; এর সঙ্গে গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ জড়িত।
পরবর্তী পদক্ষেপ
জানানো হয়েছে, সন্দেহভাজন ওই মহিলাকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পেশ করা হবে। তাঁর জবানবন্দি, মোবাইল তথ্য, সীমান্ত এলাকার লোকজনের সাক্ষ্য, এবং সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক—সব দিকেই তদন্ত চলছে। অসম পুলিশের দাবি, “কোনও নির্দোষকে শাস্তি দেওয়া হবে না, আবার কোনও সন্দেহভাজনকেও ছাড়া হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর নাম বলতে গিয়ে এমন অদ্ভুত ভুল—এটি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন তো তুলেছেই, বরং রাজ্যের সীমান্ত–নিরাপত্তা এবং বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে চলমান বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। প্রশাসন এখন এই ঘটনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘কেস স্টাডি’ হিসাবে দেখছে—যা ভবিষ্যতের জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই প্রক্রিয়াতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
