শালিমার-সম্বলপুর এক্সপ্রেস ফের একবার দুর্ঘটনার মুখে। ওড়িশায় ফের এক রেল দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে সম্বলপুর স্টেশনে ঢোকার আগেই হঠাৎ করেই ট্রেনের একটি জেনারেল কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। মুহূর্তের জন্য থমকে যায় ট্রেন চলাচল। আশঙ্কা ছিল বড়সড় বিপদের। তবে সৌভাগ্যবশত কোনও যাত্রীর প্রাণহানি হয়নি। অল্পবিস্তর চোট ছাড়া বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে সকাল ৮টা নাগাদ। ১৮১٧৫ আপ শালিমার-সম্বলপুর এক্সপ্রেস ওড়িশার ঝাড়সুগুড়া থেকে সম্বলপুরের দিকে আসছিল। ট্রেনটি যখন সম্বলপুর স্টেশন থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে, তখন হঠাৎ জোরে শব্দ হয় এবং ট্রেনের গতি থেমে যায়। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তখনই জানা যায়, ট্রেনের পিছনের একটি জেনারেল বগি লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছে।
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই রেলকর্তারা তৎপর হয়ে ওঠেন। রেল প্রশাসনের তরফে উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে নামিয়ে আনা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন স্থানীয় পুলিশ ও দমকল কর্মীরাও। রেল লাইনচ্যুত বগি সরানোর কাজ শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং টিম।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান, লাইনের কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি বা অতিরিক্ত চাপের ফলেই বগিটি লাইনচ্যুত হয়ে থাকতে পারে। তবে নিখুঁত তদন্তের পরেই আসল কারণ জানা যাবে। এদিকে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে এই ঘটনায়। ওই রুটে কিছু সময়ের জন্য ট্রেন চলাচল স্থগিত রাখা হয়।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীরা আতঙ্কে ছিলেন। এক যাত্রী বলেন, “হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ শুনে আমরা চমকে যাই। মনে হয়েছিল ট্রেন উল্টে যাচ্ছে। জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখি পেছনের একটি বগি রেললাইন থেকে ছিটকে গেছে। তবে রেলকর্মীরা খুব দ্রুত আমাদের সাহায্য করেন।’’
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলে দিল রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়েই একাধিক ট্রেন দুর্ঘটনার খবর সামনে এসেছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে ওড়িশার বালেশ্বরে ভয়াবহ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা। সেই ঘটনাতেই ২০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিলেন শতাধিক। এরপরেও রেল নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
তবে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর জখম হননি। যাত্রীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বিকল্প ট্রেনে তাদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ রেল মন্ত্রকের তরফ থেকেও ঘটনার উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে যাত্রীমহলে। এক যাত্রী বলেন, “প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রেলে ভরসা রাখেন। কিন্তু বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিশ্চিন্তে যাত্রা করব?”
রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও নজরদারি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, ট্র্যাক ও বগির রক্ষণাবেক্ষণ আরও নিয়মিত করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
সৌভাগ্যক্রমে এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটলেও ঘটনা রেলের অব্যবস্থার প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আবারও মনে করিয়ে দিল, কেবল পরিকাঠামো বৃদ্ধি নয়, রেলপথে যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ।