Tag Archives: Landfall

বঙ্গোপসাগরে শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, অন্ধ্র-ওডিশা-বাংলায় রেড অ্যালার্ট

বঙ্গোপসাগরের উপর সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে ‘ঘূর্ণিঝড় মন্থা’-য় পরিণত হয়েছে। ফলে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গে জারি হয়েছে উচ্চ সতর্কতা। তিন রাজ্যেই চলছে প্রশাসনিক প্রস্তুতি, উপকূলজুড়ে মোতায়েন ত্রাণ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

কোথায় অবস্থান

ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (IMD) সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, রবিবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিট নাগাদ ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ-পশ্চিম ও সংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থান করছিল 12.2° উত্তর অক্ষাংশ ও 85.3° পূর্ব দ্রাঘিমায়, অর্থাৎ চেন্নাই থেকে ৫৬০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে, কাকিনাডা থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং বিশাখাপত্তনম থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ১২ ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে আরও শক্তি সঞ্চয় করবে। পরবর্তী সময়ে এটি উত্তর-উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হবে। ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে কাকিনাডা ও কালিঙ্গপত্তনমের মাঝামাঝি এলাকায় ঝড়ের স্থলাভিসার (landfall) ঘটতে পারে, সঙ্গে থাকবে প্রবল বর্ষণ, ঝোড়ো হাওয়া এবং উত্তাল সমুদ্র।

 অন্ধ্রপ্রদেশে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি Cyclone Mantha high alert

অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ইতিমধ্যেই জারি করেছে পূর্ণাঙ্গ ‘সাইক্লোন অ্যাকশন প্ল্যান’। খাদ্যশস্য, জ্বালানি, প্যাডি সংগ্রহ, ও ত্রাণশিবির— সব ক্ষেত্রেই গৃহীত হয়েছে অগ্রিম ব্যবস্থা। রাজ্যের সিভিল সাপ্লাইস মন্ত্রী এন. মনোহর জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ৪০% রেশন মজুত সম্পন্ন হয়েছে; ২৬ অক্টোবরের মধ্যেই ফেয়ার প্রাইস শপে খাদ্য সরবরাহ শেষ হবে।

তেল, ডিজেল, এলপিজি এবং বিদ্যুৎ ব্যাকআপের জন্য জেলাশাসক ও তেল সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পূর্ণ মজুত রাখার। প্রায় ১,৫০০ ধানকল প্রস্তুত রাখা হয়েছে কৃষকদের সুবিধার জন্য। পাশাপাশি, ৫০ হাজারেরও বেশি ত্রিপল, দড়ি ও বালির বস্তা পাঠানো হয়েছে ফসল রক্ষার জন্য।

বিশাখাপত্তনম উপকূলে রিশিকোন্ডা ও সাগরনগর সমুদ্রসৈকত আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটকদের দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

ড. বি.আর. আম্বেদকর কোনাসীমা জেলার জেলাশাসক আর. মহেশ কুমার জানিয়েছেন, প্রায় ৬,০০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার মধ্যেই। স্কুল-কলেজে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ১২০ কিমি গতিবেগের ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা থাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ উপড়ে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছে এনডিআরএফ দল, রাখা হয়েছে ক্রেন, গাছ কাটার যন্ত্র ও বিকল্প বিদ্যুৎ খুঁটি।

 ওডিশায় ব্যাপক সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি

ওডিশা সরকার ইতিমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করেছে জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ। রাজ্যের আটটি দক্ষিণ জেলা — মালকানগিরি, করাপুট, নবরংপুর, রায়গড়া, গজপতি, গঞ্জাম, কন্ধমাল ও কালাহান্ডিতে ১২৮টি বিপর্যয় মোকাবিলা দল মোতায়েন করা হয়েছে।

রাজস্ব ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী সুরেশ পুজারি জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে সমস্ত সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ করা হবে। লক্ষ্য ‘জিরো ক্যাজুয়ালটি’। ২৪টি ওড্রাফ, পাঁচটি এনডিআরএফ ও ৯৯টি ফায়ার সার্ভিস দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রাজ্যের সব বন্দরেই হাওয়া অফিস দিয়েছে “ডিস্ট্যান্ট কশনরি সিগন্যাল নং ১”। জেলেদের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা

পশ্চিমবঙ্গে ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে ভারী বৃষ্টির দফায় দফায় সতর্কতা। যদিও স্থলাভিসার হবে অন্ধ্র উপকূলে, তবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় প্রভাব পড়বে ঝড়ের।

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও হুগলিতে ২৭ অক্টোবর থেকেই শুরু হবে বৃষ্টি। ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে।

উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর ও মালদহে ৩০ ও ৩১ অক্টোবর ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।

সমুদ্র উত্তাল থাকবে, তাই জেলেদের ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ। যারা গভীর সমুদ্রে রয়েছেন, তাঁদের ২৭ অক্টোবরের মধ্যে ফিরে আসতে বলা হয়েছে।

 ‘মন্থা’র নজরদারিতে তিন রাজ্য

আইএমডি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মন্থা এখন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের উপরে ১৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে অগ্রসর হচ্ছে। এটি ২৮ অক্টোবর রাতে স্থলভাগে প্রবেশ করার আগে আরও শক্তিশালী হতে পারে। তিন রাজ্যেরই প্রশাসন জানিয়েছে, উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা, ত্রাণ, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে।

“জনগণ ও মৎস্যজীবীরা এখনই সাবধান হোন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আরও শক্তি সঞ্চয় করবে,” — জানিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকাশ জৈন।

চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’! ল্যান্ডফল কবে? বৃষ্টি কোন কোন জেলায়?

কলকাতা: দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থানরত সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD)-এর সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, শনিবার (২৫ অক্টোবর) ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় নিম্নচাপটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থান করছিল এবং ধীরে ধীরে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকাল অর্থাৎ ২৬ অক্টোবরের মধ্যে এটি একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর ২৭ অক্টোবর সকালে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা তখন দক্ষিণ-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থান করবে।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম মন্থা

আবহবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়টির নাম ‘মন্থা’। এটি যদি বর্তমান গতিপথে অগ্রসর হয়, তবে ২৮ অক্টোবর উপকূলভাগে ল্যান্ডফল করতে পারে। তার প্রভাবে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় ৬০–৮০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে, সমুদ্র উত্তাল থাকবে। মৎস্যজীবীদের আগামী কয়েক দিন সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা Cyclone Montha Landfall Date

ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’-র প্রভাবে ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া এবং ঝাড়গ্রামে প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ২৮ অক্টোবর কলকাতা ও হুগলিতে বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদাতেও ২৯ থেকে ৩০ অক্টোবর ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

ল্যান্ডফল কবে

আগামী ২৮ অক্টোবর ল্যান্ডফল করতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’। যার প্রভাবে ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশে ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোন অংশে আছড়ে পড়বে মন্থা তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ 

প্রশাসনের সতর্কতা

সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। উদ্ধার ও ত্রাণবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আবহবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ যদি দিক না বদলায়, তবে বঙ্গোপসাগরের আবহমান ইতিহাসে এটি হতে পারে চলতি মৌসুমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘূর্ণিঝড়।

বিকেলেই ধাক্কা, নিম্নচাপ এগোচ্ছে স্থলভাগের দিকে! দিঘা থেকে ঠিক কতটা দূরে?

উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলেই আছড়ে পড়তে চলেছে স্থলভাগে। সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী উপকূল ধরে ঢুকে পড়বে এ রাজ্যে। আর তার জেরেই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ—দুই প্রান্তেই শুরু হবে টানা ঝড়-বৃষ্টি। ইতিমধ্যে একাধিক জেলায় জারি হয়েছে সতর্কতা, কোথাও লাল।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের মতে, বৃহস্পতিবার সকালে নিম্নচাপটি অবস্থান করছিল সাগরদ্বীপ থেকে ১০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে। ধীরে ধীরে সেটি উত্তর দিকে এগোচ্ছে এবং বিকেল নাগাদ তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে প্রবেশ করবে উপকূলে।

 দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি-ঝড়ের প্রস্তুতি

কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ—সব ক’টি জেলাতেই বৃহস্পতিবার থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। কলকাতাতেই ১২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা।
শুক্রবারও বৃষ্টির দাপট চলবে, তার পরে ধীরে ধীরে স্বস্তির সম্ভাবনা।

 উত্তরে রেড অ্যালার্ট, টানা বৃষ্টির শঙ্কা Deep Depression Bengal Landfall

উত্তরবঙ্গেও পাল্লা দিয়ে নামবে বৃষ্টি। শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। প্রবল বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও কোচবিহারে। রবিবার পর্যন্ত অতি ভারী বৃষ্টি চলবে সেখানে। ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিমি পর্যন্ত।

 সমুদ্র উত্তাল, উপকূলে নিষেধাজ্ঞা

বঙ্গোপসাগরে ইতিমধ্যেই উত্তাল পরিস্থিতি। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে বইবে ঘণ্টায় ৪৫–৬৫ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া। তাই ৩০ মে পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

বর্ষা আসবে এই নিম্নচাপেই?

কেরলে বর্ষা ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এখনও আনুষ্ঠানিক বর্ষা প্রবেশ করেনি। আবহাওয়াবিদদের ধারণা, এই নিম্নচাপ যদি আরও শক্তিশালী হয়, তবে বঙ্গে বর্ষার আগমন আর খুব বেশি দেরি নেই।

এদিকে কলকাতার তাপমাত্রাও ইঙ্গিত দিচ্ছে বদলে যাওয়া আবহাওয়ার। বৃহস্পতিবার শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৪ ডিগ্রি কম। বুধবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও নেমে এসেছে ৩১.৪ ডিগ্রিতে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪ ডিগ্রি কম।

 West Bengal: Heavy rain & thunderstorms lash Bengal as a deep depression makes landfall between Sagar Island & Khepupara. IMD issues red alerts for North Bengal. Kolkata, Howrah, 24 Parganas, & other districts brace for severe weather. Get the latest forecast & safety tips.

দানব গতিতে এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় দানার ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু

ভারতের পূর্ব উপকূলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা (Cyclone Dana) দুর্বার গতিতে এগিয়ে আসছে। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের (IMD) কর্মকর্তাদের মতে, দানা আজ ভোরের মধ্যে আছড়ে পড়বে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ১২০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এটি ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং শহরে প্রস্তুতি চলছে, যাতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া
অবশেষে ঘূর্ণিঝড় দানা ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু করেছে। IMD জানিয়েছে, এটি বর্তমানে পারাদীপ (ওড়িশা) থেকে প্রায় ৫০ কিমি পূর্ব-উত্তর, ধামরার (ওড়িশা) ৪০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং সাগর দ্বীপ (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে ১৬০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। IMD’র মুখপাত্র উমাশঙ্কর দাস জানান, ল্যান্ডফলের সময় বাতাসের গতিবেগ ১০০-১১০ কিমি/ঘণ্টা হবে, মাঝে মাঝে ১২০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা স্থায়ী হবে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তুতি
ওড়িশার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপকূলীয় এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সতর্কতা জারি করছেন। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সরকারি প্রস্তুতি
ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যে ৩.৫ লাখ লোককে সাইক্লোন শেল্টারে সরিয়ে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগাযোগ করে রাজ্যের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মাজি জানিয়েছেন, রাজ্য পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং NDRF, ODRAF, এবং ফায়ার সার্ভিস দলের সদস্যরা ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রাথমিক ক্ষতির রিপোর্ট
এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে, কন্দ্রপাড়া ও ভদ্রক জেলায় ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু গাছ উপড়ে পড়েছে এবং সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিস দ্রুত গাছগুলিকে সরানোর কাজ শুরু করেছে।

নাগরিকদের নিরাপত্তা
নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারে স্থানান্তরিত মানুষদের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সহায়তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এনডিআরএফের প্রস্তুতি
ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (NDRF) ইতিমধ্যেই বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের দলকে মোতায়েন করেছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনগণকে সচেতন করছে এবং নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পরামর্শ দিচ্ছে। NDRF এবং অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস
IMD রিপোর্ট করেছে যে, ঘূর্ণিঝড়ের স্থায়ী বেগ ১০৫-১১৫ কিমি/ঘণ্টা, যা ১২৫ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। সংলগ্ন অঞ্চলে সম্ভাব্য বন্যা ও প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে যে, ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বাড়তে পারে, যা বন্যার কারণ হতে পারে।

স্থানীয় জনগণের অবস্থা
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। অনেকেই নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন, তবে কিছু মানুষ এখনো তাদের বাড়িতে রয়েছেন। প্রশাসন তাদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে এবং শিগগিরই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি এবং জনগণের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দানা সাইক্লোনের ফলে যে বিপর্যয় আসতে পারে, তা মোকাবিলা করার জন্য রাজ্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। সবশেষে, সকলকে সতর্ক ও নিরাপদে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। সহযোগিতা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।