ভারতের তরুণ প্রতিভারা (Young Indian Talents) বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা এবং উৎসাহ দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে ঝড় তুলছে। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে, খেলাধুলা থেকে শুরু করে শিল্পকলা, বিজ্ঞান এবং উদ্যোক্তা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন তরুণ ভারতীয় তাদের বড় সাফল্য অর্জনের পথে রয়েছেন। এই তরুণ প্রতিভারা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য নয়, বরং ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও প্রেরণার উৎস হয়ে উঠছেন। এই প্রবন্ধে আমরা এমন পাঁচজন তরুণ ভারতীয় প্রতিভার কথা তুলে ধরব, যারা এই গ্রীষ্মে তাদের দক্ষতা দিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করতে প্রস্তুত।
১. বৈভব সূর্যবংশী: ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা
১৪ বছর বয়সী বৈভব সূর্যবংশী ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২৫-এর রাজস্থান রয়্যালসের স্কোয়াডে স্থান পেয়ে ইতিমধ্যে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন। বিহারের সমস্তিপুরের তাজপুর গ্রাম থেকে উঠে আসা এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী আইপিএল খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি এবং বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৪২ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে তিনি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বৈভবের গ্রামীণ পটভূমি এবং তাঁর বাবার সমর্থন তাঁকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আইপিএল ২০২৫-এ তিনি ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে খেলার সুযোগ পেলে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
২. কোরো সিং: ফুটবলের নতুন আশা
কেরালা ব্লাস্টার্সের ১৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড কোরো সিং ২০২৪-২৫ আইএসএল মরসুমে দুটি গোল এবং চারটি অ্যাসিস্ট করে ইতিমধ্যে নজর কেড়েছেন। ১৭টি ম্যাচে ১৫টি স্কোরিং সুযোগ তৈরি এবং ৭৭% পাস নির্ভুলতার সঙ্গে তিনি দলের গেমপ্লেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নতুন কোচ ডেভিড কাতলার অধীনে কোরো সিং ২০২৫-২৬ মরসুমে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত। তাঁর গতি, দক্ষতা এবং ফাইনাল থার্ডে নিখুঁত পাস তাঁকে ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে গড়ে তুলছে। গ্রীষ্মে তিনি যদি আন্তর্জাতিক প্রি-সিজন ম্যাচে অংশ নেন, তবে জাতীয় দলের দরজা খুলে যেতে পারে।
৩. দিব্যা দেশমুখ: দাবার নতুন রানী
২০২৪ সালে দিব্যা দেশমুখ ভারতীয় দাবার জগতে ঝড় তুলেছেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বুদাপেস্টে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াডে দলগত এবং ব্যক্তিগত সোনা জিতেছেন এবং বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েদের বিভাগে শিরোপা জিতেছেন। ২৫০০ এলো রেটিং অতিক্রম করে তিনি নাগপুরের তৃতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার এবং ভারতের চতুর্থ মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পথে রয়েছেন। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে তিনি বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হবে। দিব্যার লক্ষ্য সহজ: “মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার ওপর মনোযোগ দিয়ে সুখী থাকা।” তাঁর এই ইতিবাচক মনোভাব তাঁকে বিশ্ব দাবার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারে।
৪. প্রণবী উরস: গলফের উদীয়মান তারকা
২২ বছর বয়সী প্রণবী উরস ভারতীয় গলফে একটি উজ্জ্বল নাম। ২০২৩ সালে তিনি লেডিস ইউরোপিয়ান ট্যুর শিরোপা জিতে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ গলফার হিসেবে ইতিহাস গড়েছেন। ২০২০ সালে হিরো উইমেন্স প্রো গলফ ট্যুরে দুটি জয় তাঁকে স্পটলাইটে নিয়ে আসে। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে তিনি এশিয়ান গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ইউরোপিয়ান ট্যুরে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। প্রণবীর দক্ষতা এবং শান্ত মনোভাব তাঁকে বিশ্ব গলফের মঞ্চে একটি বড় নাম করে তুলতে পারে। তাঁর সাফল্য ভারতীয় মহিলা গলফারদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।
৫. নন্দিনী কাশ্যপ: ক্রিকেটের নতুন মুখ
উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ (ডব্লিউপিএল) ২০২৫-এ দিল্লি ক্যাপিটালস নন্দিনী কাশ্যপকে মাত্র ১০ লক্ষ টাকায় দলে নিয়েছে, যা টুর্নামেন্টের সেরা ক্রয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক নন্দিনী মালয়েশিয়ায় এশিয়া কাপে অপরাজিত থেকে দলকে শীর্ষে নিয়ে গেছেন। তাঁর শান্ত মনোভাব এবং চাপের মুখে পারফরম্যান্স তাঁকে দিল্লি ক্যাপিটালসের জন্য একটি সম্পদ করে তুলেছে। ২০২৫ সালের গ্রীষ্মে ডব্লিউপিএল-এ তিনি মেগ ল্যানিংয়ের সঙ্গে ওপেনিং করার সুযোগ পেলে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে নতুন তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।
কেন এই তরুণ প্রতিভারা গুরুত্বপূর্ণ?
এই তরুণ প্রতিভারা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য নয়, বরং ভারতের যুব সমাজের জন্য প্রেরণার উৎস। ক্রিকেট, ফুটবল, দাবা এবং গলফের মতো ক্ষেত্রে তাঁরা ভারতের ঐতিহ্যবাহী শক্তি এবং নতুন সম্ভাবনার মিশ্রণ ঘটাচ্ছেন। এই গ্রীষ্মে আইপিএল, ডব্লিউপিএল, আইএসএল এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলি তাঁদের জন্য বড় মঞ্চ প্রদান করবে। তাঁদের সাফল্য ভারতীয় ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির বিশ্ব মঞ্চে প্রভাব বিস্তার করবে।
২০২৫ সালের গ্রীষ্ম ভারতীয় তরুণ প্রতিভাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে চলেছে। বৈভব, কোরাউ, দিব্যা, প্রণবী এবং নন্দিনীর মতো তরুণরা তাদের দক্ষতা, উৎসাহ এবং দৃঢ়তা দিয়ে ভারতের নাম উজ্জ্বল করতে প্রস্তুত। তাঁদের সাফল্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নতুন পথ দেখাবে। এই গ্রীষ্মে তাঁদের পারফরম্যান্সের দিকে নজর রাখুন, কারণ এই তরুণরাই ভারতের ভবিষ্যৎ তারকা।
