অলিক আথনাজের বলে এক রান নিয়ে যখন সেঞ্চুরি করলেন যশশ্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal), তখন অনেক কিছু মনে পড়ছিল বোধ হয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার। এমন কাজ তো তিনিও করেছেন আগে! কোলকাতায় তাঁর নিজের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরির রোমন্থন করতে করতেই হয়তো এগিয়ে গেলেন হেলমেট খুলে শতরান উদযাপন করা জয়সওয়ালের দিকে। আলিঙ্গন করলেন, তরুন ওপেনারকে। ডাগ আউট তখন দাঁড়িয়ে উঠে হাততালি দিচ্ছে, স্বীকৃতি দিচ্ছে তাঁর পরিশ্রমকে, তাঁর একনিষ্ঠ যাত্রাকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন যশশ্বী। ২০১৩ সালে কোলকাতার ইডেন গার্ডেনসে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচে ১৭৭ রান করেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এর পরই ২০১৮ সালে তালিকায় নাম লেখান পৃথ্বী শ্ব, ১৩৪ রান করেন রাজকোটে। ওপেনারের তালিকায় শিখর ধাওয়ানের নাম রাখা গেলেও অভিষেক ম্যাচের ওই ১৮৭ খানা রান এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, মোহালিতে।
এ ছাড়া সেঞ্চুরি করলে অনেক রেকর্ডই তৈরী হয়ে যায়, নাম এসে যায় অনেক তালিকায়। এই যেমন ১৩ বছর পর এই প্রথম কেউ দেশের বাইরে গিয়ে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেন, ভারতীয় হিসেবে সপ্তম। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচে সুরেশ রায়না করেছিলেন ১২০ রান।
ভারতীয় হিসেবে অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরি করার তালিকায় ১৭ নম্বরে নাম লেখালেন যশশ্বী। ১৬ নম্বরে রয়েছে শ্রেয়শ আইয়ারের নাম, কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৩ রান করেছিলেন তিনি।
২১৫তম বলে তার সেঞ্চুরি আসে। প্রত্যেকটি বলে যেন তিলে তিলে আবার তিনি লিখে দিয়ে যান তাঁর যাত্রাপথের গল্প। সেই ১১ বছর বয়সে ভিটে ছেড়ে মুম্বইতে এসে দুধওলার ঘরে কাজ নিয়েও সময় দিতে না পারায় আবার ছাদহীন হওয়ার গল্প। আজাদ ময়দানে মাঠকর্মীর সাথে এক তাঁবুতে কোনো মতে মাথা গুঁজে রাখার গল্প, অনুশীলনের পাশাপাশি ফুচকা বিক্রির গল্প। এক সদয় কোচ জ্বালা সিংহের দ্বারা তাঁর উপকৃত হওয়ার গল্প।
২০২২ আর ২০২৩র আইপিএলে যতবার হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে প্রতিষ্টা করতে চেয়েছেন তাঁর করা প্রত্যেকটি রান, ততবার কোন এক অদম্য বলে এই গল্পগুলো শক্তিশালী আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁর ব্যাটটাতে। একবারো তাঁর বাকি যাত্রার গল্পের কথা বলে না কেউ। যেন বলতে নেই। পাপ লাগে!
২০১৫র পর ফিরে না তাকানোর গল্পগুলো কোথায় চাপা পড়ে গেল? স্কুল ক্রিকেটে গাইলস শিল্ড ম্যাচে তাঁর করা ৩১৯টা রানের গল্প তো কেউ বলে না! ১৭ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে কনিষ্ঠতম ব্যাটার হিসেবে দ্বিশতরান করার গল্পও কেউ বলে না।
এক এক করে স্কুল ক্রিকেট, মুম্বই অনুর্ধ্ব-১৬, রঞ্জি ট্রফি, লিস্ট-এ, অনুর্ধ্ব-১৯ এর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ এবং অবশেষে আইপিএলের গন্ডি পেরিয়ে জয়সওয়ালের এই যশশ্বী হয়ে ওঠার বাকি গল্প যেন কোথাও ধামাচাপা পড়ে যায়!
এখনো যদিও সময় আছে। ডমিনিকাতে দ্বিতীয় দিনের শেষে ১৪৩ রানে ব্যাট করছেন যশশ্বী। যে পরিমান ধৈর্য নিয়ে শুরু থেকে ক্রিকেটের ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে আছেন তিনি, ১০০ তেই কি খুশি হবেন? বাকি গল্পও যে এখনো খোদাই করা হয়নি তাঁর। দেখা যাক!