Sports desk: সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছিল না ভারতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহার (Wriddhiman Saha)। চলতি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট কানপুরে গ্রীন পার্কে ঘাড়ের চোটের জন্য তৃতীয় দিনে কিপিং গ্লাভস পড়ে মাঠে নামতে পারেননি। শেষ ছয় আন্তজার্তিক টেস্ট ম্যাচে ঋদ্ধির ব্যাট চুপ ছিল। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে চলতি প্রথম টেস্টে কানপুরে প্রথম ইনিংসে ১ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে কার্যকরী সময়ে ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাট জ্বলে উঠতেই অনবদ্য ৬১ রানের ইনিংস সঙ্গে নট আউট।
লড়াকু ঋদ্ধি, কিউইদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৬তম ওভারে প্রথম বলটা টিম সাউদি একটু নীচু লেহ্নের বলকে ফাইন লেগে পুশ করে খুচরো রান নিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে ঋদ্ধি চোখে মুখে স্পষ্ট ছাপ টিভি ক্যামেরায়। মাঝে মাঝেই নিজের কাঁধ ধরে ফেলছিলেন এবং ড্রিঙ্কস ব্রেকের সময় ফিজিও নীতিন প্যাটেল মাঠে এসেই প্রাথমিক শুশ্রূষা করে গেলেন।
প্রথম ইনিংসে নিজের ১২ বল খেলে টিম সাউদির বলে টম ব্লুন্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়ন আসার পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছিল জীবনের শেষ টেস্ট খেলে ফেললেন ঋদ্ধিমান সাহা। কিপার হিসেবে শ্রীকর ভরত উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে দুরন্ত পারফর্ম করছিলেলন, বিশেষত নিউজিল্যান্ডের সেট ব্যাটসম্যান উইল ইয়ংকে ৮৯ রানে ফেরৎ পাঠানোর আসল কারিগর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ডেলিভারিতে ইয়ং’র ব্যাটে এজড হয়ে শ্রীকর ভরতের গ্লাভসে ক্যাচ অনেকটা নীচের দিকে শরীরটাকে মুচড়ে দিয়ে তালুবন্দী করা,এককথায় অনবদ্য পারফরম্যান্স নবাগত সাহার বদলি উইকেটরক্ষক শ্রীকর ভরতের, যা ঋদ্ধিমানকে ড্রেসিংরুমে অস্বস্তির সঙ্গে চাপে ফেলেছিল বৈকি।
অস্বস্তি আর চাপের মিশেলে “ফাইট ফেলুদা, ফাইট” সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি প্রদ্যোষ মিত্র “ফেলুদা” বাঙালির কানে যেভাবে মন্ত্রজপের মতো ঘাড়ে চেপে বসে আছে এখনও, তেমনি ঋদ্ধিমান সাহাও ঘাড়ের চোট নিয়েই “ব্যাট বলের ফাইটে” অসহ্য যন্ত্রণাকে ভুলে গিয়ে।
ঋদ্ধির”ব্যাট বলের ফাইট” এমন সময়ে স্কোরবোর্ডে ৬ উইকেট খুঁইয়ে ভারত মাত্র ১০৩ রানে। কিন্তু সুপার সানডেতে ঋদ্ধিমান সাহার নাম লেখা ছিল! সমস্ত সমালোচনা, অস্বস্তি, চাপকে “ঠেঙ্গা” (বুড়ো আঙুল) দেখিয়ে উইলিয়াম সমারভিলের ওভারে বিশাল এক ওভার বাউন্ডারি, শেষ এখানেই নয়; এরপরে কাইল জেমিসন, টিম সাউদি সবাইকে বাউন্ডারিতে ছুঁড়ে ফেলে, আজাজ প্যাটেলকে ধীরে সুস্থে ফেস করে বাইশ গজে ব্যাট হাতে ধৈহ্য কাকে বলে, এমন জাত ব্যাটিং’র নমুনা দেখিয়ে লুস ডেলিভারিতে একট রুম পেতেই ফুটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে নিখুঁত প্লেসমেন্টের জোরে খুচরো রানে আন্তজার্তিক টেস্ট ক্রিকেট সার্কিটে ৬ নম্বর অর্ধশতরান সমস্ত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট যে ঋদ্ধিমান সাহা ফুরিয়ে যায়নি। রানের খরা কাটিয়ে দলের কঠিন সময়ে হাল ধরা লড়াকু ঋদ্ধিমান সাহার গভীর আত্মপ্রত্যয়।
তাই কিংবদন্তী ভারতীয় ব্যাটসম্যান ভি ভি এস লক্ষণ ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটিং দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি। টুইট করেন এবং প্রশংসার সুর টুইটে ঋদ্ধিমান সাহার পারফরম্যান্সে লেখেন “@Wriddhipops-এর কাছ থেকে কতটা উজ্জ্বল অর্ধশতক কঠিন ঘাড়ের সাথে লড়াই করা এবং সেই লড়াই এবং সংকল্প দেখানোর জন্য এই চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ের আসল চরিত্র প্রতিফলিত হয়। চালিয়ে যান ঋদ্ধি👍👍 “
What a brilliant half century from @Wriddhipops To battle stiff neck and to show that fight and determination reflects the true character of this champion player. Keep it up Wriddhi👍👍 #NZvIND pic.twitter.com/mXyVN25DXy
— VVS Laxman (@VVSLaxman281) November 28, 2021
সময়ের সরণিতে পিছনে ফিরে তাকালে পরিসংখ্যানে পরিষ্কার কতটা অস্বস্তি আর চাপের মধ্যে ছিলেন টি ইন্ডিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ঋদ্ধিমান সাহা।দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঋদ্ধিমান সাহা কেপটাউন প্রথম টেস্টে ৫ জানুয়ারি ২০১৮ প্রথম ইনিংসে রানের খাতা না খুলেই আউট,দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ রান। ২ অক্টোবর ২০১৯ বিশাখাপত্তনমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২১ রান। রাঁচিতে তৃতীয় টেস্টে প্রোটিয়ার্সদের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ঋদ্ধিমান সাহার ২৪ রান। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইন্দোরে ১৪ নভেম্বর ২০১৯ প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১২ রান ঋদ্ধির, ২২ নভেম্বর ২০১৯ কলকাতার ইডেন গার্ডেনে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১৭ রানে নট আউট।Adelaide ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রান।
ঋদ্ধিমান সাহার এখন বয়স ৩৭। “বয়স শুধুই একটা সংখ্যা” লিয়েন্ডার পেজের ভাষায়। তাই ৩৭ বছর ৩৫ দিনের মাথায় ঋদ্ধিমান সাহা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ত্রাতা হয়ে উঠলেন ৬১ রান ১২৬ টা ডেলিভারির মুখে দাঁড়িয়ে নট আউট থেকে। বেশি বয়সে ভারতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে অর্ধশতরান করার নজির আগেও হয়েছে,ভারতীয় উইকেটরক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বয়সে টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি
ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার – ৩৬ বছর ৩০৫ দিন,সৈয়দ কিরমানি – ৩৫ বছর ২০ দিন, নানা যোশী- ৩৪ বছর ৪১ দিন, মহেন্দ্র সিং ধোনি – ৩৩ বছর ৩৯ দিন। কিন্তু সবার ওপরে বয়সের বিচারে এগিয়ে ঋদ্ধিমান সাহা ৩৭ বছর ৩৫ দিন প্রথম টেস্ট চতুর্থ দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬১ রানে নট আউট থাকা। তবে এখানে শ্রেয়স আইয়ারের সঙ্গে প্রথমে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের(৫০ রানের পার্টনারশিপ) এবং জুটি ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে আইয়ারের জুটি(৫০ রানের পার্টনারশিপ) বেঁধে ইনিংস গোছানো “কাবিলে তারিফ”, প্রশংসাযোগ্য।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ২৩৪ ডিক্লেয়ার ইনিংস। ভারত এখন ২৮০ রানের লিড ধরে রেখেছে। নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসের চতুর্থ দিনের শেষে ৪ রানে ১ উইকেট, উইল ইয়ং’র উইকেট হারিয়ে।