WPL 2025: ডব্লিউপিএলে হরমনপ্রীতের রেকর্ডে জোনাসেনের দাপট

অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার জেস জোনাসেন উইমেন’স প্রিমিয়ার লিগ (WPL 2025) ২০২৫-এর ইতিহাসে সর্বাধিক ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার জয়ের ক্ষেত্রে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের সঙ্গে…

jess jonassen wpl 2025

অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার জেস জোনাসেন উইমেন’স প্রিমিয়ার লিগ (WPL 2025) ২০২৫-এর ইতিহাসে সর্বাধিক ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার জয়ের ক্ষেত্রে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের সঙ্গে সমানে সমান হয়েছেন। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে দিল্লি ক্যাপিটালস (ডিসি) মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে (এমআই) ৯ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন জোনাসেন। তাঁর দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্স মুম্বইকে ১২৩/৯-এ আটকে দেয়, যা দিল্লি সহজেই তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয়।

জোনাসেন এই ম্যাচে তাঁর চার ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নেন। তাঁর শিকারের মধ্যে ছিলেন মুম্বইয়ের দুই বিপজ্জনক ব্যাটার—ন্যাট সিভার-ব্রান্ট (১৮) এবং হরমনপ্রীত কৌর (২২)—এবং তরুণী জি কামিলিনি। ১১তম ওভারে তিনি হরমনপ্রীতকে লেগ বিফোর উইকেট (এলবিডব্লিউ) করে প্যাভিলিয়নে ফেরান। ১৪তম ওভারে সিভার-ব্রান্টকে নিজের বোলিংয়ে ক্যাচ নিয়ে আউট করেন। তাঁর কোটার শেষ ওভারে কামিলিনির স্টাম্প ভেঙে দিয়ে তিনি এই ম্যাচের ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার জিতে নেন। এটি ছিল তাঁর টানা দ্বিতীয় এবং ডব্লিউপিএল-এর ইতিহাসে পঞ্চম ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার। এর ফলে তিনি হরমনপ্রীতের পাঁচটি পুরস্কারের রেকর্ডে সমান হন এবং সতীর্থ মারিজান ক্যাপকে (৪টি) ছাড়িয়ে যান।

kolkata24x7-sports-News

   

ডিসি বনাম এমআই: ম্যাচের হাইলাইটস
দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মুম্বই একটি দুর্বল স্কোর গড়ে। জেস জোনাসেনের নেতৃত্বে দিল্লির বোলাররা মুম্বইয়ের ব্যাটিং লাইনআপকে ধরাশায়ী করে দেয়। মুম্বই ২০ ওভারে ১২৩/৯-এ থামে। জোনাসেন ছাড়াও মিন্নু মণি ৩/১৭ নিয়ে মুম্বইয়ের মধ্যম ও নিম্ন ক্রমকে ধসিয়ে দেন। মুম্বইয়ের পক্ষে সিভার-ব্রান্ট এবং হরমনপ্রীত কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও, জোনাসেনের বোলিং তাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ করে।

জবাবে দিল্লি মাত্র ১৪.৩ ওভারে ৯ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য তাড়া করে। দলের অধিনায়ক মেগ ল্যানিং অপরাজিত ৬০ (৪৯ বলে) এবং শাফালি বর্মা ৪৩ (২৮ বলে) ৮৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। জেমিমা রড্রিগেস অপরাজিত ১৫ রান করে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। এই জয়ের ফলে দিল্লি ক্যাপিটালস ডব্লিউপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে।

জোনাসেনের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে জোনাসেন বলেন, “আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি, এটা একটু অবাক করা ব্যাপার। আমার মনে হয়, আমাদের অধিনায়ক মেগ ল্যানিং-এর এখানে থাকা উচিত ছিল। প্রথম ওভারের পর আমি বুঝেছিলাম, কয়েকটি বল আমি ভুল করেছি। তবে ফিল্ডিং পরিবর্তনের সঙ্গে পরিকল্পনা বদল করে আমি পাওয়ারপ্লের বাইরে চাপ তৈরি করতে পেরেছি। উইকেট পাওয়া সবসময়ই ভালো লাগে।” তিনি এই টানা দ্বিতীয় পুরস্কার জয়কে তাঁর দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল বলে উল্লেখ করেন। গুজরাত জায়ান্টসের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী ম্যাচে তিনি ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে পুরস্কার জিতেছিলেন।

ডব্লিউপিএল-এ সর্বাধিক ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার
জোনাসেনের এই পঞ্চম পুরস্কার তাঁকে হরমনপ্রীত কৌরের সমানে নিয়ে এসেছে। ডব্লিউপিএল-এর ইতিহাসে সর্বাধিক ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার জয়ীদের তালিকা নিম্নরূপ:
৫ – জেস জোনাসেন
৫ – হরমনপ্রীত কৌর
৪ – মারিজান ক্যাপ
৪ – ন্যাট সিভার-ব্রান্ট
৩ – গ্রেস হ্যারিস
৩ – আমেলিয়া কের
৩ – অ্যাশলি গার্ডনার
২ – হেইলি ম্যাথিউস
২ – এলিস পেরি
২ – রেনুকা সিং
২ – জেমিমা রড্রিগেস
২ – দীপ্তি শর্মা

জোনাসেন এই মরশুমে টানা দুটি পুরস্কার জিতে তাঁর ফর্মের প্রমাণ দিয়েছেন। তাঁর বোলিং দক্ষতা এবং মাঝে মাঝে ব্যাটিং অবদান তাঁকে দিল্লি ক্যাপিটালসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।

ম্যাচের বিশ্লেষণ
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু দিল্লির বোলারদের চাপে তাদের ইনিংস শুরু থেকেই বিপর্যস্ত হয়। পাওয়ারপ্লেতে তারা মাত্র ৩৫ রান তুলতে পারে। মধ্যম ওভারে হরমনপ্রীত এবং সিভার-ব্রান্ট কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও, জোনাসেন এবং মিন্নু মণির বোলিং তাদের ধ্বংস করে দেয়। শেষ দিকে আমানজোত কৌরের ছোট ক্যামিও (১৮) মুম্বইকে ১২৩ পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে।
দিল্লির তাড়া ছিল একপেশে। মেগ ল্যানিং এবং শাফালি বর্মার আগ্রাসী শুরু মুম্বইয়ের বোলারদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। ল্যানিং তাঁর অষ্টম ডব্লিউপিএল ফিফটি তুলে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান। শাফালির ৩টি ছক্কা এবং ল্যানিংয়ের ধারাবাহিকতা দিল্লিকে ৩৩ বল বাকি থাকতেই জয় এনে দেয়।

ডব্লিউপিএল ২০২৫-এর পয়েন্ট টেবিল
এই জয়ের ফলে দিল্লি ক্যাপিটালস ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি), গুজরাত জায়ান্টস (জিজি) এবং ইউপি ওয়ারিয়র্জ (ইউপিডব্লিউ) পিছনে রয়েছে। দিল্লির এই জয় তাদের শিরোপা প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী দাবিদার করে তুলেছে।

জোনাসেনের গুরুত্ব
জেস জোনাসেন দিল্লি ক্যাপিটালসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাঁর বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ এবং উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা দলের সাফল্যে বড় ভূমিকা পালন করছে। এই মরশুমে তিনি ইতিমধ্যে গুজরাত জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়েছেন এবং মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তাঁর বোলিং দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তাঁর এই ফর্ম দিল্লিকে প্লে-অফে শক্তিশালী অবস্থানে রাখছে।

ডব্লিউপিএল-এর প্রতিযোগিতা
ডব্লিউপিএল ২০২৫ এখন পর্যন্ত বেশ প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে। হরমনপ্রীত কৌরের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং মেগ ল্যানিংয়ের দিল্লি ক্যাপিটালস শিরোপার জন্য শক্তিশালী দাবিদার। জোনাসেন এবং হরমনপ্রীতের মধ্যে এই রেকর্ড প্রতিযোগিতা দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। আগামী ম্যাচগুলোতে এই দুই তারকার পারফরম্যান্স দলের ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।

এই ঘটনা ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে বিদেশি এবং দেশীয় প্রতিভার সমন্বয়ের প্রমাণ। জোনাসেনের এই কৃতিত্ব ডব্লিউপিএল-এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং প্রতিযোগিতার মানের ইঙ্গিত দেয়। ভক্তরা এখন অপেক্ষায় আছেন, দেখার জন্য কে এই রেকর্ড ভাঙবে।