নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেট (Indian Cricket Team) ইতিহাসের অন্যতম গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ২০১১ সালের বিশ্বকাপ (2011 World Cup) জয়। মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঐতিহাসিক সেই রাতে ভারত যখন শিরোপা ছিনিয়ে নেয়, পুরো দেশ যেন আবেগে ভেসে যায়। ১৪ বছর পর, সেই সোনালী দলের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ জনই অবসর গ্রহণ করেছেন। এখন কেবল একজনই রয়েছেন ক্রিকেটে সক্রিয় বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। সম্প্রতি পীযূষ চাওলার অবসর সেই অধ্যায়ের আরও একটি পৃষ্ঠা বন্ধ করে দিল।
পীযূষ চাওলার বিদায়: এক অধ্যায়ের ইতি
পীযূষ চাওলা সামাজিক মাধ্যমে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন ক্রিকেট জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতি। ২০১১ সালের দলে তিনি ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য এবং যদিও তিনিই তিনটি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন, তার বাছাই নিয়েই তখন নানা আলোচনা হয়েছিল। তবে চাওলার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার কখনও স্থায়ীভাবে ছন্দে ছিল না। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আইপিএলে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল – আইপিএলে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৯০’র বেশি।
ভারত পেল নতুন ভরসা! অশ্বিনের যোগ্য বিকল্প তনুশ
২০১১ দলের বর্তমান অবস্থা
চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেই ১৪ জন কিংবদন্তি বর্তমানে কী করছেন:
এম.এস. ধোনি: ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও তিনি এখনও আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলছেন। এখন শুধু আইপিএলেই তাঁকে দেখা যায়।
শচীন তেন্ডুলকর: ২০১৩ সালে ২০০তম টেস্ট খেলে বিদায় নেন। তার আগে ২০১২ সালে একদিনের ক্রিকেট ছাড়েন। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম ও ক্রিকেট বিশ্লেষণে যুক্ত।
গৌতম গম্ভীর: ২০১৮ সালে অবসর নেন। বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেড কোচ হিসেবেও কাজ করছেন।
যুবরাজ সিং: ক্যানসারের বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে মাঠে ফিরলেও আগের মতো ধারাবাহিকতা ছিল না। ২০১৯ সালে সবধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানান।
বীরেন্দ্র শেহবাগ: ২০১৫ সালে অবসর নেন। বর্তমানে একজন জনপ্রিয় ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ইউটিউবার।
জহির খান: ২০১৫ সালে অবসর নেন এবং বর্তমানে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও আইপিএলে মেন্টরের ভূমিকা পালন করেছেন।
হরভজন সিং: ২০১৬ সালের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি। ২০২১ সালে অবসর নেন এবং এখন ধারাভাষ্যকার।
সুরেশ রায়না: ২০২০ সালে ধোনির সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। বর্তমানে আইপিএল ও অন্যান্য টি২০ লিগে বিশ্লেষক হিসেবে যুক্ত।
আশিষ নেহেরা: ২০১৭ সালে নিজ শহরে বিদায়ী ম্যাচ খেলে অবসর নেন। এরপর আইপিএল কোচিংয়ে যুক্ত গুজরাট টাইটান্স সঙ্গে।
হংকংয়ের বিরুদ্ধে হার, ভারতীয় ফুটবলে ইতি মানোলো মার্কুয়েজের!
মুনাফ প্যাটেল: ২০১৮ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। বর্তমানে নেপথ্যেই সময় কাটাচ্ছেন।
ইউসুফ পাঠান: ২০১২ সালের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর দেখা যায়নি। ২০২১ সালে অবসর নেন। লেজেন্ডস লিগে মাঝে মাঝে খেলেন।
রবিচন্দন অশ্বিন: যদিও তিনি ২০১১ দলে ছিলেন, তবে সেবার খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি। পরবর্তীতে ভারতের প্রধান টেস্ট বোলারে পরিণত হন। ২০২৪ সালের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
শ্রীসন্থ: ২০১৩ সালের আইপিএলে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর ২০২০ সালে ফেরার অনুমতি পেলেও সফল হতে পারেননি। ২০২২ সালে অবসর নেন।
বিরাট কোহলি: শেষ সেনানী
বিরাট কোহলি, সেই ২০১১ সালের ফাইনালে যার ব্যাটে শুরুর সেই গুরুত্বপূর্ণ ৩৫ রানের ইনিংস আসে, তিনিই এখন একমাত্র সক্রিয় ক্রিকেটার সেই দলের। তবে কোহলি বর্তমানে কেবলমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সক্রিয়। ২০২4 সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর টি২০ থেকে বিদায় নেন এবং চলতি বছরের শুরুতে টেস্ট থেকেও অবসর নেন।
আজ ৩৬ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে বিরাট কোহলি সেই সোনালী সময়ের শেষ প্রতিচ্ছবি। তিনি ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতিয়েছেন ২০১৩ এবং ২০২৫ সালে, এবং দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০২৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয় ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অনন্য আবেগের অধ্যায়। সেই অধ্যায়ের চরিত্ররা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। পীযূষ চাওলার বিদায়ের পর আর কেবল বিরাট কোহলি রয়ে গেলেন সক্রিয় ক্রিকেটের ময়দানে। তার মাধ্যমেই যেন আজও জীবিত সেই সোনালী অধ্যায়, যা আজও প্রতিটি ভারতীয়র হৃদয়ে গর্বের জায়গা করে নিয়েছে।