আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) প্লে-অফ ও ফাইনালের ভেন্যু বদল ঘিরে শুরু হয়েছে প্রবল রাজনৈতিক বিতর্ক। কলকাতার (Kolkata) ইডেন গার্ডেন্স (Eden Gardens) থেকে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার এবং ফাইনাল ম্যাচ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গুজরাটের (Gujarat) নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে (Narendra Modi Stadium)। এছাড়া হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরুর নির্ধারিত ম্যাচগুলিও স্থানান্তরিত হয়েছে অন্য রাজ্যে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের গলায়, যিনি এই সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, “ইডেনে ম্যাচ না হওয়াটা শুধুই ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্ত নয়, এর পেছনে রয়েছে গভীর রাজনীতি।” তার অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি কেন্দ্রের বিরাগ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বঞ্চিত করা হয়েছে বাংলার লক্ষ লক্ষ ক্রিকেটপ্রেমী মানুষকে।
BCCI-র তরফে জানানো হয়েছে, আবহাওয়ার কারণে ম্যাচগুলো স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। অরূপ বিশ্বাস বলেন, “আলিপুর আবহাওয়া দফতর ১২ মে জানিয়েছে, জুনের প্রথম সপ্তাহের কোনও নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে BCCI কীভাবে ২০ দিন আগেই জানল যে ৩ জুন কলকাতায় বৃষ্টি হবে?”
ইডেন গার্ডেন্সের উন্নত ড্রেনেজ সিস্টেমের কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। তার দাবি, “ভারতের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত জল নিকাশি হয় ইডেনে। মুষলধারে বৃষ্টির পরেও ৩০ মিনিটের মধ্যে খেলা শুরু করা সম্ভব হয়। এই যুক্তি থাকা সত্ত্বেও খেলা সরানো, নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।”
সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মাও। তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে ম্যাচ সরানো ঠিক হয়নি। ইডেনে ইতিমধ্যেই সাতটি ম্যাচ নির্বিঘ্নে হয়েছে। গড় দর্শকসংখ্যা ছিল ৬০-৬৫ হাজার। একটি ম্যাচেও কোনও সমস্যা হয়নি।” তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র রামনবমীর একটি ম্যাচের তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছিল নিরাপত্তার কারণে, তবে তা সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।
অন্যদিকে BJP সাংসদ সুকান্ত মজুমদার ম্যাচ সরানোর কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বলেন, যা অরূপ বিশ্বাস ‘মিথ্যে’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “একদিকে বলা হচ্ছে আবহাওয়া, অন্যদিকে বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা— তাহলে কোনটা সত্যি?”
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রের বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। তাদের মতে, যেমনভাবে ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনা ও গ্রামীণ সড়ক যোজনার অর্থ আটকে দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনই এখন বাংলার ক্রীড়ামোদীদেরও বঞ্চিত করা হচ্ছে। অরূপের দাবি, “১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। সব কিছুতেই বঞ্চনা, এবার ক্রিকেটেও তাই।”
বিশেষ করে আমেদাবাদে পরপর তিনবার ফাইনাল আয়োজন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। “গত চার বছরে তিনবার ফাইনাল হয়েছে মোদীর রাজ্যের স্টেডিয়ামে। অন্য স্টেডিয়ামগুলো কি আর আছে শুধু মাঠ ঘাসাতে?”— ব্যঙ্গ করে প্রশ্ন করেন তিনি।
BCCI-এর আবহাওয়ার যুক্তিকে কটাক্ষ করে বলেন, “বোর্ডে কি আবহাওয়াবিদ কাজ করেন? আমেরিকার অ্যাপের পূর্বাভাস দেখে যদি ফাইনাল সরানো হয়, তাহলে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের কী মূল্য?” তাঁর মতে, এ সিদ্ধান্ত শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির উপরেও আঘাত।
সব মিলিয়ে, ইডেন থেকে ম্যাচ সরানোর ঘটনায় বাংলা জুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র অসন্তোষ। ক্রিকেট প্রেম, আবেগ ও রাজনীতির টানাপোড়েনে পড়ে গেছে আইপিএলের ফাইনাল। এখন দেখার, এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে এবং এর প্রভাব ভবিষ্যতের ক্রিকেট সূচি নির্ধারণে কতটা পড়ে।