ওয়াসিম আক্রাম নাকি জসপ্রীত বুমরাহ? দীর্ঘদিনের বিতর্কের অবসান পাক-কিংবদন্তির

ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেট শুধুমাত্র অসাধারণ স্পিনারদের জন্যই নয়, বরং দুর্দান্ত পেসারদের জন্যও বিখ্যাত। ১৯৯০-এর দশকে পাকিস্তানের কাছে ওয়াসিম আক্রাম (Wasim Akram), ওয়াকার ইউনিস এবং শোয়েব…

Wasim Akram Settles Debate Jasprit Bumrah a Modern-Day Great

ভারতীয় উপমহাদেশের ক্রিকেট শুধুমাত্র অসাধারণ স্পিনারদের জন্যই নয়, বরং দুর্দান্ত পেসারদের জন্যও বিখ্যাত। ১৯৯০-এর দশকে পাকিস্তানের কাছে ওয়াসিম আক্রাম (Wasim Akram), ওয়াকার ইউনিস এবং শোয়েব আখতারের মতো কিংবদন্তি পেসার ছিলেন। সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেট দল তাদের ব্যাটারদের উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। তবে, ২০১০-এর মাঝামাঝি সময়ে বিরাট কোহলি ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে কার্যকর এবং প্রাণঘাতী পেসার তৈরির উপর নতুন করে জোর দেওয়া হয়। এর ফলে জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি এবং মহম্মদ সিরাজের মতো খেলোয়াড়রা উঠে এসেছেন। এই নতুন প্রজন্মের পেসারদের মধ্যে জসপ্রীত বুমরাহের অসাধারণ পারফরম্যান্স সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে: তিনি কি ওয়াসিম আক্রামের চেয়ে ভালো? এই প্রশ্নের উত্তর এখন পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আক্রাম নিজেই দিয়েছেন।

জিওটিভির ‘হারনা মানা হ্যায়’ অনুষ্ঠানে ওয়াসিম আক্রাম বলেন, “জসপ্রীত বুমরাহ একজন অসাধারণ বোলার। তার অদ্ভুত অ্যাকশন, গতি এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তাকে পরিচালনার পদ্ধতি ও মানসিকতার জন্য তাদের প্রশংসা করতে হবে। ৯০-এর দশকের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনা করা অসম্ভব। তিনি ডানহাতি, আমি বাঁহাতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিতর্ক—বেগানো কি শাদি মে আবদুল্লা দিওয়ানা। আমি বা তিনি এই নিয়ে ভাবি না। তারা নিজেরাই লড়াই করছে। তিনি আধুনিক যুগের একজন মহান বোলার। আমি আমার যুগে ছিলাম, আমার কাজ করেছি। তিনি একজন অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক বোলার, এটা আমি অবশ্যই বলব।”

   

দুই যুগের দুই কিংবদন্তি
ওয়াসিম আক্রাম ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে পাকিস্তানের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তার সুইং বোলিং, বিশেষ করে রিভার্স সুইং, তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসারে পরিণত করেছিল। তিনি ১০৪টি টেস্টে ৪১৪ উইকেট এবং ৩৫৬টি ওডিআই-তে ৫০২ উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে, জসপ্রীত বুমরাহ তার অস্বাভাবিক বোলিং অ্যাকশন এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিং দিয়ে আধুনিক ক্রিকেটে একটি স্টার হয়ে উঠেছেন। ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিনি ৪৪ টেস্টে ১৫৫ উইকেট এবং ৮৯ ওডিআই-তে ১৪৯ উইকেট নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও তিনি অত্যন্ত কার্যকর, ৬২ ম্যাচে ৭৪ উইকেট নিয়ে।

ওয়াসিমের প্রশংসা বুমরাহ ও সিরাজের জন্য
ওয়াসিম আক্রাম সম্প্রতি মহম্মদ সিরাজের পারফরম্যান্সেরও প্রশংসা করেছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০২৪-২৫ টেস্ট সিরিজে সিরাজের আগ্রাসী বোলিং দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। টেলিকম এশিয়া স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আক্রাম বলেন, “আমি খুব কমই ক্রিকেট দেখি যখন আমি কাজ করি না, কিন্তু শেষ দিনে আমি টিভির সামনে আটকে ছিলাম। সিরাজের মধ্যে ক্ষুধা এবং আবেগ ছিল—এটি অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টা। পাঁচটি টেস্টে প্রায় ১৮৬ ওভার বোলিং করার পরও শেষ দিনে এমন আগুন দেখানো অসাধারণ স্ট্যামিনা এবং মানসিক শক্তির পরিচয়। তিনি এখন শুধু একজন সহায়ক বোলার নন, তিনি আক্রমণের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং হৃদয় দিয়ে তা করছেন।”

Advertisements

বিতর্কের অবসান
ওয়াসিম আক্রামের মন্তব্য এই বিতর্কের একটি পরিপক্ক সমাধান প্রদান করেছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে দুই যুগের তুলনা করা অর্থহীন, কারণ খেলার প্রকৃতি, পরিস্থিতি এবং প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয়েছে। বুমরাহের অদ্ভুত অ্যাকশন এবং আধুনিক ক্রিকেটে তার ধারাবাহিকতা তাকে বর্তমান যুগের একজন মহান বোলারে পরিণত করেছে। তিনি ২০২৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, ১১ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে। অন্যদিকে, ওয়াসিম আক্রাম তার সময়ে পাকিস্তানের জন্য একই ধরনের প্রভাব ফেলেছিলেন।

বাংলার প্রেক্ষাপটে ক্রিকেট
বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এই বিতর্ক বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বুমরাহ এবং সিরাজের মতো পেসারদের পারফরম্যান্স সবসময়ই সমর্থকদের মুগ্ধ করেছে। বাংলার তরুণ ক্রিকেটাররা বুমরাহের অ্যাকশন এবং ফিটনেস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পেস বোলিংয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। একইভাবে, ওয়াসিম আক্রামের কিংবদন্তি সুইং বোলিং বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে এখনও আলোচিত হয়।

ওয়াসিম আক্রাম এবং জসপ্রীত বুমরাহ—দুজনেই তাদের নিজ নিজ যুগের মহান বোলার। আক্রামের মন্তব্য এই বিতর্কের একটি সুন্দর সমাধান দিয়েছে, যেখানে তিনি বুমরাহের প্রশংসা করেছেন এবং তুলনার অর্থহীনতা তুলে ধরেছেন। বুমরাহ আধুনিক ক্রিকেটে ভারতের পেস বোলিংয়ের পতাকা বহন করছেন, এবং সিরাজের মতো বোলারদের সঙ্গে মিলে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন যুগের সূচনা করেছেন। বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের জন্য, এই দুই কিংবদন্তির গল্প তাদের খেলার প্রতি ভালোবাসাকে আরও গভীর করবে।