২,৩৭৭ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষা অবসান ভারতীয় জাতীয় দলে (Indian Football Team) ফিরেছেন বিশাল কাইথ (Vishal Kaith)। ভারতীয় পুরুষ ফুটবল দলের ইতিহাসে কোনও খেলোয়াড়ের জন্য দীর্ঘতম বিরতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ভারতীয় গোলরক্ষক সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। সেবার ভারত একটি অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে অংশ নিয়েছিল। চারটি ম্যাচেই বিশাল মাঠে নেমেছিলেন। তবে ফাইনালে মালদ্বীপের কাছে হেরে ভারত রানার্স-আপ হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, সেই মালদ্বীপের বিপক্ষেই তিনি প্রায় সাত বছর পর জাতীয় দলে ফিরে আসেন। এবার অবশ্য ফলাফল ছিল ভিন্ন—৩-০ গোলের জয়। একটি আরামদায়ক ক্লিন শিট, যেখানে বিশালকে মাত্র একটি সেভ করতে হয়েছিল।
IPL 2025: জল্পনাই হল সত্যি! IPL সুযোগ নিলামে অবিক্রিত প্রাক্তন নাইট বোলার
২৮ বছর বয়সী বিশাল কাইথ (Vishal Kaith) the-aiff.com-কে বলেন, “প্রায় সাত বছর পর খেলতে নামার অনুভূতি অসাধারণ। গোলরক্ষক এমন একটি পজিশন, যেখানে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়া খুব কঠিন। আমি এই ম্যাচটিকে আমার আসল অভিষেক হিসেবে গণ্য করি। ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা একটি অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে গিয়েছিলাম। এর আগে আমি কখনও সিনিয়র দলের সঙ্গে, বিশেষ করে (সুনীল) ছেত্রী ভাইয়ের সঙ্গে খেলিনি। তাই এবারের অনুভূতি একেবারে আলাদা।”
তিনি আরও বলেন “যখন আপনি খেলতে না পারেন, তখন মানসিকভাবে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। কিন্তু যদি আপনি কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যান এবং প্রশিক্ষণে শতভাগ দেন, তাহলে একদিন না একদিন আপনার সুযোগ আসবেই। আর সেই দিনটি আমার জন্য এসেছিল বুধবার (মালদ্বীপের বিপক্ষে)। আমার মোটিভেশন ছিল যে আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব, এবং কোনও না কোনও সময় সুযোগ পাব।”
২০১৮ সালে ২২ বছর বয়সী বিশাল (Vishal Kaith)সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের (Indian Football Team) প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক ছিলেন। এখন তিনি আরও পরিণত এবং তার পজিশনে দেশের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন। তিনি বলেন “সেসময় আমি অনেক কম বয়সী ছিলাম। এখন আমি অনেক বেশি পরিপক্ক, খেলার অভিজ্ঞতাও বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে ভুল কম হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও উন্নত হয়। জাতীয় দল বছরে বেশি ম্যাচ খেলে না—মূলত কোয়ালিফায়ার আর প্রীতি ম্যাচই থাকে। তাই মাঠে নামার সুযোগ পাওয়া আরও কঠিন। ক্লাবের হয়ে লিগে ভালো করতে হয়।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশালের ধারাবাহিকতা ঘরোয়া ফুটবলে অসাধারণ। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের এই গোলরক্ষক এখন ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) ইতিহাসে সর্বাধিক ৫৪টি ক্লিন শিটের রেকর্ডধারী। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে শূন্য গোলে ম্যাচ শেষ করে তিনিই প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে অর্ধশতকের মাইলফলক স্পর্শ করেন। কলকাতার সবুজ-মেরুন জার্সিতে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে দুটি আইএসএল শিল্ড একটি আইএসএল কাপ এবং একটি দুরান্দ কাপ এনে দিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে, ২০২২-২৩ মৌসুমে তিনি আইএসএল গোল্ডেন গ্লাভ জিতেছেন। চলতি মৌসুমে ১৪টি ক্লিন শিট নিয়ে আরেকটির দৌড়ে রয়েছেন।
KKR গড় ইডেনের ‘বিরাট’ এলাকা দখল করলেন কিং-কোহলি
বিশাল বলেন “আমি একা গোল্ডেন গ্লাভ জিততে পারি না। এটা পুরো দলের প্রচেষ্টা। তারা ভালো করলে গোলরক্ষকের কাজ সহজ হয়ে যায়। মালদ্বীপের বিপক্ষেও আমাকে পুরো ম্যাচে খুব বেশি কিছু করতে হয়নি, কারণ আমরা দারুণভাবে ডিফেন্ড করেছি। আমি মোহনবাগানে আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে নিজেকে আরও উন্নত করতে পারি।”
হিমাচল প্রদেশে জন্ম নেওয়া এই গোলরক্ষক জাতীয় দলে আবার সুযোগ পাওয়ার আগে ২১টি ম্যাচ বেঞ্চে কাটিয়েছেন। তবে গুরপ্রীত সিং সান্ধু এবং অমরিন্দর সিংয়ের মতো দুই অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের সঙ্গে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল শেখা এবং প্রশিক্ষণে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাওয়া।
বিশাল (Vishal Kaith)আরও বলেন “গুরপ্রীত পাজি এবং অমরিন্দর পাজির মতো গোলরক্ষকরা নিয়মিত দলে থাকলে মাঠে নামা কঠিন। মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হয়। আমরা তিনজন আছি, কিন্তু খেলবে একজনই। এমন একটি পজিশন যেখানে ধারাবাহিকতা বেশি পছন্দ করা হয়। আমাদের সম্পর্ক দারুণ। আমরা সবাই উত্তর ভারতের, তাই একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমরা একে অপরকে উৎসাহ দিই। কেউ ভুল করলে বাকিরা তাকে সমর্থন করে। আমি যখন খেলতে পারি না, তখন তাদের থেকে শিখি, দেখি তারা কী ঠিক করছে। যদিও একজন গোলরক্ষকই খেলে, প্রশিক্ষণে আমরা একে অপরকে পুরোপুরি সমর্থন করি।”
আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে (Shilong) ভারতের (Indian Football Team) বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ যোগ্যতা (AFC Asian Cup 2027 Qualifiers) অর্জনের লড়াই শুরু করবে বাংলাদেশ (Bangladesh)। মালদ্বীপের বিপক্ষে ভালো পারফরম্যান্সের পরে আশা করা যায় রয়্যাল টাইগারদের বিপক্ষে খেলতে নামতে পারেন বিশাল(Vishal Kaith)। তবে এর আগেও তিনি দলের মধ্যে থাকলেও ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি।