বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়কত্বের সময়কাল, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত, ভারতীয় ক্রিকেটের একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত। এমএস ধোনির কাছ থেকে ২০১৪-১৫ অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথে অধিনায়কত্ব গ্রহণ করে, কোহলি দলে আগ্রাসন, ফিটনেস এবং জয়ের প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির সংস্কৃতি গড়ে তোলেন, যা ভারতকে দেশে-বিদেশে একটি দুর্দান্ত শক্তিতে রূপান্তরিত করে। তাঁর অধিনায়কত্ব ভারতীয় টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল, ৫৮.৮২% জয়ের হার নিয়ে। কোহলির রেকর্ড অন্যান্য বিশিষ্ট ভারতীয় টেস্ট অধিনায়কদের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁর অসাধারণত্ব স্পষ্ট হয়।
অন্যান্য অধিনায়কদের সঙ্গে তুলনা
এমএস ধোনি
এমএস ধোনি ৬০টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করে ২৭টি জয়, ১৮টি হার এবং ১৫টি ড্র নিয়ে ৪৫% জয়ের হার অর্জন করেন। ধোনি দেশে অপ্রতিরোধ্য শক্তি গড়ে তুললেও, বিদেশে তাঁর মাত্র ৬টি জয় কোহলির ১৬টি জয়ের তুলনায় অনেক কম।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি ভারতীয় দলে লড়াকু মনোভাব জাগিয়ে তুলেছিলেন, ৪৯টি টেস্টে ২১টি জয়, ১৩টি হার এবং ১৫টি ড্র সহ ৪২.৮৬% জয়ের হার অর্জন করেন। তাঁর ১১টি বিদেশি জয় কোহলির আগে একটি মানদণ্ড ছিল।
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ৪৭টি টেস্টে ১৪টি জয়, ১৪টি হার এবং ১৯টি ড্র নিয়ে ২৯.৭৮% জয়ের হার পান, যার বেশিরভাগ জয় দেশে এসেছিল। কপিল দেব, ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক, ৩৪টি টেস্টে মাত্র ৪টি জয়, ৭টি হার এবং ২২টি ড্র নিয়ে ১১.৭৬% জয়ের হার অর্জন করেন। সুনীল গাভাসকার (১৯.১৪%) এবং সচিন তেন্ডুলকর (১৬%) কোহলির তুলনায় অনেক কম জয়ের হার পান। সম্প্রতি অবসর নেওয়া রোহিত শর্মা ২৪টি টেস্টে ১২টি জয় নিয়ে ৫০% জয়ের হার অর্জন করেন, কিন্তু তিনি কোহলিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।
পেস বোলিংয়ের বিপ্লব
কোহলির অধিনায়কত্বের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বিশ্বমানের পেস বোলিং আক্রমণ গড়ে তোলার প্রতি তাঁর অটল প্রতিশ্রুতি। তিনি এবং তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রী বিদেশে টেস্ট জয়ের জন্য দ্রুতগতির বোলারদের গুরুত্ব বুঝেছিলেন এবং ইশান্ত শর্মা, মোহাম্মদ শামি, জসপ্রীত বুমরাহ, উমেশ যাদব, ভুবনেশ্বর কুমার এবং পরে মোহাম্মদ সিরাজের মতো প্রতিভাবান বোলারদের লালন করেন। কোহলির নেতৃত্বে এই পেস আক্রমণ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সব পরিস্থিতিতে উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের বিদেশি জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ভারতীয় ক্রিকেটের স্পিন-ভিত্তিক ঐতিহ্য থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিল। এই দ্রুতগতির বোলারদের আগ্রাসন এবং অবিরাম চাপ কোহলির অধিনায়কত্বের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।