১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান। অবশেষে অধরা ট্রফি ঘরে তুলল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCb)। আইপিএল ২০২৫ ফাইনালে (IPL 2025 Final) পাঞ্জাব কিংসকে (PBKS) হারিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল বেঙ্গালুরু। তবে এই জয় শুধুমাত্র একটি দলের সাফল্য নয়, এক কিংবদন্তির স্বপ্নপূরণের গল্প। বিরাট কোহলি (Virat Kohli) নামটাই যথেষ্ট। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যিনি নিজের ঘাম, পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে গড়ে তুলেছেন আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্যারিয়ার, তাঁর হাত ধরেই এল এই কাঙ্ক্ষিত জয়।
মঙ্গলবার, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসকে হারিয়ে ট্রফি জেতে আরসিবি। ব্যাট হাতে দলকে ভরসা দেন বিরাট কোহলি, যিনি ওপেন করতে নেমে ৩৫ বলে ৪৩ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন। এই ইনিংসেই গড়ে ফেলেন আরও একটি ঐতিহাসিক রেকর্ড। আইপিএল ইতিহাসে সব থেকে বেশি চার মারার নজির। এতদিন এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন শিখর ধাওয়ান, যিনি আইপিএলে ৭৬৮টি চার মেরেছিলেন। কোহলি মঙ্গলবার ফাইনালে ৩টি চার মেরে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে যান। বর্তমানে তাঁর মোট চার সংখ্যা ৭৭১, যা আইপিএল ইতিহাসে সর্বাধিক।
বিরাট কোহলির আইপিএল যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে, প্রথম সিজন থেকেই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন দলের প্রাণভোমরা, নেতার প্রতীক। কিন্তু এত বছরেও ট্রফির মুখ দেখা হয়নি। ২০১৬ ফাইনালে হারের বেদনা, একের পর এক প্লে-অফে ছিটকে যাওয়ার হতাশা—সব কিছুর ওপরে দাঁড়িয়েও তিনি কখনও দল ছাড়েননি। প্রতিবার নতুন মরসুমে নতুন আশায় ময়দানে নামা কোহলির মধ্যে যেমন ছিল অদম্য মানসিকতা, তেমনই ছিল এক অবিচলিত ভালোবাসা এই দলের প্রতি।
আইপিএল ২০২৫ তিনি ১৫টি ম্যাচে খেলেন, সংগ্রহ করেন ৬৫৭ রান। এই টুর্নামেন্টে কোনও শতরান না করলেও ৮টি হাফ-সেঞ্চুরি করে তিনি আবারও প্রমাণ করেন, কেন তিনি এখনও ভারতের সেরা ব্যাটারদের মধ্যে অন্যতম। তিনি এই মরসুমে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন এবং আরসিবির হয়ে সর্বাধিক রান করেন।
এছাড়া আইপিএল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান (৮৬৬১), সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি (৮টি) এবং সবচেয়ে বেশি হাফ-সেঞ্চুরি (৬৩টি) করার রেকর্ডও বিরাট কোহলির দখলে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হল সর্বাধিক চারের রেকর্ডও। এই সব পরিসংখ্যানের পিছনে রয়েছে এক নিরলস পরিশ্রম, অধ্যবসায়, এবং ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা।
বিরাট কোহলির আইপিএল যাত্রা শুধুমাত্র একজন ব্যাটসম্যানের সাফল্যের গল্প নয়—এটি একজন নেতার, একজন অনুপ্রেরণার, এবং একজন যোদ্ধার কাহিনি। তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন যে খেলা কেবল রান কিংবা ট্রফির নয়, খেলা মানে হল মনোবল, ধৈর্য, এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস।
ফাইনালে জয় পাওয়ার পর কোহলির চোখেমুখে ছিল স্বস্তি, তৃপ্তি আর আবেগ। দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ যেন একটা চাপ কমিয়ে দিল তাঁর কাঁধ থেকে। আরসিবির সমর্থকদের জন্যও এ এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত—যাঁরা এতদিন দলের পাশে থেকেছেন, ট্রফিহীন সিজনে ভরসা হারাননি। তাঁদের ধৈর্যেরও এবার পুরস্কার মিলল।
আইপিএল ২০২৫ এই জয় শুধু একটি ট্রফি জয় নয়, এটি বিরাট কোহলির দীর্ঘ পথচলার প্রাপ্য সম্মান। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি এক আবেগঘন মুহূর্ত—যেখানে অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হয়, ইতিহাস লেখা হয়, আরসিবি হয় চ্যাম্পিয়ন।