উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া জেলার সৈফাইয়ে অবস্থিত মেজর ধ্যানচাঁদ স্পোর্টস কলেজের হোস্টেলে শুক্রবার এক কিশোর কাবাডি খেলোয়াড়ের (Kabaddi player) মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত কিশোরের নাম রাজীব সিং (১৭)। তিনি এই কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং কাবাডি প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। তার মৃতদেহ হোস্টেলের নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই ঘটনা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।
পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সতপাল সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শুক্রবার রাজীবের মৃতদেহ তার হোস্টেল কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে, তবে পুলিশ বিষয়টির গভীরভাবে তদন্ত করছে। তিনি আরও জানান, রাজীবের পরিবারকে ঘটনাটি জানানো হয়েছে এবং তারা সৈফাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে, এবং রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
মেজর ধ্যানচাঁদ স্পোর্টস কলেজ উত্তরপ্রদেশের একটি বিখ্যাত ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, কুস্তি, কাবাডি, অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন এবং সাঁতারের মতো বিভিন্ন খেলায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কলেজে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্ররা পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রীড়া প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। রাজীব এই কলেজের একজন প্রতিভাবান কাবাডি খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার সহপাঠী এবং প্রশিক্ষকদের মতে, তিনি ছিলেন পরিশ্রমী এবং শান্ত স্বভাবের। এই অকাল মৃত্যু তাদের সকলকে স্তম্ভিত করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় রাজীব তার কক্ষে একা ছিলেন। তার সহপাঠীরা তাকে খাবারের জন্য ডাকতে গিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ দেখতে পান। বারবার ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে তারা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দরজা ভেঙে মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ এখন রাজীবের সহপাঠী, শিক্ষক এবং হোস্টেলের অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার পটভূমি বোঝার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনা কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ক্রীড়া প্রশিক্ষণের মতো চাপপূর্ণ পরিবেশে তরুণ ছাত্রদের মানসিক সুস্থতার দিকে আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পুলিশের তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছে এবং ঘটনাটি তাদের জন্যও অত্যন্ত দুঃখজনক।
রাজীবের পরিবার এখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। তবে তার সহপাঠীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তারা জানিয়েছে, রাজীব ছিলেন একজন উৎসাহী খেলোয়াড় এবং দলের জন্য নিবেদিত। তার এই আকস্মিক প্রয়াণ তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের সময় রাজীবের কক্ষ থেকে কোনো সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। তবে তার মোবাইল ফোন এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে ঘটনার কারণ সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার কথা ভাবছে।
এই ঘটনা সৈফাইয়ের মেজর ধ্যানচাঁদ স্পোর্টস কলেজের ইতিহাসে একটি দুঃখজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এটি শুধু একটি প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের হার নয়, বরং তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার একটি স্মারক। সমাজের সবাইকে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।