১৮ই জুন হিসোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে তাজিকিস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ (Tajikistan U23) জাতীয় দলের কাছে ৩-২ গোলে পরাজিত হলেও ভারতীয় অনূর্ধ্ব-২৩ দলের (Indian Football Team) পারফরম্যান্স ছিল চিত্তাকর্ষক। দুইবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত একমাত্র ১০ জনের দল নিয়ে হার মানতে হয় নৌসাদ মুসার ছেলেদের। তবে এই হারে রয়েছে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক, আবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতাও চোখে পড়েছে যা ভবিষ্যতের জন্য সংশোধনের ইঙ্গিত দেয়।
১. মাঝমাঠের নতুন মডেল: ম্যাকার্টন লুইস নিকসন
ভারতীয় ফুটবলে মাঝমাঠে এমন একজন ফুটবলারের প্রয়োজন বহুদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল, যিনি একই সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন, আবার প্রেসিং ও ট্যাকলে সক্রিয় থাকবেন। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের হয়ে খেলা ম্যাকার্টন লুইস নিকসন সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করলেন। গোলে সহায়তা করার পাশাপাশি তিনি দুর্দান্ত প্রক্রিয়া ও মুভমেন্টের মাধ্যমে দলের আক্রমণেও ভূমিকা রেখেছেন। এমনকি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বল জয় করেছেন একাধিকবার।
তার খেলা দেখে বোঝা গেল, একজন আদর্শ ভারতীয় মিডফিল্ডারের কেমন হওয়া উচিত। সুশৃঙ্খল, অ্যাগ্রেসিভ এবং খেলায় মনোযোগী – এই তিন গুণই তার খেলায় দেখা গেল।
২. অভিষেক সিংয়ের রক্ষণাত্মক দুর্বলতা স্পষ্ট
ভারতীয় ডিফেন্ডার অভিষেক সিং শুরুতে ভালই খেলেছিলেন। সেখানে মাঠের অনেকটা অংশ কাভার করেছেন, ট্যাকল করেছেন। কিন্তু তাজিকিস্তানের সমতাসূচক গোলে তার ভুল ছিল স্পষ্ট। তিনি ভুল পজিশনে ছিলেন এবং আনসোর খাবিবভকে ঠিকমতো মার্ক করতে পারেননি।
ক্রস ডিফেন্ড করতে গিয়ে তার অস্থিরতা এবং বলের ট্রাজেক্টরি পড়তে না পারার দুর্বলতা সামনে চলে এসেছে। তার রক্ষণাত্মক পজিশনিং ও গেম রিডিং দক্ষতা উন্নত করা প্রয়োজন যদি তিনি দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় দলের জন্য কার্যকর হতে চান।
৩. ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে অযথা চাপের মুখে ছেত্রী
আয়ুষ ছেত্রীকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে নামানোর সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ব্যর্থ প্রমাণ হয়েছে। শুরু থেকেই তিনি বলের দখলে আসতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, ভুল পাস এবং অপ্রয়োজনীয় ফাউল করে দলের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছিলেন। শেষ পর্যন্ত দুটি হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
ছেত্রীর টেকনিক্যাল দক্ষতা থাকলেও ডিফেন্সের সামনে তার উপস্থিতি স্বস্তি এনে দেয়নি। যদি তাকে এই পজিশনে খেলানো চালিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে তাকে শারীরিক সক্ষমতা ও গেম সেন্স অনেক বাড়াতে হবে।
৪. সোহেল-গগৈই জুটি শেখালেন কীভাবে সুযোগ কাজে লাগাতে হয়
ভারতের সিনিয়র দলের অন্যতম সমস্যা হলো গোলের সামনে সিদ্ধান্তহীনতা ও সুযোগ নষ্ট। তবে ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ফরোয়ার্ডরা এবার সেই দুর্বলতাকে ভুল প্রমাণ করলেন। সুহেল ভাট গোলের মুখে অসাধারণ একটি পজিশনিং ও ফিনিশিং দেখালেন, যা থেকে ভারত প্রথম লিড পায়।
পার্থিব গগৈই বদলি নামলেও তার প্রভাব ছিল বিশাল। দুর্দান্ত রান ও নিখুঁত ফিনিশিংয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন। তরুণ এই দুই ফরোয়ার্ডের ঠাণ্ডা মাথায় সুযোগ গ্রহণ সিনিয়র দলকে এক বড় বার্তা দিয়ে গেল ক্লিনিকাল হতে শিখতে হবে।
৫. সেট-পিস ডিফেন্ডিংয়ে পুরনো ব্যর্থতা আবারও দৃশ্যমান
তাজিকিস্তানের তিনটি গোলই এসেছে বাঁদিক থেকে আসা ক্রস ও সেট-পিস থেকে। প্রতিবারই ভারতীয় রক্ষণের খেলোয়াড়রা বলের পজিশন ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেননি। গোলকিপার প্রিয়াংশ দুবে, বিশেষ করে তৃতীয় গোলে, বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন এবং ভুলভাবে পাঞ্চ করতে গিয়ে গোল হজম করেন।
এই সমস্যা যদি এখনই সমাধান না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে প্রতিপক্ষের বড় দলগুলো এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ভারতকে আরও ভোগাবে। নওশাদ মুসাকে ডিফেন্সকে আরও সংগঠিত ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে।
ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ জাতীয় দলের এই হার হতাশাজনক হলেও, এতে লুকিয়ে আছে উন্নতির দিকনির্দেশ। কয়েকজন তরুণ ফুটবলার নিজেদের সক্ষমতা দেখিয়েছেন, আবার দলের কিছু মূলগত ত্রুটিও ধরা পড়েছে। যদি কোচিং স্টাফ এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতের ভারতীয় ফুটবল আরো দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারবে।
Indian Football Team put up a spirited performance against Tajikistan U23