প্রীতম সাঁতরা: ঝলমলে রবিবার। ঝলমলে নতুন বছরের প্রথম দিন। বাতাসে পুজোর গন্ধ। ময়দানে আজ বার পুজো।
তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই। তেতে উঠতে শুরু করেছিল পিয়ার্সন পল্লী প্রাইমারী স্কুলের মাঠ। বৈশাখের আগমন। শান্তিনিকেতন ট্রাইবাল অ্যাকাডেমিতে চলছিল বার পুজোর প্রস্তুতি। কলকাতার হাইভোল্টেজ পুজো-অনুষ্ঠান থেকে অনেক দূরে এই বার পুজোয় ঘরোয়া পরিবেশ। কন্সোলেট জেনারেল (জার্মানি-কলকাতা) এমএস বারবারা ভস এসেছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে। গ্রাম বাংলার মাটিতে প্রথমবার দেখলেন বার পুজো।
নামাবলী দিয়ে মাথা ঢেকে বার পুজো করতে বসেছিলেন ঠাকুরমশাই। অ্যাকাডেমির ছেলেরাই হাত লাগিয়েছিল পুজোর তোড়জোড়ে। নিজেদের হাতে কেটে দিচ্ছিল ফল, নিয়ে আসছিল পুজোর দরকারী সামগ্রী, উপাদান।
নিজের অ্যাকাডেমিতে পুজো। সকাল থেকে ব্যস্ত বিশ্বভারতী সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট লাইব্রেরিয়ান কৌশিক ঘোষ। তাঁর উদ্যোগেই এই অ্যাকাডেমির গোড়াপত্তন। শান্তিনিকেতনের আশেপাশে গ্রামের ছেলেদের ফুটবল খেলা শেখানোর তাগিদে শুরু করেছিলেন শান্তিনিকেতন ট্রাইবাল অ্যাকাডেমি। নিজের বেতন দিয়ে শুরু করেছিলেন এই ফুটবল বিদ্যালয়। ২০২১ থেকে ২০২৪। দেখতে দেখতে হতে চলল প্রায় তিনটে বছর।
কালিয়াগঞ্জ, পিয়ার্সন পল্লী, বালিপারা, বাগানপাড়া ইত্যাদি জায়গা থেকে ছেলেরা আসে ফুটবল শিখতে। বাংলার গ্রামীণ ফুটবলে সর্বত্র কম বেশি কিছু সাদৃশ্য রয়েছে- অর্থ কষ্ট, প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব, খেলাধুলা শেখার জন্য উপযুক্ত কোচিং ব্যবস্থা। কৌশিক ঘোষ নিজেও এক সময় ফুটবল খেলেছেন। ভালো ফুটবলার হওয়ার জন্য কী কী দরকার সে ব্যাপারে তাঁর ধারণা রয়েছে। বিশ্ব ভারতীতে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার আদিবাসী সমাজের আরও কাছে এসেছেন। সাধ্য মতো তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুরু করেছেন ট্রাইবাল অ্যাকাডেমি।
ময়দানের বার পুজোয় কোনও ভেদাভেদ হয় না। অ্যাকাডেমির অভিভাবকদের নজরে ছেলেরা নিজেদের উদ্যোগে পুজোর কাজকর্ম করল হাসিমুখে। তারাই তো প্রাণভোমরা। শাল পাতার থালায় পুজোর প্রসাদ। মাটিতে বসে মুড়ি, আলুর দম, বোঁদে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!