রহিম থেকে জামিল! ভারতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে শীর্ষ পাঁচ ভারতীয় কোচ

ভারতীয় ফুটবল দলের নতুন প্রধান কোচ হিসেবে খালিদ জামিলের নিয়োগ ১৩ বছর পর প্রথম ভারতীয় কোচের (Indian football coaches) আগমনকে চিহ্নিত করেছে। তিনি এমন এক…

Top 5 Indian Football Coaches Who Shaped the Blue Tigers’ Legacy

ভারতীয় ফুটবল দলের নতুন প্রধান কোচ হিসেবে খালিদ জামিলের নিয়োগ ১৩ বছর পর প্রথম ভারতীয় কোচের (Indian football coaches) আগমনকে চিহ্নিত করেছে। তিনি এমন এক সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন যখন ভারতীয় ফুটবল একটি নতুন দিশা খুঁজছে। জামিলের পূর্বসূরিদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ আবদুল রহিমের মতো কিংবদন্তি, যিনি ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের স্থপতি। এই কোচরা শুধু খেলোয়াড় নির্বাচন করেননি, তারা বিশ্বাস তৈরি করেছেন, স্বপ্নকে উজ্জীবিত করেছেন এবং একটি জাতির আশা বহন করেছেন। জামিলের জন্য এই কিংবদন্তিদের পথ অনুসরণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, তিনি অনুপ্রেরণার জন্য বেশি দূরে তাকাতে হবে না। এখানে আমরা ভারতীয় ফুটবল দলের ইতিহাসে শীর্ষ পাঁচ ভারতীয় কোচের কথা তুলে ধরছি, যাদের অবদান ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

৫. স্যাভিও মেদেইরা

   

গোয়ায় জন্মগ্রহণকারী স্যাভিও মেদেইরা সালগাঁওকারে তার পুরো খেলোয়াড়ি জীবন কাটিয়েছেন এবং ২০১১ সালে বব হটনের প্রস্থানের পর ভারতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তিনি ১৩টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেন এবং ৫টি জয় পান, যার মধ্যে ছিল ২০১১ সালের এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা। এই শিরোপা তিনি দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে জিতেছিলেন, যেখানে ফাইনালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জয় এসেছিল। তবে, ২০১২ সালের এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে কোনো জয় ছাড়াই ভারতের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া তার সময়কে কলঙ্কিত করেছিল। মেদেইরার সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রভাবশালী সময় ভারতীয় ফুটবলের রূপান্তর পর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

৪. প্রদীপ কুমার ব্যানার্জী (পি.কে. ব্যানার্জী)

প্রাক্তন খেলোয়াড় প্রদীপ কুমার ব্যানার্জী তিনটি ভিন্ন মেয়াদে ভারতীয় দলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময়ে ভারতীয় ফুটবল দল ষাটের দশকের প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছিল। ১৯৭০ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে তার নেতৃত্বে ভারত ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল, যা এই টুর্নামেন্টে ভারতের শেষ পদক। এছাড়া, ১৯৭১ সালে সিঙ্গাপুরে পেস্তা সুকান কাপ এবং তৃতীয় মেয়াদে সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জয় তার অর্জনের তালিকায় রয়েছে। ৩৫টি ম্যাচে তার দল ৭টি জয় এবং ১০টি ড্র পেয়েছিল, যা তার খেলোয়াড়দের উন্নতির ক্ষেত্রে তার তীক্ষ্ণ নজরকে প্রতিফলিত করে।

৩. বালাইদাস চ্যাটার্জী

বালাইদাস চ্যাটার্জী মাত্র ছয়টি ম্যাচে ভারতীয় দলের দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু তার সময় অত্যন্ত ফলপ্রসূ ছিল। বিশেষ করে তার দ্বিতীয় মেয়াদে, তিনি এশিয়ান কোয়াড্রাঙ্গুলার ফুটবল টুর্নামেন্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনটি ম্যাচেই জয় পান এবং চ্যাম্পিয়ন হন। ছয়টি ম্যাচে তার দল চারটি জয় পায়, যা ৬৬.৬৭% জয়ের হার নির্দেশ করে। চ্যাটার্জীর সময় ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছিল, যা পরবর্তী সফল বছরগুলোর পথ প্রশস্ত করে।

Advertisements

২. সৈয়দ নঈমুদ্দিন

হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী সৈয়দ নঈমুদ্দিন তিনটি ভিন্ন সময়ে ভারতীয় দলের দায়িত্ব পালন করেছেন, প্রতিবারই ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। ২৫টি ম্যাচে তিনি ৮টি জয় পেয়েছেন এবং দুটি এসএএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপ (১৯৯৭ এবং ২০০৫) জিতেছেন। তার কঠোর শৃঙ্খলা এবং ফিটনেসের উপর জোর দেওয়া ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স উন্নত করেছিল। নঈমুদ্দিন অর্জুন এবং দ্রোণাচার্য পুরস্কার জয়ী একমাত্র ফুটবলার, যা তার অবদানের গুরুত্ব তুলে ধরে। তার নেতৃত্বে ভারতীয় দল স্থিতিশীলতা এবং জয়ের ধারা ফিরে পায়, যা দুইবার শিরোপা হারানোর পর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল।

১. সৈয়দ আবদুল রহিম

‘মৌলবি সাহেব’ নামে পরিচিত সৈয়দ আবদুল রহিম ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে কিংবদন্তি কোচ। ১৯৫১ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তার মেয়াদে ভারত দুটি এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক (১৯৫১ এবং ১৯৬২) এবং ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান অর্জন করে। তার উদ্ভাবনী কোচিং পদ্ধতি, যেমন দুর্বল পায়ে খেলার টুর্নামেন্ট আয়োজন, খেলোয়াড়দের দক্ষতা বাড়িয়েছিল। তিনি নেভিল ডি’সুজা, পি.কে. ব্যানার্জী, পিটার থাঙ্গারাজ, চুনি গোস্বামীর মতো তারকাদের গড়ে তুলেছিলেন। তার ৪৮.৫৭% জয়ের হার এবং ‘এশিয়ার ব্রাজিল’ খ্যাতি ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের প্রতীক। ১৯৬৩ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে তার মৃত্যুর পর ভারত আর সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। তার জীবন নিয়ে অজয় দেবগন অভিনীত ‘ময়দান’ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যা তার অবদানের প্রমাণ।

খালিদ জামিলের নিয়োগ ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করছে। তিনি যখন সিএএফএ নেশনস কাপ ২০২৫ দিয়ে তার যাত্রা শুরু করবেন, তখন রহিম, নঈমুদ্দিন, চ্যাটার্জী, ব্যানার্জী এবং মেদেইরার মতো কিংবদন্তিদের উত্তরাধিকার তাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই কোচরা প্রমাণ করেছেন যে ভারতীয় ফুটবলের সম্ভাবনা অপার। জামিলের কাছে এখন সুযোগ রয়েছে এই উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং ভারতীয় ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। ভক্তরা আশাবাদী যে তার নেতৃত্বে ভারতীয় ফুটবল আবারও ‘এশিয়ার ব্রাজিল’ হয়ে উঠবে।