মালয়েশিয়া ফুটবলে শীর্ষ গোলদাতাদের অবদানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত

মালয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দল (Malaysia national team), যাকে “হারিমাউ মালায়া” নামে পরিচিত, তাদের ফুটবল ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৬৪ সালের গ্রীষ্মকালীন…

Malaysia National Football Team

মালয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দল (Malaysia national team), যাকে “হারিমাউ মালায়া” নামে পরিচিত, তাদের ফুটবল ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৬৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক পুরুষদের যোগ্যতা প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার মাধ্যমে এই দলের পথচলা শুরু হয়। এরপর থেকে তারা একাধিক বড় আসরে অংশগ্রহণ করেছে এবং বেশ কিছু প্রতিযোগিতায় সাফল্যও পেয়েছে। মালয়েশিয়া তাদের ঐতিহ্যবাহী “এএফএফ চ্যাম্পিয়নশিপ” শিরোপা ২০১০ সালে জিতেছিল, যেখানে তারা ইন্দোনেশিয়াকে ৪-২ অ্যাগ্রিগেট স্কোরে পরাজিত করে।

তবে, দীর্ঘ ইতিহাসে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হল দুটি এশিয়ান গেমস ব্রোঞ্জ পদক, একটি ১৯৬২ সালে জাকার্তা এবং অপরটি ১৯৭৪ সালে তেহরানে। তাদের ফুটবল উন্নতির অন্যতম কারণ হলো দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগগুলিতে প্রতিযোগিতামূলক মান এবং জাতীয় দলের বিভিন্ন ফুটবলারের পারফরম্যান্স। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো মালয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের শীর্ষ পাঁচ সক্রিয় গোলদাতাদের সম্পর্কে।

   

৫. পাওলো জোসু এবং স্টুয়ার্ট উইলকিন (৫ গোল)
বর্তমানে মালয়েশিয়া জাতীয় দলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার হলেন পাওলো জোসু এবং স্টুয়ার্ট উইলকিন, যারা উভয়ই পাঁচটি করে গোল করেছেন। পাওলো জোসু, যিনি বর্তমানে কুয়ালালামপুর সিটি এফসি’র হয়ে খেলে থাকেন, তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকে ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তার সর্বশেষ গোলটি তিনি চাইনিজ তাইপে ফুটবল দলের বিরুদ্ধে ১১ জুন ২০২৪ সালে করেছিলেন। এছাড়া, মালয়েশিয়া সুপার লিগে তিনি গত তিনটি ম্যাচে চারটি গোল করেছেন, যা তার গোল করার দুর্দান্ত ফর্মের পরিচায়ক।

স্টুয়ার্ট উইলকিন, যিনি সাবাহ এফসি’র একজন মিডফিল্ডার, তারও পাঁচটি গোল রয়েছে জাতীয় দলের হয়ে। তারও পারফরম্যান্স নজরকাড়া, তবে বর্তমানে তাকে কিছুটা কম ম্যাচ খেলতে দেখা যাচ্ছে। তবে, তিনি সুপার লিগে মৌসুমে তিনটি গোল করেছেন এবং খুব শীঘ্রই আরও গোল করার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. আরিফ আইমান (৭ গোল)
মালয়েশিয়া জাতীয় দলের অন্যতম উজ্জ্বল প্রতিভা আরিফ আইমান, যিনি গত তিন বছর ধারাবাহিকভাবে “ফুটবলার অব দ্য ইয়ার” পুরস্কার জিতেছেন। বর্তমানে ২২ বছর বয়সী এই রাইট উইঙ্গার, জনোর দারুল তাজিম এফসির হয়ে খেলে। তার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারে দুর্দান্ত প্রগতি হয়েছে, এবং তিনি এই মরসুমে ১১টি গোল করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তার সাতটি গোল এবং নয়টি অ্যাসিস্ট রয়েছে, যা তার দক্ষতার প্রমাণ।

এছাড়া, আরিফ আইমান বর্তমানে মালয়েশিয়ার অন্যতম সেরা প্লেমেকার হিসেবেও পরিচিত। তার অসাধারণ ড্রিবলিং এবং পাসিং দক্ষতা তাকে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করেছে। তিনি ২০২২ সালে মালয়েশিয়া কাপ এবং মালয়েশিয়া সুপার কাপসহ বেশ কিছু শিরোপা জিতেছেন।

৩. আখয়ার রশিদ (১০ গোল)
মালয়েশিয়া জাতীয় দলের আরেক অভিজ্ঞ ফুটবলার আখয়ার রশিদ, যিনি বর্তমানে তেরেঙ্গানু এফসি’র হয়ে খেলেন। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ৪৯ ম্যাচের মধ্যে ১০টি গোল এবং ১১টি অ্যাসিস্ট রয়েছে। তবে, চলতি মৌসুমে তাকে কিছুটা নিস্ক্রিয় দেখা গেছে, যেখানে তিনি শুধুমাত্র একটি গোল এবং একটি অ্যাসিস্ট করেছেন। আখ্যার রশিদ মূলত সেন্টার ফরওয়ার্ড হিসেবে খেলেন এবং তার শক্তিশালী শট এবং পজিশনিং তাকে জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার বানিয়েছে।

২. শফিক আহমেদ (১০ গোল)
শফিক আহমেদ, ২৫ বছর বয়সী সেন্টার ফরওয়ার্ড, বর্তমানে মালয়েশিয়া জাতীয় দলের অন্যতম শীর্ষ গোলদাতা। ৩৮ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ১০, এবং এছাড়াও ৫টি অ্যাসিস্ট রয়েছে। তিনি বেশ কিছু সময় জাতীয় দলের জন্য অনিয়মিত হলেও, তার দক্ষতা এবং গোল করার ক্ষমতা তাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে পরিণত করেছে। তার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক গোলটি ছিল ১৪ জুন ২০২৪ সালে বাংলাদেশ বিরুদ্ধে।

চলতি মৌসুমে, তিনি ১২টি ম্যাচে ২টি গোল করেছেন, যদিও তার ফর্ম কিছুটা কমে গেছে। তবে, তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আশা দেয় যে তিনি শীঘ্রই আরও গোল করতে সক্ষম হবেন।

১. সাফাওয়ি রাসিদ (২২ গোল)
মালয়েশিয়া জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা সাফাওয়ি রাসিদ, যিনি ২২টি গোল করেছেন এবং ৬১টি ম্যাচ খেলার মাধ্যমে শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে নিজের স্থান পাকা করেছেন। তার গোলের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় যে তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ২০২৪ সালের এই সিজনে, সাফাওয়ি দুটি আন্তর্জাতিক গোল করেছেন, যেগুলো ছিল ফিলিপিন্স এবং চাইনিজ তাইপে বিরুদ্ধে।

বর্তমানে, সাফাওয়ি রাসিদ তেরেঙ্গানু এফসি’র হয়ে খেলছেন এবং সেখানে তিনি ৭টি গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট করেছেন। তার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলের প্রধান গোলদাতার স্থান এনে দিয়েছে।

মালয়েশিয়া জাতীয় ফুটবল দলের এই শীর্ষ পাঁচ গোলদাতা দেশের ফুটবলের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের অবদানের ফলে মালয়েশিয়া ফুটবল দলের শীর্ষস্থানীয় শক্তি হয়ে উঠেছে এবং ভবিষ্যতে আরও সাফল্য অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে।