ক্রিকেট ভারতে একটি ধর্মের মতো, এবং টেস্ট ক্রিকেট এই খেলার সবচেয়ে পবিত্র রূপ। এই দীর্ঘ ফরম্যাটে ভারতীয় ব্যাটাররা তাদের দক্ষতা ও ধৈর্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে নিজেদের নাম উজ্জ্বল করেছেন। কিছু কিংবদন্তি ব্যাটার একটি টেস্ট সিরিজে এত রান করেছেন যে, তাদের নাম ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা এমনই শীর্ষ ১০ ভারতীয় ব্যাটারের (Top 10 Indian Batters:) কথা জানব, যারা একটি টেস্ট সিরিজে সর্বাধিক রান সংগ্রহ করেছেন।
১. সুনীল গাভাসকার – ৭৭৪ রান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৭১
ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকার প্রথম ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে একটি টেস্ট সিরিজে ৭০০-র বেশি রান সংগ্রহ করেন। ১৯৭০-৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিনি তার অভিষেক সিরিজেই এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে গাভাসকার ৮ ইনিংসে ৭৭৪ রান করেন, যার মধ্যে ছিল চারটি সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি। সিরিজের শেষ টেস্টে তার ১২৪ এবং ২২০ রানের ইনিংস ছিল সিরিজের হাইলাইট। গাভাসকারের এই অসাধারণ পারফরম্যান্সের সুবাদে ভারত ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়।
২. শুভমান গিল – ৭৫৪ রান বনাম ইংল্যান্ড, ২০২৫
২০২৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে শুভমান গিল টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক করেন এবং ব্যাট হাতে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান। হেডিংলেতে প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি, এজবাস্টনে ডাবল সেঞ্চুরি ও আরেকটি সেঞ্চুরি, এবং ওল্ড ট্রাফোর্ডে আরেকটি সেঞ্চুরি করে তিনি সিরিজে মোট ৭৫৪ রান সংগ্রহ করেন। ৭৫.৪০ গড়ে চারটি সেঞ্চুরি সহ গিল তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে একটি দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজে ৭০০-র বেশি রান করেন।
৩. সুনীল গাভাসকার – ৭৩২ রান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৭৮/৭৯
সুনীল গাভাসকার একমাত্র ভারতীয় ব্যাটার যিনি দুইবার একটি টেস্ট সিরিজে ৭০০-র বেশি রান করেছেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে ভারতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছয় ম্যাচের সিরিজে গাভাসকার ৯ ইনিংসে ৭৩২ রান করেন। ৯১.৫০ গড়ে তিনি চারটি সেঞ্চুরি এবং একটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২০৫ রান। ভারত এই সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতে নেয়।
৪. যশস্বী জয়সওয়াল – ৭১২ রান বনাম ইংল্যান্ড, ২০২৪
২০২৪ সালে ভারতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরোয়া সিরিজে তরুণ ব্যাটার যশস্বী জয়সওয়াল ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। পাঁচ টেস্টে তিনি ৭১২ রান করেন, যার মধ্যে ছিল দুটি ডাবল সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি। ৮৯ গড়ে জয়সওয়াল সুনীল গাভাসকারের পর দ্বিতীয় ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে একটি দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজে ৭০০-র বেশি রান করেন।
৫. বিরাট কোহলি – ৬৯২ রান বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০১৪/১৫
বিরাট কোহলি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে ভালোবাসেন, এবং ২০১৪-১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি তা প্রমাণ করেন। চার ম্যাচের সিরিজে তিনি ৬৯২ রান করেন, যার মধ্যে ছিল চারটি সেঞ্চুরি এবং একটি হাফ-সেঞ্চুরি। ৮৬.৫০ গড়ে তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৬৯। যদিও ভারত সিরিজটি ২-০ হারে, কোহলির পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ।
৬. বিরাট কোহলি – ৬৫৫ রান বনাম ইংল্যান্ড, ২০১৬
২০১৬-১৭ সালে ভারতে ইংল্যান্ডের সফরে বিরাট কোহলি পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৬৫৫ রান করেন। দুটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফ-সেঞ্চুরি সহ তার সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২৩৫। ১০৯.১৬ গড়ে তার এই পারফরম্যান্স ভারতকে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে সহায়তা করে।
৭. দিলীপ সরদেশাই – ৬৪২ রান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৯৭১
১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দিলীপ সরদেশাই পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৬৪২ রান করেন। তিনটি সেঞ্চুরি এবং একটি হাফ-সেঞ্চুরি সহ তার এই পারফরম্যান্স ভারতকে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে সহায়তা করে। এই সিরিজে সুনীল গাভাসকারও অভিষেক করেন এবং সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হন।
৮. রাহুল দ্রাবিড় – ৬১৯ রান বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২০০৩/০৪
রাহুল দ্রাবিড় ২০০৩-০৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ৬১৯ রান করেন। ৮ ইনিংসে ১২৩.৮০ গড়ে তিনি একটি ডাবল সেঞ্চুরি (২৩৩) এবং তিনটি হাফ-সেঞ্চুরি করেন। অ্যাডিলেডে তার ডাবল সেঞ্চুরি ভারতকে জয় এনে দেয় এবং সিরিজটি ১-১ ড্র হয়।
৯. বিরাট কোহলি – ৬১০ রান বনাম শ্রীলঙ্কা, ২০১৭
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতে তিন ম্যাচের সিরিজে বিরাট কোহলি ৬১০ রান করেন। পাঁচ ইনিংসে তার স্কোর ছিল ০, ১০৪*, ২১৩, ২৪৩, এবং ৫০। এই অসাধারণ পারফরম্যান্স ভারতকে সিরিজে আধিপত্য বিস্তার করতে সহায়তা করে।
১০. রাহুল দ্রাবিড় – ৬০২ রান বনাম ইংল্যান্ড, ২০০২
রাহুল দ্রাবিড় ২০০২ সালে ইংল্যান্ড সফরে চার ম্যাচের সিরিজে ৬০২ রান করেন। ১০০.৩৩ গড়ে তিনি নটিংহ্যামে ১১৫, হেডিংলেতে ১৪৮, এবং ওভালে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেন। তার এই পারফরম্যান্স সিরিজটিকে ড্র করতে সহায়তা করে।
ভারতীয় ক্রিকেটের এই কিংবদন্তিরা তাদের অসাধারণ ব্যাটিং দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের গৌরব বাড়িয়েছেন। সুনীল গাভাসকার থেকে শুভমান গিল, প্রত্যেকেই তাদের সময়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিলেন। এই তালিকা প্রমাণ করে যে, ভারতীয় ক্রিকেটের শক্তি কেবল বর্তমানে নয়, অতীতেও ছিল অতুলনীয়।
শব্দ সংখ্যা