তৎকালীন মাওবাদী এলাকায় নাইট ম্যারাথনের প্রচারে টলিউড

এই প্রথম বাংলায় নাইট ম্যারাথনের (Night Marathon) প্রচারে নামল টলিউড তারকারা (Tollywood Celebrities)। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের (Purulia District Police) উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে তাদের তরফে।…

Ajodhya Night Marathon in Purulia

এই প্রথম বাংলায় নাইট ম্যারাথনের (Night Marathon) প্রচারে নামল টলিউড তারকারা (Tollywood Celebrities)। পুরুলিয়া জেলা পুলিশের (Purulia District Police) উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে তাদের তরফে। চলতি মাসের ২২ তারিখ, পুরুলিয়া (Purulia) জেলার অযোধ্যা পাহাড়ে (Ajodhya Hill) এই ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে, এক নতুন রেকর্ড তৈরি করতে চলেছে। এর আগে এই পাহাড় মাওবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত ছিল, কিন্তু এখন সেই স্থান পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

অযোধ্যা পাহাড়ের বিশেষত্ব হল এটি একদিকে পাহাড়ের সঙ্গে জঙ্গলের আবহ, অন্যদিকে রাতে পাহাড়ের প্রকৃতি এক অন্যরকম সৌন্দর্য উপস্থাপন করে। এই ম্যারাথনটি শুধু খেলাধুলার অনুষ্ঠান নয়, বরং এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগও। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে শুধু নকশাল আন্দোলনের অতীত থেকে বেরিয়ে এসে, পাহাড়ের এলাকায় পর্যটনকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। একদিকে যেমন মানুষের মধ্যে সুস্থ জীবনযাপন এবং শরীরচর্চার আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে, তেমনি পর্যটনের বিকাশের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

   

পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ম্যারাথনের প্রচার শুরু করেছে। টলিউডের অনেক বড় তারকা এই প্রচারে অংশ নিয়েছেন। শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায় সহ একাধিক জনপ্রিয় তারকা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বার্তা দিয়ে পুরুলিয়ার নাইট ম্যারাথনকে সারা রাজ্যে পরিচিত করে তুলছেন। এই তারকাদের বার্তা, ম্যারাথনে অংশ নিতে যেন দর্শকরা দ্রুত নাম নথিভুক্ত করেন, এমনভাবেই জনগণকে উৎসাহিত করছে। তাদের ভিডিও বার্তা ম্যারাথনকে আরও রঙিন এবং আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ম্যারাথনটির জন্য মোট ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৫০০ পার হয়ে গিয়েছে। পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন থানায় অফলাইনেও নাম নথিভুক্তকরণের কাজ হয়েছে। পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এই ম্যারাথন শুধু সাধারণ জনগণের জন্য নয়, এতে প্রখ্যাত অ্যাথলিটরাও অংশগ্রহণ করবেন, তবে তাদের নাম এখনই প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না।

এছাড়া, ম্যারাথনের দিন সঙ্গীত শিল্পীরা আসবেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে। এই সবকিছু মিলিয়ে, পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্দেশ্য শুধু এক ম্যারাথন আয়োজন করা নয়, বরং অযোধ্যা পাহাড়ের মতো অঞ্চলের পর্যটন শিল্প এবং এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করা। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই উদ্যোগের বিষয়ে বলেছেন, “আমরা চাচ্ছি যে অযোধ্যা পাহাড় শুধু পর্যটকদের আকর্ষণ করুক, পাশাপাশি এখানকার মানুষের জীবিকা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখুক।”

মাওবাদী আন্দোলনের প্রভাবে একসময় অযোধ্যা পাহাড় ছিল একটি অশান্ত এলাকা। বাম আমলে সেখানে মাওবাদীদের নানা ক্যাম্প ছিল, এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালাত। তবে রাজ্য সরকারের পরিবর্তনের পর এই পরিস্থিতি বদলে গেছে। বর্তমানে, পুরুলিয়া জেলার এই পাহাড়টি শান্তিপূর্ণ এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। পুরুলিয়া জেলা পুলিশও এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কাজ করছে এবং নাইট ম্যারাথন তাদের এই প্রচেষ্টার এক বড় অংশ।

এই ম্যারাথনের মাধ্যমে পুরুলিয়া শুধু একটি নতুন স্পোর্টস ইভেন্ট উপহার পাচ্ছে না, বরং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের উন্নয়ন একে অপরকে সহায়তা করবে। ২২ ফেব্রুয়ারি রাতের এই ম্যারাথন শুধু শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাই হবে না, বরং পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা পাহাড়ের রহস্যময় রাতে এক নতুন পর্যটন শিল্পের উন্মোচন হবে।

পুরুলিয়া জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে এবং এখানে অংশগ্রহণকারীরা শুধু শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে না, বরং তারা এক নতুন ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠবে।