Sunil Chhetri comeback: “সময়ই বলে দেবে”- সুনীলের প্রত্যাবর্তনে ‘বিস্ফোরক’ বাইচুং

ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি এবং প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভূটিয়া (Bhaichung Bhutia) সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) জাতীয় দলে অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন নিয়ে তাঁর স্পষ্ট মতামত…

"Time Will Tell": Bhaichung Bhutia Reacts to Sunil Chhetri’s Return

short-samachar

ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি এবং প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভূটিয়া (Bhaichung Bhutia) সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) জাতীয় দলে অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন নিয়ে তাঁর স্পষ্ট মতামত জানিয়েছেন। ৪৮ বছর বয়সী এই ফুটবল তারকা, যিনি একসময় ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের মতো ক্লাবের গর্ব ছিলেন, ছেত্রীর ফিরে আসাকে একদিকে জাতীয় দলের জন্য “সুসংবাদ” বলে স্বাগত জানিয়েছেন, অন্যদিকে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, এই প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ উন্নতি এবং তরুণ খেলোয়াড়দের বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

   

সুনীল ছেত্রী, যিনি ২০২৪ সালের জুন মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন, আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারতকে সাহায্য করার জন্য আবারও জাতীয় দলে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৪০ বছর বয়সী এই তারকা ফরোয়ার্ড, যিনি ৯৪টি গোল করে ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ সক্রিয় গোলদাতা, তাঁর এই সিদ্ধান্তে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তবে ভূটিয়ার মতে, এই ফিরে আসা একটি দ্বিমুখী তলোয়ারের মতো—একদিকে তাৎক্ষণিক সাফল্য আনতে পারে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

ভূটিয়ার মিশ্র অনুভূতি
ভাইচুং ভূটিয়া স্পোর্টজউইকি-র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, “সুনীল ছেত্রী অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরে আসছেন, এটা জাতীয় দলের জন্য সুসংবাদ। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে এটা ভারতীয় ফুটবলের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি ও বিকাশে সাহায্য করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমার মনে হয় না এটা ভারতীয় ফুটবলের অগ্রগতি ও বিকাশে সহায়ক হবে।” ভূটিয়া উল্লেখ করেছেন যে ২০২৪ সাল ভারতীয় জাতীয় দলের জন্য একটি বিপর্যয়কর বছর ছিল। ‘ব্লু টাইগার্স’ গত এক বছরে একটিও ম্যাচ জিততে পারেনি। এই দুর্বল পারফরম্যান্সের জন্য প্রধান কোচ মানোলো মার্কেজ এবং অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে। ২০২৫ সালে তারা আরও ভালো ফলাফলের আশা করছে।

ভূটিয়ার মতে, মার্কেজের উচিত ছিল তরুণ খেলোয়াড়দের ওপর ভরসা করা। এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারত গ্রুপ বি-তে বাংলাদেশ, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে রয়েছে। ভূটিয়া মনে করেন, এটি একটি তুলনামূলকভাবে সহজ গ্রুপ এবং ভারতের জন্য যোগ্যতা অর্জনের পথ সুগম। তিনি বলেন, “এই বছর আমরা বাংলাদেশ, হংকং এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে একটি গ্রুপে আছি। আমার মনে হয় এটি যোগ্যতা অর্জনের জন্য বেশ ভালো গ্রুপ—অপেক্ষাকৃত সহজ। হয়তো মানোলো মার্কেজ তরুণ ভারতীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে একটু ঝুঁকি নিতে পারতেন এবং তবুও যোগ্যতা অর্জন করতে পারতেন।” গত ২৩টি এশিয়ান কাপে ভারত যোগ্যতা অর্জন করেছে, এবং ভূটিয়া মনে করেন এই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে আসা দলের পক্ষে সম্ভব হতো।

ছেত্রীর ফর্মে ভূটিয়ার প্রশংসা
‘সিকিমিজ স্নাইপার’ নামে খ্যাত ভূটিয়া ছেত্রীর সাম্প্রতিক ফর্মের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ভারতীয় ফুটবল সমর্থকই অস্বীকার করতে পারবেন না যে ছেত্রী এই মরশুমে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, “সুনীল ছেত্রীর এই আইএসএল মরশুম দারুণ কেটেছে। তিনি ১২টি গোল করেছেন এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন। কিন্তু এর একটি প্রধান কারণ হল তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছিলেন। ফলে তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সতেজ ছিলেন।” এই সতেজতাই ছেত্রীকে আবারও জাতীয় দলে প্রভাব ফেলতে সক্ষম করে তুলবে বলে ভূটিয়া বিশ্বাস করেন।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে শঙ্কা
ভূটিয়া যদিও ছেত্রীর প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন, তিনি এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, “সময়ই বলে দেবে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কি না।” তাঁর মতে, ছেত্রীর ওপর নির্ভর করা তরুণ প্রজন্মের খেলোয়াড়দের উত্থানে বিলম্ব ঘটাতে পারে। ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ নতুন প্রতিভার ওপর নির্ভরশীল, এবং ছেত্রীর ফিরে আসা সেই প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিতে পারে। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে আসন্ন ম্যাচগুলোতে ছেত্রীর অভিজ্ঞতা দলের জন্য মূল্যবান হবে।

কলকাতার প্রেক্ষাপটে ফুটবল
কলকাতা, যাকে ভারতীয় ফুটবলের ‘মক্কা’ বলা হয়, এই প্রত্যাবর্তনের খবরে উত্তেজিত। ছেত্রী এর আগে ২০১১ সালে কলকাতায় মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে জোড়া গোল করে ভারতকে ৩-২ গোলে জিতিয়েছিলেন। সমর্থকরা আশা করছেন, এই প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে ভূটিয়ার মতো কিংবদন্তির মতামত ভক্তদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করেছে—একদিকে ছেত্রীর ফিরে আসায় আনন্দ, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ।

আসন্ন চ্যালেঞ্জ
২০২৫ সাল ভারতীয় ফুটবলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বছর। এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভারতের পারফরম্যান্স দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। মার্কেজ এবং এআইএফএফ-এর এই সিদ্ধান্ত—ছেত্রীকে ফিরিয়ে আনা—কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা সময়ই বলে দেবে। ভূটিয়ার মতো অভিজ্ঞ ক্রীড়াবিদদের মতামত এই বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে। ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন কি ভারতকে তাৎক্ষণিক সাফল্য দেবে, নাকি তরুণ প্রজন্মের উত্থানে বাধা হয়ে দাঁড়াবে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি আবেগঘন মুহূর্ত। ভাইচুং ভূটিয়ার মিশ্র প্রতিক্রিয়া এই সিদ্ধান্তের দুটি দিক তুলে ধরেছে—একটি স্বল্পমেয়াদি আশা, অন্যটি দীর্ঘমেয়াদি শঙ্কা। বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা, যারা ছেত্রীকে সবসময় সমর্থন করে এসেছে, এখন এই দুই কিংবদন্তির মধ্যে বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। সময়ই বলে দেবে, এই প্রত্যাবর্তন ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি নতুন সূর্যোদয় নিয়ে আসবে, নাকি ভবিষ্যতের ছায়া আরও গাঢ় করবে।