হেডিংলির পিচে চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে শোয়েব বশির ও রবীন্দ্র জাদেজার বল যখন প্রচুর টার্ন নিচ্ছিল, তখনই ক্রিকেট মহলে একটাই প্রশ্ন উঠেছিল ‘কুলদীপ যাদব কোথায়?’ ভারতীয় বোলারদের (Indian Cricket Team) মধ্যে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও শার্দুল ঠাকুর রান খরচ করেছেন যথাক্রমে ছয় ও পাঁচের বেশি ইকনমিতে, আর জাদেজাও ক্যারিয়ারের প্রথমবার টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ১০০ রান দিয়েছেন। সেই সুযোগে ইংল্যান্ডের (England) বেন ডাকেট, জ্যাক ক্রলি, জো রুট, বেন স্টোকস ও জেমি স্মিথদের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ৩৭১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে ফেলেছে ইংল্যান্ড। এই দৃশ্য দেখেই অনেকেই প্রশ্ন করছেন কুলদীপের (Kuldeep Yadav) মতো একজন ভিন্নধর্মী স্পিনার থাকলে কি ফল অন্যরকম হতো না?
ভারতীয় দল (Indian Cricket Team) এখন দ্বিতীয় টেস্টের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। বার্মিংহ্যামে যখন প্রথম নেট সেশন শুরু হয়, তখন বাঁদিকের নেটে নজর ছিল সবার। সেখানে বল করছিলেন কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। ব্যাট করছিলেন ঋষভ পন্থ, শুভমন গিল, যশস্বী জয়সওয়াল, কেএল রাহুল, করুণ নায়ার ও সাই সুদর্শন। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন কুলদীপ। তার বল ঘুরছিল দুই দিকেই। পেস ও ফ্লাইটের বৈচিত্র্যে বিভ্রান্ত হয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাও। এমনকি ঋষভ পন্থও, যিনি স্পিনারদের সহজেই সামলাতে পারেন। তিনিও বারবার কুলদীপের গুগলিতে ধরা পড়েছেন। গিল ও জয়সওয়ালকেও একাধিকবার পরাস্ত করেছেন তিনি।
কুলদীপ যাদবের ভাগ্য বড়ই প্রতিকূল। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও জাদেজার যুগলবন্দির মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন তিনি। মাত্র ১৩টি টেস্টে খেলেই ৫৬ উইকেট নিয়েছেন, গড় মাত্র ২২.১৬। কিন্তু বিদেশের মাটিতে প্রায়শই দলের সমীকরণে বাদ পড়েছেন। বিশেষ করে জাদেজার ব্যাটিং সামর্থ্যের কারণে। অথচ, কুলদীপ নিজেও একবার ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি করেছেন, ছয়টি অর্ধশতক রয়েছে তার ঝুলিতে।
২০২৪ সালের ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন কুলদীপ, গড় ২০.১৫। তখন অশ্বিন ও জাদেজাও ছিলেন দলে। তবু কুলদীপ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ম্যাচ ঘুরিয়েছেন। এই পারফরম্যান্স প্রমাণ করে, তিনি এখন শুধুই বিকল্প নন, বরং মূল শক্তি হতে পারেন ভারতের টেস্ট দলে।
২০১৯ সালের সিডনি টেস্টে শেষবার কোনও “নন-অশ্বিন-জাদেজা” স্পিনার খেলেছিলেন বিদেশের মাটিতে। সেদিনই কুলদীপ নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। তৎকালীন কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছিলেন, “ওভারসিজে কুলদীপ আমাদের এক নম্বর স্পিনার।” কিন্তু সেই ম্যাচের পর আর কোনো সোনা ফলেনি কুলদীপের ভাগ্যে।
এবার এজবাস্টনে (Edgbaston) আবহাওয়া থাকবে উষ্ণ, মাঠের পিচও রুক্ষ ও শুষ্ক বলে জানা গিয়েছে। সুতরাং বল টার্ন করবে, এক্ষেত্রেও যা কুলদীপের জন্য আদর্শ। ইংল্যান্ডের ব্যাজবল দর্শনের বিরুদ্ধে কাউন্টার অ্যাটাক করতে দরকার এমন একজন বোলার, যিনি শুধু লাইনে বল করে যাবেন না, উইকেট তুলে নিতে পারবেন। সেই কাজটাই করতে পারেন কুলদীপ।
যদি সত্যিই ভারত ২০টি উইকেট নেওয়ার কথা ভাবে, তবে কুলদীপকে বসিয়ে রাখলে তা সম্ভব নয়। এজবাস্টনে তাকে সুযোগ দিলে, হয়তো আবার প্রমাণ করতে পারবেন— কেন তাকে ২০১৯-এ “বিদেশের সেরা স্পিনার” বলা হয়েছিল। ষোল বছর পরে সিডনির সেই জ্বলন্ত পারফরম্যান্স আবার ফিরে আসুক ইংল্যান্ডের মাটিতে, এটাই চাইছে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা। এবার সময় এসেছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কুলদীপের উপর আস্থা রাখার।
Time for Indian Cricket Team to trust spinner Kuldeep Yadav