থাইল্যান্ডের (Thailand) বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে পরাজয় হলেও ভারতীয় ফুটবল দলের (Indian Football Team) খেলোয়াড়দের কিছু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আন্তর্জাতিক এই প্রীতি ম্যাচটি ছিল মূলত এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭ প্রস্তুতির (AFC Asisan Cup 2027 qualifier) অংশ, যেখানে ভারত আগামী ১০ জুন মুখোমুখি হবে হংকংয়ের (Hong Kong)।
পরাজয়ের ফলাফল যতটা হতাশাজনক, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ততটাই উৎসাহজনক। ভারতীয় শিবিরে কয়েকজন তরুণ ও অভিজ্ঞ ফুটবলার নিজেদের প্রতিভা ও সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়েছেন। নিচে আলোচনা করা হলো থাইল্যান্ড ম্যাচে ভারতের তিনজন সেরা পারফরমার সম্পর্কে।
৩. লিস্টন কোলাসো
ভারতের আক্রমণভাগে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন লিস্টন কোলাসো। যদিও তিনি এক-দুটি সুবর্ণ সুযোগ মিস করেছেন, তবুও পুরো ম্যাচজুড়ে তাঁর সক্রিয়তা ও আগ্রাসী মনোভাব থাইল্যান্ডের রক্ষণভাগকে চাপের মধ্যে রেখেছিল।
লেফ্ট উইং থেকে খেলতে থাকা কোলাসো ২৬টি পাসের মধ্যে ২১টি সফলভাবে সম্পন্ন করেন, যা ৮১% নিখুঁত পাসিং রেট নির্দেশ করে। তিনি পাঁচটি শট নেন, যার মধ্যে দুটি ছিল লক্ষ্যে। মোট ৬৩টি বল স্পর্শ করে, যা ভারতীয় ফরোয়ার্ডদের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।
গতি, ড্রিবলিং এবং সাহসী আক্রমণের কারণে লিস্টন ভারতের আক্রমণের অন্যতম প্রধান অস্ত্র ছিলেন। যদিও গোলের সামনে আরও কার্যকর হতে হবে, তবে তার পারফরম্যান্স আগামী ম্যাচগুলোতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে।
২. অনোয়ার আলি
রক্ষণভাগের প্রাণভোমরা ছিলেন অনোয়ার আলি। থাইল্যান্ড যখন একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছিল, তখন আলি দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভারতীয় রক্ষণ সামলে রাখেন।
তিনি তিনটি ট্যাকল জিতেছেন, একটি ক্লিয়ারেন্স ও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেপশন করেছেন। বল পজিশনের সময় তাঁর শান্ত স্বভাব ও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া দলের জন্য কার্যকরী ছিল। তিনি ৫১টি পাসের মধ্যে ৪৪টি সফলভাবে সম্পন্ন করেন, ৮৬% পাসিং একুরেসি নিয়ে।
ভারতের মিডফিল্ড যখন নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল, তখন অনোয়ারের বল বিল্ড-আপ ও পাসিং দক্ষতা দলকে সামনের দিকে ঠেলতে সাহায্য করে।
১. টেকচাম অভিষেক সিং
মাত্র দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলা সত্ত্বেও অভিষেক সিং এমন একটি পারফরম্যান্স দিয়েছেন যা অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের কাছ থেকেও প্রত্যাশা করা যায় না। লেফট-ব্যাক হিসেবে মাঠে নামা এই তরুণ রক্ষণভাগে দারুণ নিরাপত্তা প্রদান করেন।
তিনি ৩৩টি পাসের মধ্যে ৩১টি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। ৯৪% নিখুঁত পাসিং রেট একটি ব্যতিক্রমী সংখ্যা। দুইটি ইন্টারসেপশন, একটি ক্লিয়ারেন্স এবং একটি এয়ার ডুয়েল জিতে নেওয়া তার আত্মবিশ্বাস ও পরিপক্বতা ফুটিয়ে তোলে।
অভিষেকের ট্যাকটিক্যাল ডিসিপ্লিন, পজিশনিং এবং সতীর্থদের সঙ্গে সমন্বয় ভারতীয় ডিফেন্সকে অনেকটাই সংগঠিত রাখে। যেভাবে তিনি থাইল্যান্ডের দ্রুত কাউন্টার ও ডিপ পাস ঠেকিয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।
যদিও স্কোরবোর্ড ভারতের পক্ষে ছিল না, কিন্তু কিছু পারফরম্যান্স ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক। কোচ মানোলো মার্কুয়েজ এই খেলোয়াড়দের উপর ভরসা রেখে হংকংয়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত দল নামাতে পারবেন বলে আশা করা যায়। ভারতের ফুটবলে নতুন প্রজন্মের এই ধরনের আত্মপ্রকাশ এক নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দেয়।