ভারতীয় ফুটবল দল আগামীকাল, বুধবার মালদ্বীপ জাতীয় ফুটবল দলের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামছে (India vs Maldives)। শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি ২০২৫ সালে দুই দলের প্রথম আন্তর্জাতিক লড়াই হবে। ভারতের ব্লু টাইগার্স এই ম্যাচটিকে ২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপ যোগ্যতা অর্জনের প্রথম ম্যাচের (২৫ মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে) প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
কোচ মানোলো মার্কুয়েজের দল মালদ্বীপের রেড স্ন্যাপার্সের কাছ থেকে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের আশা করছে। ২০২৪ সালে মালদ্বীপ খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি, তবে তারা একটি জেদি এবং অপ্রত্যাশিত প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। তাদের দলের কয়েকজন খেলোয়াড় এমন পারফরম্যান্স দিতে পারেন, যা ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে সক্ষম। এখানে আমরা মালদ্বীপের তিন খেলোয়াড়ের কথা তুলে ধরছি, যাদের দিকে ভারতীয় দলকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
৩. ইব্রাহিম মাহুদ্দী: মিডফিল্ডের শক্তি
মালদ্বীপের মিডফিল্ডার ইব্রাহিম মাহুদ্দী ভারতের বিরুদ্ধে খেলার ক্ষেত্রে একটি পরিচিত নাম। ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে ২-১ হারের ম্যাচে গোল করেছিলেন এবং রেড স্ন্যাপার্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিলেন। এই ৩১ বছর বয়সী খেলোয়াড় এখন দলের কেন্দ্রীয় মিডফিল্ডে গভীর ভূমিকায় খেলেন, তবে তাঁর হাতে এখনও অনেক কৌশল রয়েছে।
Also Read | শিলংয়ের বুকে ফুটবলারদের পারফরমেন্স নিয়ে আশাবাদী মানোলো
মাহুদ্দী একজন পরিশ্রমী এবং নিবেদিতপ্রাণ মিডফিল্ডার, যিনি দলের জন্য অনেক দূরত্ব কভার করতে পারেন। তাঁর খেলা পড়ার অসাধারণ ক্ষমতা এবং রক্ষণে সাহায্য করার জন্য পিছনে ফিরে আসার প্রবণতা তাঁকে বিশেষ করে তোলে। তিনি আক্রমণাত্মক পাস দিয়ে বিপজ্জনক এলাকায় বল পৌঁছে দিতে পারেন, যা তাঁর সৃজনশীলতার প্রমাণ। ভারতের মিডফিল্ডের প্রবাহ ব্যাহত করতে মাহুদ্দীকে একটি শক্ত পারফরম্যান্স দিতে হবে। তাঁর অভিজ্ঞতা ভারতীয় মিডফিল্ডারদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
২. আলি ফাসির: আক্রমণের অভিজ্ঞ নেতা
ভারতীয় ফুটবল দলে যেখানে সুনীল ছেত্রী তাঁর গৌরবময় প্রত্যাবর্তন করছেন, সেখানে মালদ্বীপের আক্রমণে তাদের অভিজ্ঞ নেতা হলেন আলি ফাসির। ৩৬ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড গত ১৫ বছর ধরে মালদ্বীপের হয়ে ধারাবাহিকভাবে খেলছেন। ২০১০ সালে পেশাদার ফুটবলে পা রাখার পর তিনি জাতীয় দলের হয়ে ১১টি গোল করেছেন এবং বর্তমানে তিনি দলের সবচেয়ে সফল গোলদাতা।
ফাসিরের বুদ্ধিদীপ্ত অফ-দ্য-বল রান এবং ফাইনাল থার্ডে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে বিপজ্জনক করে তোলে। বয়সের কারণে তাঁর গতি কমলেও, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে তিনি ভারতীয় ডিফেন্ডারদের সমস্যায় ফেলতে পারেন। তাঁর পরিচ্ছন্ন ফিনিশিং এবং সুযোগকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা তাঁকে আক্রমণে বড় হুমকি করে। যদি তাঁকে বেশি জায়গা দেওয়া হয়, তবে ভারতের রক্ষণের জন্য তিনি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারেন।
১. হাসান নাইজ: আক্রমণের গতিশীল শক্তি
মালদ্বীপ সম্ভবত ভারতের বিরুদ্ধে একটি রক্ষণাত্মক কৌশল নেবে, তবে তাদের ট্রানজিশনে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কোচ আলি সুজাইনের অধীনে রেড স্ন্যাপার্স ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলার প্রবণতা দেখিয়েছে, যেখানে ফরোয়ার্ডদের বেশি সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা দেওয়া হয়। আলি ফাসির ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে থাকলেও, হাসান নাইজ নামে একজন গতিশীল ফরোয়ার্ড তাদের আক্রমণে শক্তি যোগ করেছেন।
হাসান নাইজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে দারুণ রেকর্ড গড়েছেন। ৪৩টি ম্যাচে তিনি ১০টি গোল করেছেন। তিনি একজন চতুর ফরোয়ার্ড, যিনি প্রতিপক্ষের হাফে অবিরাম দৌড়ে ডিফেন্ডারদের ক্লান্ত করে দেন এবং সতীর্থদের সঙ্গে চমৎকার লিঙ্ক-আপ খেলেন। তাঁর ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং এবং সুযোগকে কাজে লাগানোর দক্ষতা তাঁকে আলাদা করে।
নাইজ যদি বেশি জায়গা পান, তবে ভারতীয় রক্ষণের জন্য তিনি বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারেন। ফাইনাল থার্ডে তাঁর পরিশ্রমী মুভমেন্ট এবং অপ্রত্যাশিত খেলার ধরন ভারতীয় ডিফেন্ডারদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলবে। তাঁকে খেলা থেকে বাদ দিতে ভারতের রক্ষণকে তাঁর উপর কড়া নজর রাখতে হবে।
ম্যাচের প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালে ভারতীয় দল কোনো জয় পায়নি, যা তাদের জন্য হতাশার কারণ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তারা ১২৬তম স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, মালদ্বীপ ১৬২তম স্থানে থাকলেও তাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত দক্ষতা ভারতের জন্য হুমকি হতে পারে। ২০২১ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল, তবে ২০১৮ সালে মালদ্বীপ তাদের ২-১ গোলে পরাজিত করেছিল। এই ইতিহাস ম্যাচটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে।
মার্কুয়েজ তাঁর দলের আক্রমণে গতি এবং বৈচিত্র্য আনতে চান। সুনীল ছেত্রীর প্রত্যাবর্তন এবং তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা ভারতের জন্য ইতিবাচক। তবে, মালদ্বীপের রক্ষণাত্মক কৌশল এবং কাউন্টার-অ্যাটাক ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। মাহুদ্দী, ফাসির এবং নাইজের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারতীয় রক্ষণ এবং মিডফিল্ডকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
এই ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। একজন সমর্থক বলেন, “ফাসির এবং নাইজের মতো খেলোয়াড়দের দিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের ডিফেন্সকে শক্ত থাকতে হবে।” আরেকজন বলেন, “মাহুদ্দী মিডফিল্ডে সমস্যা তৈরি করতে পারে। আশা করি আমাদের তরুণরা তাঁকে থামাতে পারবে।” ভারতীয় সমর্থকরা আশা করছেন, এই ম্যাচে জয় দিয়ে দল ২০২৫ সাল শুরু করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মালদ্বীপের তিন খেলোয়াড়ই ভারতের জন্য আলাদা ধরনের হুমকি। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “মাহুদ্দীর অভিজ্ঞতা এবং নাইজের গতি ভারতের রক্ষণের পরীক্ষা নেবে। ফাসিরকে জায়গা দেওয়া যাবে না।” তারা পরামর্শ দিয়েছেন, ভারতের মিডফিল্ডে আয়ুষ ছেত্রীর মতো তরুণ এবং রক্ষণে সন্দেশ ঝিঙ্গানের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সমন্বয় এই তিনজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
১৯ মার্চের এই প্রীতি ম্যাচটি ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। মালদ্বীপের ইব্রাহিম মাহুদ্দী, আলি ফাসির এবং হাসান নাইজের মতো খেলোয়াড়রা ম্যাচের ফলাফল বদলে দিতে পারেন। ২০২৫ সালে এই সময়ে, যখন ভারতীয় ফুটবল একটি নতুন শুরুর দিকে এগোচ্ছে, মার্কুয়েজের দলকে এই তিন খেলোয়াড়ের প্রভাব কমাতে কৌশলগতভাবে খেলতে হবে। সমর্থকরা অপেক্ষায় আছেন, এই লড়াইয়ে ভারত কীভাবে জয় দিয়ে বছর শুরু করে।